বসার ঘরের ছবি তোলেন তিনি
৩০ জুন ২০১৭বার্লিনে তাঁর ফ্ল্যাটে আলোকচিত্রশিল্পী দোমিনিক নাবোকভ৷ ফ্রান্সের মানুষ দোমিনিক মানুষজনের ড্রয়িং রুম বা লিভিং রুম, অর্থাৎ বসার ঘরের ছবি তোলেন – তবে আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষদের নয়, নাম করা চিত্রতারকা, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের বসার ঘরের ছবি৷ প্রখ্যাত ফরাসি চিত্রাভিনেতা জেরার দেপার্দিউ-এর বাড়িতেও তিনি ছবি তুলেছেন৷
দোমিনিক বলেন, ‘‘আমি বড়াই করতে চাই না, কিন্তু জেরার দিপার্দিউ-এর সঙ্গে আলাপ আমার বোনের মাধ্যমে৷ আমার বোন একজন চিত্রপরিচালক৷ দেপার্দিউ তাঁর বাড়ি নিয়ে আদৌ মাথা ঘামাতেন না৷ আমি যখন তাঁর বসার ঘরের ছবি তুলছি, তখন তাঁর বাড়িতে ফরাসি ভাস্কর ‘রোদাঁ'-কে নিয়ে ছবির শুটিং চলেছে৷ গোটা ঘরটা একটা স্টুডিও ফ্লোরের মতো, চতুর্দিকে ঐ ফিল্মের জন্য তৈরি করা নানা মূর্তি৷’’
নাবোকভ বহু নাম করা মানুষের বাড়িতে ছবি তুলেছেন৷ ওনার ছবি থেকে আন্তর্জাতিক হাই সোসাইটির হু-ইজ-হু-কে জানা যায়৷ তিনি প্যারিসে মিতেরঁ পরিবারের বাড়িতে ছবি তুলেছেন; ফরাসি অভিনেত্রী জান মোরো, কিংবা নিউ ইয়র্কের ভ্যান্ডারবিল্ট শিল্পপতি পরিবারের বাসভবনে ছবি তুলেছেন৷
নিউ ইয়র্ক আর প্যারিসের পরে বার্লিন
তাঁর প্রথম বই ‘নিউ ইয়র্ক লিভিং রুমস’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে; তার চার বছর বাদে প্রকাশিত হয় ‘প্যারিস লিভিং রুমস'৷ ২০১৪ সাল যাবৎ তিনি বার্লিনের বিভিন্ন বসার ঘর নিয়ে একটি বই-এর কাজে ব্যস্ত৷ আজ তিনি এক বুদ্ধিজীবীর বাড়িতে ছবি তুলছেন, যিনি সারা জীবন ধরে শিল্পকলা আর অ্যান্টিক সংগ্রহ করে আসছেন৷
দোমিনিকের কোনো ছবিতেই তিনি বাড়ির বাসিন্দাদের দেখান না৷ তাঁর মতে, ‘‘কারো বসার ঘরের ছবি তোলার মানে তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারা৷ যেন তার একটা প্রতিকৃতি তোলা৷ কাজেই আমি বহু বছর আগেই ঠিক করেছি যে, আমি সবসময়ে সেলিব্রিটিদের বাদ দিয়ে বাড়ির ছবি তুলব – নয়ত ছবিটাই মাটি হবে৷ একটা ঘর তার বাসিন্দা সম্বন্ধে ঠিক ততটাই বলে, যতটা তার জামাকাপড় থেকে জানতে পারা যায়৷’’
দোমিনিক নাবোকভের সারা দুনিয়ায় অবাধ চলাচল৷ যুক্তরাষ্ট্র আর প্যারিসের মধ্যে তাঁর যাতায়াত; বহু দশক ধরে তাঁর কাজ ‘নিউ ইয়র্কার’, ‘ভোগ’, ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ অথবা ‘ল্য মঁদ’-এর মতো পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে৷
ব্যক্তিগত
ফ্যাশন ডিজাইনার ইভ স্যাঁ লোরঁ পরলোকগমন করেন ২০০৮ সালে৷ তার আগে তাঁর লিভিং রুমেরও ছবি তুলেছেন দোমিনিক নাবোকভ৷ স্মৃতিচারণ করলেন: ‘‘আমি ইভ স্যাঁ লোরঁ-র বসার ঘরে কী দেখেছি? বহু জিনিস৷ প্রথমে ধাঁধাঁ লেগে গিয়েছিল৷ যেন কায়রোর কোনো মিউজিয়াম! যেন আমি কোনো ফারাও-র কবরে প্রবেশ করেছি৷ ঐ সুবিশাল ঘরটায় নিজেকে খুব একলা মনে হয়েছিল৷ যদিও আমি জানতাম যে, বাড়ির বাটলার কোথাও দাঁড়িয়ে আমার ওপর নজর রাখছে – অবশ্য আমি তাকে দেখতে পাইনি৷ দু'ঘণ্টা ধরে ওখানে থাকার পর আমি আবার আলোয় বেরোই....জানি না কেন, আমার ঐ ঘরটাতে বেশ ভয়-ভয় করছিল৷ আমার সেটা বলা উচিত নয়, কিন্তু আমি যেন মৃত্যুর আভাস পাচ্ছিলাম৷ অন্তত আমার সেরকম অনুভূতি হচ্ছিল৷’’
আর এখন তিনি বার্লিনে এই বসবার ঘরটিতে বসে আছেন, যেখানে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর একটি লোকাল ট্রেন জানলার পাশ দিয়ে ঘটাং-ঘটাং শব্দ করে চলে যায়৷
সাশা হেন/এসি