মানুষের মলমূত্র পরিষ্কার করা ‘নিষিদ্ধ', অথচ...
২৬ ডিসেম্বর ২০১৭জন্মসূত্রে মানুষের জাত নির্দিষ্ট হয়, সেই জাতই আবার নির্দিষ্ট করে দেয় তার পেশা৷ এই অলিখিত আইনের শক্তি দৃশ্যত ভারতে আজও কম নয়, ‘রাষ্ট্রীয় গরিমা অভিযান'-এর আশিফ শেখ যাকে ‘‘জন্ম, জাত ও লিঙ্গের কারণে দাসপ্রথা'' বলে অভিহিত করেছেন৷
এইচআরডাব্লিউ-এর হয়ে ভিডিওটির জন্য যিনি গবেষণা করেছেন, সেই শিখা ভট্টাচার্য গোড়াতেই উল্লেখ করেছেন যে, হাতে করে মলমূত্র পরিষ্কারের কাজটা প্রধানত মহিলাদেরই করতে হয়; পুরুষেরা সাধারণত ম্যানহোল খুলে ড্রেনে নেমে ময়লা পরিষ্কার করার কাজ করে থাকেন৷ শুধু উল্লেখ নয়, ভিডিও-তে সেই কাজের ফুটেজও দেখানো হয়েছে, কাজেই অভিযোগের বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই – বহির্বিশ্বের মানুষদের তো নয়ই; আমাদের উপমহাদেশের মানুষরা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত, তাই তাদের প্রতিক্রিয়াটা হবে একটু অন্য৷
প্রসঙ্গত, এইচআরডাব্লিউ-এর ভিডিও-য় এক মুসলিম মহিলা জানিয়েছেন, ময়লা ফেলার পেশার জন্য তাঁকে মসজিদ থেকে শুরু করে জলের মটকায় কী ধরনের বৈষম্য সহ্য করতে হয়৷
‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং' যাঁদের পেশা, তেমন সব মহিলাই পেশার কারণে নানা অসুখ-বিসুখে ভোগার কথা বলেছেন, যার মধ্যে চর্মরোগ ও যক্ষ্মাই দৃশ্যত প্রধান৷
শিখা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং' দেশে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সরকারি কর্মকর্তারা স্যানিটেশানের কাজে ঠিক সেই জাতের মানুষদেরই নিয়োগ করে থাকেন, যাঁরা আগেও এ কাজ করেছেন৷ অতঃপর সেই মানুষদের দিয়ে ঠিক সেই কাজটাই করানো হয়, যা কিনা নিষিদ্ধ – অর্থাৎ ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং'৷
রাষ্ট্রীয় গরিমা অভিযান
২০০০ সালে শুরু হয় ময়লা পরিষ্কার করা মহিলাদের এক মুক্তি আন্দোলন, যার নাম রাখা হয় ‘রাষ্ট্রীয় গরিমা অভিযান'৷ তার ১৫ বছর পরে এই আন্দোলন সংশ্লিষ্ট মহিলাদের নিয়ে গোটা ভারতে দশ হাজার কিলোমিটার ঘুরে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি পদযাত্রা করে: সেই পদযাত্রায় ছিলেন ২৬ জন মহিলা, যাঁরা খোলা বাজারে তাঁদের ময়লা ফেলার চুবড়ি পোড়ানোর পর আর ও কাজে কোনোদিন হাত দেননি৷
জাতপ্রথার দেশে জন্মগত পেশা ছাড়ব বললেই ছাড়া অত সহজ হয় না৷ কাজেই এই সব মহিলাদের সমাজের তরফ থেকে মারধোরের ভয় দেখানো হয়েছে, একঘরে করার ভয় দেখানো হয়েছে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর গবেষক শিখা ভট্টাচার্য বলছেন, আইন তো আছেই, কিন্তু সে আইন প্রয়োগ করা দরকার৷ রাষ্ট্রীয় গরিমা অভিযানের আসিফ শেখ যোগ করেছেন, ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং' থামানোটা শুধু একক ব্যক্তি বা সরকারের কাজ হতে পারে না৷ কাজটা গোটা সমাজের৷
এসি/ডিজি