1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহারাষ্ট্রে মহা-‌নাটক

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৮ নভেম্বর ২০১৯

রাজ্য দখলের রাজনীতি কতটা নাটকীয় হতে পারে, তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ মহারাষ্ট্র৷ একদিকে তিনদিন আগের মুখ্যমন্ত্রী এখন শুধুই বিধায়ক৷ উল্টোদিকে পরাজিত ম্যাচ জিতিয়ে এনে ‘‌ম্যান অফ মহারাষ্ট্র’ হয়েছেন ৭৯ বছর বয়সি শারদ পাওয়ার৷

https://p.dw.com/p/3Tsk0
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন উদ্ধব ঠাকরেছবি: Getty Images/AFP

ব্যর্থ হলো ভারতীয় জনতা পার্টি৷ সরকার গড়ছে ‘‌মহা বিকাশ আঘাড়ি’৷ বড়সড় কোনো অঘটন না ঘটলে বহু নাটক ও টানাপোড়েনের পর ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী মহারাষ্ট্রের বুকে জন্ম নিতে চলেছে এনসিপি-‌শিবসেনা-‌কংগ্রেস জোট, যা এক অভিনব রাজনৈতিক সমীকরণ৷ একই ঘরে বাস করবে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলগুলি!‌ স্বভাবতই বেজায় উৎফুল্ল বিজেপি‌বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলি৷ তাদের মতে, মহারাষ্ট্র থেকেই বিজেপি’র পতনের সূচনা হলো৷

গত কয়েক বছর ধরে এ দেশের সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও একটা ধারণা ক্রমশ বদ্ধমূল হয়েছে, তা হলো, ভারতীয় জনতা পার্টি, বিশেষত নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সেকেন্ড-‌ইন-‌কমান্ড অমিত শাহর কূটনৈতিক পদক্ষেপের জুড়ি মেলা ভার৷ তাঁরা যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলেছে৷ ধারণাটা এমন যে, যে রাজ্যেই এই জুড়ির নজর পড়বে, নিমেশে সেখানে পদ্মফুল ফুটবে৷এভাবেই গেরুয়া রঙে রেঙে উঠেছে চারিদিক৷ এই ছন্দে বেশ এগোচ্ছিল বিজেপি৷ বছর দুয়েক আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ভারতের ৭১ শতাংশ জুড়ে ছিল শুধুই বিজেপি৷ মহারাষ্ট্রের পর বর্তমানে শতকরা হারে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে৷

এই নিয়ে আরো একটি বড় রাজ্য হাতছাড়া হলো বিজেপির৷ প্রথমে রাজস্থান, তারপর মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়৷ এবার মহারাষ্ট্র থেকে বিদায় নিলো বিজেপি৷ এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল রয়েছে ভারতের একটি ম্যাপ, যাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বিজেপি’র দখলে ছিল ১৯টি রাজ্যে আর চলতি নভেম্বরে সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪-তে৷

সাধারণ মানুষ ও কৃষক বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে: বিশ্বনাথ চক্রবর্তী

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‌‘‌নরেন্দ্র মোদী সরকারের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স যত খারাপ হবে, রাজনৈতিকভাবেও ততই পিছিয়ে পড়বে বিজেপি৷ সাধারণ মানুষ ও কৃষক বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে৷ ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব, পেঁয়াজের দাম প্রতি কিলোগ্রাম ১০০ টাকা ইত্যাদি বিষয়গুলি শাসক দলকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে৷’’

‌এবার মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও শিবসেনা জোট গড়ে ভোট লড়েছে৷ ফল প্রকাশের পর সরকার গড়ার মতো আসন পেয়েও যায় জোট৷ কিন্তু শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে দাবি করেন, মোট ৫ বছরের মেয়াদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদটি তাঁদের আড়াই বছরের জন্য দিতে হবে৷ বিজেপি রাজি না হওয়ায় কিছুদিন দোদুল্যমান অবস্থায় থাকার পর মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়৷ এরই মধ্যে বিকল্প সরকার গড়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়৷ ক্রমশ কাছাকাছি আসতে থাকে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস৷ এই তিন দলের জোট যখন প্রায় পাকা তখনই সামনে আসে বিজেপি‌র সিক্রেট গেম৷ বস্তুত মাঝ রাতে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করে বিজেপি৷

নাটকীয়ভাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে সাত সকালে মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত পাওয়ার৷ এই অজিত পাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই বিরোধী শিবিরে সরকার গড়ার পরিকল্পনায় অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ অজিত এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের ভাইপো৷ রে রে রব ওঠে৷ প্রশ্ন ওঠে সাংবিধানিক পদ রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল এবং প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে৷ তাঁদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷

জাতীয় রাজনীতিতে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে: মানস ভূঞ্যা

রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভূঞ্যা মনে করেন, মহারাষ্ট্রের চূড়ান্ত ও নজিরবিহীন রাজনৈতিক পালাবদল নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে৷ সেইসঙ্গে ভারতের বিজেপি-‌বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে একত্রিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌এমন একটা ধরণা গড়ে তোলা হচ্ছিল যে, গণতান্ত্রিক কাঠামোয় একমাত্র বিজেপি‌ই রয়েছে, আর কেউ কোথাও নেই৷ মহারাষ্ট্রে শারদ পাওয়ার চতুরতার সঙ্গে যে ভূমিকা নিয়েছেন, তা বিজেপি’কে সজোরে চপেটাঘাত করেছে৷ জাতীয় রাজনীতিতে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে৷’’

শারদ পাওয়ার ময়দানে নামার পর জানিয়ে দেন, অজিত পাওয়ারের ব্যক্তিগতভাবে বিজেপি‌কে সমর্থন করেছেন৷ এনসিপি বিজেপির সঙ্গে নেই৷ দলের বিধায়কদের নিজের আয়ত্তে নিয়ে চলে আসেন৷ নাটকের যবনিকা পতন হয় সুপ্রিম কোর্টে৷ আদালত জানিয়ে দেয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে বিজেপি‌কে৷ লাইভ টেলিকাস্ট হবে৷ গোপন ব্যালট চলবে না৷ এরপর বেগতিক বুঝে প্রথমে অজিত পাওয়ার৷ পরে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ কারণ, তাঁদের হাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না৷ পরে মহারাষ্ট্রের ২৮৮ বিধায়ককে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন প্রোটেম স্পিকার কালীদাস কোলম্বকর৷ মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা মোটামুটি চূড়ান্ত৷ পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে৷