1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহামারির পরে এই নাটক হলে মানুষ বাঁচতো

১৭ মে ২০২১

যে মামলা পাঁচ বছরে এতটুকু এগোয়নি, তার তদন্ত আরো কিছু মাস পরেও করা যেত। মহামারির সময়ে এমন রাজনীতি বড্ড দৃষ্টিকটু।

https://p.dw.com/p/3tULg
ফিরহাদ হাকিম
ছবি: picture-alliance/ZumaPress

অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে। সে তিনি যতই প্রভাবশালী হোন না কেন! এ তো আপ্তবাক্য।! আমার মতো ১০ কোটি জনগণের পশ্চিমবঙ্গ মনেপ্রাণে চান, অন্যায়ের বিচার হোক। সারদা কেলেঙ্কারির বিচার চান মানুষ। হাজার হাজার গরিব মানুষ রক্ত জল করা টাকা ফেরত পেতে চান। মানুষ জানতে চান, নারদ-কাণ্ডে স্টিং অপারেশনে যে নেতা-মন্ত্রীদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, তাদের শেষপর্যন্ত কী হবে! কিন্তু মানুষ সম্ভবত গ্রেপ্তার, বিচার নিয়ে রাজনীতি চান না। বিশেষত, করোনার এই ঘোর দুর্দিনে।

২০১৫ সালে নারদ স্টিং অপারেশন সামনে এসেছিল। ম্যাথু স্যামুয়েল নামের এক সাংবাদিক শিল্পপতির ছদ্মবেশে নারদ নামের একটি ভূয়া সংস্থার কর্মকর্তার পরিচয় নিয়ে তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছিলেন টাকার বান্ডিল নিয়ে। নেতা-মন্ত্রীদের টাকা নেওয়ার ছবি গোপন ক্যামেরায় তুলে রেখেছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নারদ-কাণ্ডের সেই প্রকাশিত হয়। কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে স্ক্রিন টাঙিয়ে সেই দৃশ্য দেখানো হয়। উল্লেখ্য, সাংবাদিক হিসেবে বিজেপির সেই সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলাম। বিধানসভা নির্বাচন পর্বে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা তখন কলকাতা এলেই বলে যেতেন, নারদ-কাণ্ডের দ্রুত তদন্ত হবে। দোষীদের ধরা হবে। প্রভাবশালীরা কেউ ছাড় পাবেন না।

পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। মাঝে একটা লোকসভা নির্বাচন, আরও একটা বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। সে দিন বিজেপি স্ক্রিন টাঙিয়ে তৃণমূলের যে নেতাদের ছবি দেখিয়েছিল, এখন তাদের অনেকেই বিজেপিতে। সিবিআইয়ের তদন্ত বিশেষ এগোয়নি। মানুষ ক্রমশ বুঝে গিয়েছিলেন, ভোটের আগেই কেবল এসব কথা হয়, বাস্তবে তদন্ত রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে আটকে থাকে।

ভয়াবহ করোনার আবহে এ বছর পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয়েছে। ভোটের পরে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়েছে। লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। সাধারণ মানুষ হাসপাতালে বেড পাচ্ছেন না, বাড়িতে অক্সিজেন পাচ্ছেন না। লকডাউনে কাজ যেতে শুরু করেছে অনেকের। বলা বাহুল্য, এটা রাজনীতির সময় নয়। শাসক বিরোধী সকলে মিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে, এটুকু আশা করতেই পারেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটছে না। নির্বাচনে হেরেই চার বছরের পুরনো ফাইল খুলেছে সিবিআই। রাতারাতি কলকাতার সাবেক মেয়র, বর্তমানে পুরপ্রশাসনের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, আরেক মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, গুরুত্বপূর্ণ নেতা মদন মিত্রকে গ্রেপ্তার করা হলো। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হলেন কলকাতার সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিজেপিতে গেলেও ভোটের আগে থেকে বিজেপির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক নেই। টিকিটও পাননি।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলে।ছবি: privat

অথচ বেঁচে গেলেন মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা। তাদেরও ভিডিও-তে দেখা গিয়েছিল। তাদের কেন ডাকল না সিবিআই? বিজেপি বলে? আমি নই, প্রশ্ন তুলেছেন খোদ ম্যাথু স্যামুয়েল।

আমি চাই তদন্ত হোক। দেরিতে হলেও সত্য সামনে আসুক। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। যে তদন্ত পাঁচ বছর ঠান্ডা ঘরে থাকতে পারে। সে তদন্ত আরও কয়েকমাসও তো আটকে রাখা যায়। অতিমারীর এই ভয়াবহ সময়ে রাজ্যের দায়িত্বে আছেন যে মন্ত্রীরা তাদের সাধারণ মানুষের প্রয়োজন। বাঁচার জন্য প্রয়োজন। বাঁচতে না পারলে গালাগাল দেওয়ার জন্যও প্রয়োজন।

আশা করি না সিবিআই নিরপেক্ষ তদন্ত করবে। ঠিক যেমন বিশ্বাস করি না রাজ্যের সিাইডি নিরপেক্ষ তদন্ত করে বলে। রাজনৈতিক তদন্তে রাজনীতির চাপ থাকে। নারদ তদন্তে বিজেপি-তৃণমূল খেলা হবে, তা ধরেই নেওয়া যায়। কিন্তু সে খেলা দেখার সময় এটা নয়। ওসব নাট্যরঙ্গ স্বাভাবিক সময়ের জন্য তোলা থাকলেই ভালো হতো। মানুষের জানটুকু অন্তত বাঁচতো। রাজনীতির কুশিলবরা সেটুকুও ভাবলেন না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েছেন সিবিআই দফতরের সামনে। রাজনৈতিক ভাবে নিশ্চয় তার যথেষ্ট যুক্তি আছে। কিন্তু এটা রাজনীতি করার সময় নয়।

কেন্দ্র এবং রাজ্যের রাজনীতিকরা একটু ভাববেন প্লিজ। অন্তত ভাবা প্র্যাকটিস করবেন।