1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাছি মারা কেরানি ও জনতার দায়

১ আগস্ট ২০১৭

সম্প্রতি নগর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, মশার বংশ বিস্তারের জন্য সাধারণ মানুষই দায়ী৷ তাই তাঁদের পক্ষে এটা রোধ করা সম্ভব নয়৷ কিন্তু ঘরের বাইরের কাজটি কি তাঁরা ঠিকঠাক করছেন? মনে পড়ে যাচ্ছে মাছি মারা সেই কেরানির কথা...৷

https://p.dw.com/p/2hLtB
Brutplätze von Mücken Moskitos
ছবি: DW/M.M.Rahman

অফিসের কর্মকর্তা তাঁর অধীনস্ত এক কেরানিকে একটি কাগজ দিয়ে বলেছিলেন, হুবহু কপি করে আনতে৷ ওই কাগজের ওপর লেগেছিল মরা একটি মাছি৷ হুবুহু লেখাটি কপি করে সেই কেরানি একটি মাছি মেরে সেই কপির ওপর লাগিয়ে দেন৷ এই গল্পের সঙ্গে বাস্তবের অনেক গল্পের মিল খুঁজে হয়ত পাওয়া যাবে৷ কিন্তু সম্প্রতি প্রকোপ বেড়ে যাওয়া রোগ চিকনগুনিয়ার সঙ্গে এই গল্পের খুব একটা মিল নেই৷ কারণ মশক নিধনের দায়িত্বে থাকা সিটি কর্পোরেশনগুলোর একটির বড় কর্তা বলেছেন যে, যতগুলো মশা মারা দরকার তার চেয়ে বেশি তারা মারছেন৷ যদিও আমাদের সঠিক জানা নেই যে কতগুলো মশা মারার কথা ছিল৷ তারপরও যেহেতু তিনি বলছেন, তাই এই গল্প এখানে ব্যর্থ৷ ব্যর্থতার গল্প আসলে জনতার৷ যাঁরা রোগে ভুগছেন৷ এই রোগের রিলে ম্যারাথন যেন থামছেই না৷ ব্যাটন হাতবদল হয়েই চলেছে৷ চলতে থাকুক এই গল্প৷ আমরা বরং অন্য কোনো গল্পে মনোযোগ দিই৷

আদিব ক্লাস সিক্সে পড়ে৷ থাকে সরকারি চাকুরে বাবার অস্থায়ী নিবাস ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে৷ সে প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে বাসার পাশের মাঠটিতে ক্রিকেট খেলে বন্ধুদের সাথে৷ অন্য আর দশটা সাধারণ সরকারি কলোনির মতোই এই কলোনিটিরও অবস্থা৷ কালো কালো পানিতে টইটম্বুর ড্রেন আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঝোপঝাড়ের মাঝে মাথা উঁচু করে থাকা দেয়ালের পলেস্তারা খুলে খুলে পড়া কতগুলো দালান৷ যেখানে সেখানে জমে থাকা আবর্জনা৷ মশক দেবতা আড়ালে মুচকি নন, হো হো করেই হাসেন৷ খুশিতে নাচেন ধেই ধেই করে৷ এমন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশই তো তার চাই৷ ছানাপোনাগুলো বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বেড়ে উঠবে৷ আদিব সেদিন বাড়ি ফিরল৷ রাত নামল কলোনির আকাশে, আর জ্বর উঠল তার কপালে৷ সেই জ্বর যেন আর নামেই না৷ চঞ্চল-উচ্ছ্বল শিশুটির চোখ দু'টো ক্রিকেট বলের মতোই হয়ে গেল৷ শরীরের গিটগুলোতে অসহ্য যন্ত্রণা৷ কয়েক সপ্তাহ নিদারুণ কষ্টে ভুগে অবশেষে মুক্তি পেল আদিব৷ কিছুই বদলায়নি৷ আদিবও আগের মতো মাঠে যায়৷ আর মাঠের মানচিত্রও আগের মতোই৷

নদীনালা খালবিল বিধৌত এই বাংলার মাটি, মশককূলের ঘাঁটি হবেই৷ তা কেউ ঠেকাতে পারবে না৷ এখানকার আবহাওয়া জলবায়ু এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির বংশবিস্তারের ব্যাপক সহায়ক৷ এমনকি পাহাড়ি প্রকৃতিও এই প্রাণীটির বাউন্ডুলেপনাকে বিশেষ আসকারা দেয়৷ আর তাই চিকনগুনিয়ার মতো রোগ শহরে পৌঁছানোর আগেই পৌঁছে যায় গ্রামাঞ্চলে৷ চিকনগুনিয়ার প্রকোপ এবারই প্রথম নয়৷ ২০১১ সালে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকনগুনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দেয়৷ ২০১১ সালের অক্টোবরে দোহারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে ঘরে ঘরে৷ ‘‘বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে চিকনগুনিয়ার প্রকোপ'' নামে প্রকাশিত সেই গবেষণার জন্য নভেম্বরের ২ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত গবেষকরা উপজেলার চর কুশাই গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে এই রোগের বিষয়ে খোঁজ করেন৷ ৩৮৪০ জনের বিষয়ে খোঁজ করে তাঁরা দেখেন, ১১০৫ জনই (২৯ শতাংশ) চিকনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত৷ ২৯ ভাগ ঘরে অন্তত একজনকে কাবু করেছে এই রোগ৷ ১৫ ভাগ ঘরে তিনজন আক্রান্ত৷ প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ৩৮ শতাংশ এবং পুরুষদের ২৫ শতাংশ ভুগেছে এই ধরনের রোগে৷

২০১২ সালেও চিকনগুনিয়া ছড়িয়েছিল৷ ২০১৬ সালে আইসিডিডিআরবির এক গবেষণা বলছে, ২০১২ সালের ২৯ মে থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা থেকে ৬০ মাইল দূরে পালপাড়া গ্রামে অন্তত ১৮ ভাগ মানুষ জ্বর ও গিঁটের ব্যাথায় ভুগেছেন এবং শরীরে ফুসকুড়ি উঠেছে৷ গবেষণা করে তাঁরা নিশ্চিত হন যে চিকনগুনিয়া ভোগা মানুষগুলোর মধ্যে বাড়ির মহিলারাই বেশি ঝুঁকিতে থাকেন৷ কারণ, ঘরের ভেতরেই এই মশা বেশি আক্রান্ত করে৷

এই গবেষণা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, চিকনগুনিয়ার প্রকোপ এবারই প্রথম নয়৷ কিন্তু যেহেতু রাজধানীর মানুষের মাঝে এবার ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে, তাই এটি গণমাধ্যমকেও বেশি আকর্ষিত করেছে৷ প্রশ্নও উঠেছে, মশার বংশবিস্তার এবং মশাবাহীত রোগ প্রতিরোধে কতটা পারদর্শিতা দেখাতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ৷ বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষও যে বেশ বিরক্ত তা স্পষ্ট বোঝা যায়৷ মানুষের ঘরে মশার বিস্তার ঘটালে তারা তা কীভাবে প্রতিরোধ করবেন – এমন যুক্তি তুলে ধরেছেন তারা৷ সে না হয় ঠিকই আছে৷ জনতার ঘাড়ে দোষ চাপালে বিষয়টা এড়ানো সহজ হয়৷

Zobaer Ahmed
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

আরেকটি গল্প মনে পড়েছে৷ এক ঘুসখোর কর্মকর্তা স্কুলে আরেকজনের পেন্সিল কেড়ে নেয়ায় তার ছেলেটিকে ফোনে বেশ উপদেশ দিচ্ছেন৷ বাবা কখনো অন্যের জিনিস ধরবে না৷ জোর করে কিছু নেবে না৷ তখন এক কর্মচারী শুনে ফেলে কথাটি৷ পরে সে ক্যান্টিনে বসে আরেক কর্মীকে ঘটনাটি বলে বেশ হাসাহাসি করে৷ যদি এজিবি কলোনির রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকত, ড্রেনের পানি চলাচল স্বাভাবিক থাকত, ঝোপঝাড় সব পরিষ্কার করা থাকত, তাহলে আদিবের অসুখের জন্য ঘরের ভেতরে কোন বোতলে ময়লা পানি আছে, তার তদন্ত করা যেত৷ কিন্তু যেহেতু সেটি করা হয়নি, তাহলে দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন কি?

আপনার কি লেখককে কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য