মহাশূন্যে প্রথম মানব ইউরি গাগারিন
রুশ নভশ্চর ইউরি গাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশযানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন ১৯৬১ সালে৷ সেভাবেই পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যে মহাকাশযাত্রা প্রতিযোগিতার সূচনা৷ ১৯৬৮ সালের ২৭শে মার্চ একটি বিমান দুর্ঘটনায় গাগারিনের জীবনাবসান ঘটে৷
মহাকাশে উড়াল
১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল একটি ভস্টক-১ রকেটে চড়ে ইউরি গাগারিন কক্ষপথে পৌঁছান ও পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ মহাশূন্যে তিনিই ছিলেন প্রথম মানব৷ পেশায় ফাউন্ড্রি ইঞ্জিনিয়ার গাগারিন যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন৷ মহাকাশযাত্রার জন্য তাঁকে নির্বাচন করা হয়৷ মহাকাশযাত্রার সাত বছর পরে, ১৯৬৮ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে একটি মহড়া চলার সময় তাঁর মিগ-১৫ জঙ্গিজেট ভূপাতিত হওয়ায় প্রাণ হারান গাগারিন৷
বেলকা আর স্ট্রেলকা
গাগারিনের আগে যে আর কোনো জীব মহাকাশযাত্রা করেনি, এমন নয়৷ বেলকা আর স্ট্রেলকা নামের দু’টি কুকুর ও সেই সঙ্গে একটি খরগোশ, ৪০টি নেংটি ইঁদুর ও দু’টি ধেড়ে ইঁদুর মহাকাশে ঘুরে আসে ১৯৬০ সালের ১৯শে আগস্ট তারিখে৷ জীবজগতের এই প্রতিনিধিরা একটি স্পুটনিক-৫ স্যাটেলাইটে চেপে মহাকাশযাত্রা করে ও ল্যান্ডিং ক্যাপসুলের মাধ্যমে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে৷
মহাকাশের প্রথম সেলিব্রিটি
ভূপৃষ্ঠে ফেরার পর স্বভাবতই গাগারিন একজন সেলিব্রিটি হয়ে ওঠেন ও সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির দূত হিসেবে সারা বিশ্বে যাত্রা করেন৷ পেশাগতভাবে তাঁর ভবিষ্যৎ নভশ্চরদের প্রশিক্ষণ দেবার কথা ছিল, কিন্তু গাগারিন যুদ্ধবিমানের বৈমানিক হিসেবে তাঁর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করতে চেয়েছিলেন৷ এভাবেই একটি ট্রেনিং ফ্লাইটে সম্ভবত কোনো ঝুঁকিপূর্ণ মহড়া নেবার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে গাগারিন প্রাণ হারান৷
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
শীতল যুদ্ধ চলা সত্ত্বেও গাগারিন পূর্ব ও পশ্চিমে সমান খ্যাতি ও স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ অপরদিকে তাঁর সাফল্য মার্কিনিদের মহাকাশ কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার প্রেরণা জুগিয়েছে৷ হান্ট্সভিল টাইমস পত্রিকার এই সংস্করণে জার্মান-মার্কিন রকেট বিজ্ঞানী ভ্যার্নহের ফন ব্রাউন যুক্তরাষ্ট্রকে সোভিয়েত রকেট কর্মসূচির তুলনায় পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছেন৷
গাগারিনের এক বছর পর জন গ্লেন
১৯৬২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি একটি মার্কারি-অ্যাটলাস-৬ রকেট প্রথম মার্কিন নভশ্চর জন গ্লেনকে মহাকাশে নিয়ে যায়৷ গ্লেন তিনবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ গ্লেন গাগারিনের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ বিমানচালক ছিলেন: ইতিপূর্বেই তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে ফাইটার পাইলট ও টেস্ট পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ও তাঁর আমলের সুপারসোনিক ফ্লাইটের রেকর্ডটি ভঙ্গ করেছিলেন৷
মহাকাশে প্রথম মহিলা
গাগারিনের দু’বছর পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম মহিলা নভশ্চরকে মহাকাশে প্রেরণ করে৷ ভ্যালেন্তিনা তেরেশ্কোভা একটি ভস্টক-৬ রকেটে মোট তিন দিন কাটান ও ৪৮ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন৷ ছবিতে তাঁকে তাঁর দুই নভশ্চর সতীর্থ গাগারিন ও বাইকোভস্কির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷ তেরেশ্কোভা আজ অবধি একজন সেলিব্রিটি৷ সোচিতে ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অলিম্পিক পতাকা বহণ করেন ভ্যালেন্তিনা তেরেশ্কোভা৷
চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখলেন আর্মস্ট্রং ও অ্যাল্ড্রিন
মহাকাশযাত্রা প্রতিযোগিতায় অবশেষে মার্কিনদিরই জয় ঘটে, যখন ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই তারিখে নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অ্যাল্ড্রিন চন্দ্রপৃষ্ঠে পদার্পণ করেন৷ আজ অবধি মার্কিনিরা বা নাসা ছাড়া আর কোনো দেশ বা সংস্থা চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারেনি৷ তার পরের চার দশকে চাঁদ যেন বড় কাছের গন্তব্য হয়ে পড়েছে, নজর গেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস ও দূর-দূরান্তের গ্রহ-তারকা ও নক্ষত্রপুঞ্জ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার দিকে৷
কিংবদন্তির গাগারিন
পূর্ব ইউরোপের মানুষদের কাছে গাগারিনের স্মৃতি জাগরূক থাকে, কেননা সোভিয়েত রাশিয়া সাবেক পূর্ব জার্মানি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি লৌহ যবনিকার অভ্যন্তরের সমাজতন্ত্রী বন্ধুদেশগুলির নভশ্চরদের মহাকাশযাত্রার সুযোগ করে দেয়৷
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
পূর্ব-পশ্চিম মুখোমুখি দ্বন্দ্বের অবসানের পর মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়৷ আশির দশকের শেষে সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিমি নভশ্চরদের ‘মির’ মহাকাশ কেন্দ্রটি পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানায়৷ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র বা আইএসএস প্রকল্পে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপের ইসএ, ক্যানাডা ও জাপান সংশ্লিষ্ট৷
চন্দ্রপৃষ্ঠে এক উজ্জ্বল, যৌথ ভবিষ্যৎ?
আগামীতে মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়বে বৈ কমবে না – আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে সেই সহযোগিতা? আমরা কি আবার চাঁদে ফিরব? আইএসএস-এর পরিবর্তে কি চাঁদের গায়েই গজিয়ে উঠবে এ ধরনের একটি ‘মুন ভিলেজ’?