1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুটবল ও বিশ্বশান্তি

১ জুন ২০১৪

আর এক পা এগোলেই শোনা যাবে, ফুটবলকে একটা ধর্মের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে৷ বিশ্বকাপ হলো তার ‘হোলি গ্রেইল’; মেসি অথবা রোনাল্ডো তার যাজক৷ ওদিকে সমাজবিজ্ঞানীরা দেখছেন, ফুটবল মানুষকে খুশি রাখে, শান্তিতে রাখে৷

https://p.dw.com/p/1C9p0
বিশ্বকাপ হলো তার ‘হোলি গ্রেইল’; মেসি অথবা রোনাল্ডো তার যাজকছবি: dapd

ফুটবল সমাজের সন্তুষ্টি বিধান করে, শান্তি বর্ধন করে৷ মানুষ তার প্রিয় দল – ক্লাব কিংবা জাতীয় দলের সঙ্গে একাত্ম বোধ করে৷ সে যেন এক ধর্মীয় অনুভূতি৷ পেলে যাকে বলেছিলেন ‘‘বিউটিফুল গেম'', সেই সুন্দর খেলাটি আদিম আগ্রাসনকে ‘‘চ্যানেলাইজ'' করার, এক নদীপথ থেকে অন্য নদীপথে বইয়ে দেওয়ার পন্থাও বটে৷

খুবই ‘‘ট্রাইবাল'', মানে উপজাতীয় ব্যাপার-স্যাপার৷ ভেবে দেখুন: দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল ক্লাবের সমর্থকরা কি অনেক সময় দু'টি উপজাতির মতো ব্যবহার করেন না? সাধারণত হাতে তীর-ধনুক, বল্লম ইত্যাদি থাকে না, এই যা রক্ষা! ফুটবল স্টেডিয়ামের ভিতরে ও বাইরে সহিংস আগ্রাসনের অগুন্তি নিদর্শন পাওয়া যাবে৷

Fußball Deutschland vs Polen EM 2008 Fans mit Playbutton für Livestream!
‘সত্যিকারের ফ্যানদের জিগ্যেস করে দেখলে বোঝা যায়, তাঁরা মাঠে যাওয়াটাকে ঠিক কতটা ‘সিরিয়াসলি' নেন, তার জন্যে কতদিন ধরে প্রস্তুতি চলে’ছবি: OLIVER LANG/AFP/Getty Images

কিন্তু বিশ্বকাপ হলো আগ্রাসন ছাড়াই, যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়াই, নিজের দেশকে সমর্থন করার, জয়ী হিসেবে উদযাপন করার একটা সুন্দর সুযোগ৷ বিশ্বকাপ যেন এক হিসেবে যুদ্ধের বিকল্প – এএফপি সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদককে বলেছেন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী দাভিদ রঁক৷ ‘‘এটা হলো সংঘাত সমাধানের একটা শান্তিপূর্ণ উপায়'', বলেছেন তিনি৷

ধর্ম মানেই আচার-অনুষ্ঠান৷ ফুটবল ফ্যানদেরও নানা আচার-অনুষ্ঠান আছে: প্রিয় ফুটবল প্লেয়ারদের জার্সি গায়ে চড়ানো; ক্লাবের পতাকা অথবা জার্সির রঙে ছাপা ক্লাবের মাফলার গলায় জড়ানো; সেই সঙ্গে টি-শার্ট,‘বোয়া', মাথায় রঙিন পরচুলা, মুখে রঙ মাখা – ৯০ মিনিট ধরে নিজের দেশের টিমের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করা, স্লোগান দিয়ে কিংবা গান গেয়ে৷

সত্যিকারের ফ্যানদের জিগ্যেস করে দেখলে বোঝা যায়, তাঁরা মাঠে যাওয়াটাকে ঠিক কতটা ‘সিরিয়াসলি' নেন, তার জন্যে কতদিন ধরে প্রস্তুতি চলে৷ এ সব শুধু দেশপ্রেমের অভিব্যক্তি নয়, এর পিছনে রয়েছে ব্যক্তির চেয়ে অনেক বড় কিছু একটার অঙ্গ হওয়ার, অংশ হওয়ার অনুভূতি এবং সুখবোধ – বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷

কোনো দলের সঙ্গে এই একাত্মতার অনুভূতি মানুষকে বিচ্ছিন্নতা ও বিষাদের হাত থেকে বাঁচায়, নিজের সত্তাকে সংজ্ঞা দিতে সাহায্য করে – বলেছেন ব্রিটেনের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া সমাজবিজ্ঞানী এরিক ডানিং৷ ফুটবল মানুষকে দেয় এক নৈর্ব্যক্তিক, পরিবর্তনশীল জগতে অবিচ্ছিন্নতা ও লক্ষ্যের অনুভূতি৷

ফুটবল কি একটা নতুন ধর্ম?

ফুটবল সম্পর্কে প্রায় একটা ধর্মীয় অনুভূতি জন্মায় অনেক পাঁড় সমর্থকের মনে৷ তাঁদের আচার-আচরণেও সেটা ফুটে ওঠে৷ অনেকে তাঁদের শোয়ার বা বসার ঘরটাকে পোস্টার আর ফ্যান আর্টিকেল দিয়ে সাজিয়ে প্রায় একটা ‘পুজোর ঘরে' পরিণত করেন৷ এই ‘ধর্মের' ‘সন্ত'-রা হলেন দলের নামি-দামি ফুটবল খেলোয়াড়, যাঁদের দেখতে ফ্যানরা নানা কষ্ট সহ্য করে সপ্তাহান্তের পর সপ্তাহান্ত স্টেডিয়ামে যান৷

আমাদের ক্রমেই আরো বেশি ধর্মনিরপেক্ষ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজে মানুষের যে আত্মিক প্রয়োজনগুলি মেটে না, ঠিক সেগুলোই যেন পূরণ করে ফুটবল৷ জয়ে কিংবা পরাজয়ে, একটা ফুটবল ম্যাচ মানুষজনকে একত্র করে, পরস্পরের কাছাকাছি এনে দেয়৷ ফ্যান ভায়োলেন্স কিংবা হুলিগ্যানিজমের সাথে তার সম্পর্ক খুবই কম৷

ägypten fussball krawall
‘ফুটবলে ফ্যানদের গুন্ডামি ও উচ্ছৃঙ্খলতা আসে সামাজিক অসাম্য থেকে, ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থেকে নয়’ছবি: reuters

ফুটবলে ফ্যানদের গুন্ডামি ও উচ্ছৃঙ্খলতা আসে সামাজিক অসাম্য থেকে, ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থেকে নয়, বলেছেন দাভিদ রঁক৷ ফুটবলে মানবসভ্যতার প্রগতি প্রতিফলিত হয়েছে: শারীরিক সহিংসতা বর্জন করা সত্ত্বেও মানুষের এই ‘বডি কনট্যাক্ট' গেমগুলি খেলার তাগিদটা রয়ে গেছে, তবে সংযতভাবে, নিয়ন্ত্রিতভাবে – বলেছেন এরিক ডানিং৷

অপরদিকে পেলে, মেসি, রোনাল্ডোর মতো ‘হিরো'-রা হলেন ফুটবলের কিংবদন্তি৷ তাঁরা কিভাবে শুধু ফুটবল খেলে দারিদ্র্য থেকে সম্পদ ও খ্যাতির পর্যায়ে উঠে এসেছেন, সেটাই হলো তাঁদের মূল্য এবং মর্যাদার উৎস৷

এসি/ডিজি (এএফপি, এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য