মমতার বাড়ির কাছে গুজরাটি দম্পতি খুন
ভবানীপুরে জোড়া খুন। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে গুজরাটি দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে। স্বামীকে ছুরি মেরে, স্ত্রীকে গুলি করে। পুলিশের সন্দেহ, খুনের কারণ সম্পত্তি।
শাহ দম্পতি
ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোডে লাল রঙের বাড়িতে থাকতেন গুজরাটি শাহ দম্পতি। স্বামী অশোক শাহ পেশায় ব্যবসায়ী। বড়বাজারে দোকান। স্ত্রী রশ্মিতা গৃহবধূ। দীর্ঘদিন ধরে তারা কলকাতায় ওই বাড়িতে ছিলেন। তাদের তিন মেয়ে বিয়ের পর অন্য রাজ্যে চলে গেছেন।
কীভাবে খুন
অশোক শাহকে ছুরি মারা হয়েছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতচিহ্ন ছিল। গলায় কাটা দাগও ছিল। আর রশ্মিতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। অশোকের মৃতদেহ ছিল বাইরের ঘরে। আর রশ্মিতার শোয়ার ঘরে। উপরের শোয়ার ঘরের ছবি, যেখানে রশ্মিতার দেহ পড়ে ছিল।
চেনা মানুষ?
পুলিশের সন্দেহ, হত্যাকারীরা শাহ দম্পতির চেনা। তাদের দরজা খুলে দিয়েছিলেন তারা। জোর করে আততায়ীরা ভিতরে ঢোকেনি বলে পুলিশের অনুমান। কারণ, পুলিশ সেরকম কোনো চিহ্ন পায়নি। তবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, একাধিক আততায়ী ছিল।
মমতা-অভিষেকের বাড়ির কাছে
যেখানে এই জোড়া খুন হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির খুবই কাছে। এই এলাকাটি কলকাতার অন্যতম হাই-সিকিউরিটি জোন। তা সত্ত্বেও কী করে ভরদুপুরে এরকমভাবে খুন করা হতে পারে দম্পতিকে, সেই প্রশ্ন উঠছে।
সিসিটিভি ক্যামেরা
বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল। পুলিশ কয়েকটি ক্যামেরা খুলে নিয়ে গেছে। সেই ক্যামেরার ফুটেজ দেখছে তারা। বুধবার অশোক-রশ্মিতার মেয়েকে থানায় ডাকা হয়েছিল। ওই ফুটেজে চেনা কোনো মানুষ আছে কি না, তা জানার জন্য। শাহ দম্পতির খুন হওয়ার পর দুইটি মোবাইল পাওয়া যাচ্ছিল না। বুধবার একটি মোবাইল পুলিশ ধর্মতলার কাছে রাস্তা থেকে উদ্ধার করেছে। অন্য মোবাইলের হদিশ তারা পায়নি।
কারণ সম্পত্তি?
এই জোড়া খুনের কারণ কি সম্পত্তি? পুলিশ খতিয়ে দেখছে। অশোক শাহর কাছে এক লাখ টাকার চেক ছিল। বাড়ি বিক্রির জন্য অগ্রিম নিয়েছিলেন তিনি। শোয়ার ঘরের আলমারি ভাঙা অবস্থায় ছিল। টাকা, ব্যবসা বা সম্পত্তিজনিত কারণে স্বামী-স্ত্রী খুন হলেন কি না, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে। এর পিছনে শেয়ার মার্কেটের যোগ আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
'ভালো মানুষ ছিলেন'
হরিশ মুখার্জি লেনেই কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন মিঠু দাস। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''ওরা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। যাতায়াতের পথে কখনো দেখা হত। মেয়েদেরও চিনতাম।'' মিঠুর মনে হয়, ''সম্পত্তির জন্যই খুন করা হয়েছে। ওই বাড়িটা তিনি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এক লাখ টাকা আগাম নিয়েছিলেন, একথা পাড়ার সকলেই জানতেন।''
'আড্ডা দিতে আসেননি'
ওই পাড়াতেই চায়ের দোকান আছে সুমন বেড়ার। ডয়চে ভেলেকে সুমন বলেছেন, ''কখনো আমার দোকানে চা খেতে আসেননি। কখনো বাইরে আড্ডা মারতেও দেখিনি। বাড়ির ভিতরেই বেশি থাকতেন। মেয়েদের আগে মাঝেমধ্যে দেখতাম।''