মন্ত্রিসভায় অদল-বদল স্বাভাবিক নিয়মেই
৪ জানুয়ারি ২০১৮বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা স্বাভাবিক নিয়মেই হয়েছে৷ এর মধ্যে দু--একটি দফতরে হয়ত কিছু সমস্যা ছিল৷ কিন্তু অন্যগুলোতে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না৷ আওয়ামী লীগও বলছে, সরকারকে গতিশীল করতেই এটা করা হয়েছে৷ সামনে নির্বাচন, সরকার ভালো কিছু করতে চায়, এ কারণে পরীক্ষিত ত্যাগী মানুষকে মন্ত্রীসভায় এনেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁরা ভালো কিছু করবেন এমন প্রত্যাশা ক্ষমতাসীন দলটির৷
সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মন্ত্রীসভায় রদবদল– এটা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া৷ এতে বাঁকা চোখে দেখার কিছু নেই৷ ক'দিন আগেও মোদীর মন্ত্রীসভায় অদল-বদল হয়েছে৷ ব্রিটেনেও আমরা রদবদল হতে দেখেছি৷ এটা সরকারের শেষ বছর বা প্রথম বছরেও হতে পারে৷ যাঁদের মন্ত্রীসভায় আনা হয়েছে, আবেগের বশে তাঁরা এসেছেন, এমন নয়৷ তাঁরা সবাই পরীক্ষিত মানুষ৷ তাঁদের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা আমাদেরও৷ তবে বিমান মন্ত্রণালয় নিয়ে কিছু কথা আছে৷ খোদ প্রধানমন্ত্রীর নিজের চড়া উড়োজাহাজে সমস্যা ধরা পড়েছে৷ পাইলট হিসেবে পাওয়া গেছে সরাসরি জঙ্গি সদস্যকে৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কিছু খারাপ ইমেজ গেছে৷ ফলে এই দফতরটিতে যে বদল হতে পারে, সে ধারণা অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছিল৷''
ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদটি অনেকদিন ধরেই শূন্য ছিল৷ খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই দফতরটি তাঁর হাতে রেখেছিলেন৷ এই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে দুই জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন৷ এর মধ্যে টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তাঁকে তথ্যপ্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে৷ তবে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে তাঁর জায়গায় রাখা হয়েছে৷ এসেছেন নতুন মন্ত্রী৷
নিজে যেভাবে কাজ করছিলেন, নতুন মন্ত্রী আসায় সেই কাজে কোনো বিঘ্ন ঘটবে কি-না জানতে চাইলে জনাব পলক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটি একটি বিশাল মন্ত্রণালয়৷ আমি এটাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি৷ সামনের এক বছরে এটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই৷ মন্ত্রী হিসেবে যিনি এসেছেন, তিনিও এই সেক্টরের মানুষ৷ তাঁর সঙ্গে আমার এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে৷ তিনি বলেছেন, দু'জনে মিলেই সামনে আমরা ভালো কিছু করতে চাই৷ আমাদের আলোচনা হয়েছে কাজের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না, মিলেমিশেই কাজ করবো৷''
নির্বাচনের বছরে এমন রদবদল কি আসলে নির্বাচনকে টার্গেট করে? সরকার কি নির্বাচন ঘিরে কোনো পরিকল্পনা করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মন্ত্রীসভায় রদবদলের এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর৷ তিনি যেটা ভালো মনে করেছেন, সেটা করেছেন৷ এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই৷ যাদের দিয়ে ভালো কাজ হবে বলে মনে করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন৷ এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া৷ আর নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন৷ সেখানে সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে৷ ফলে মন্ত্রীসভার এই রদবদলের সঙ্গে নির্বাচনকে মেলানো ঠিক হবে না৷''
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিমান মন্ত্রণালয়ের বদলটা আগে থেকেই অনুমিত ছিল৷ গত দুই বছরে বিমানে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিমানেই ত্রুটি ধরা পড়েছে৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিমানের অবস্থান খারাপ হয়েছে৷ ফলে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণে মন্ত্রীকে সরে যেতে হলো কিনা- সে প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে রাশেদ খান মেননকে৷ রাশেদ খান মেননের সময়ে বিমান মন্ত্রণালয় প্রথমবার বড় ধাক্কা খায় ২০১৬ সালের মার্চে৷ নিরাপত্তা ঘাটতির কারণ দেখিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমানের (পণ্যবাহী উড়োজাহাজ) সরাসরি ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে যুক্তরাজ্য৷
ত্র কারণে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী একটি উড়োজাহাজ৷ সে ঘটনা পুরো দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা, বিমানে ত্রুটি আর জঙ্গি ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে নানাভাবে নিরাপত্তা বাড়ানোর পরও ২০১৬ সালের নভেম্বরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক আনসার সদস্য ছুরিকাঘাতে নিহত হন৷ গতবছর সেপ্টেম্বরে হজ মৌসুমের মধ্যে বিমানবন্দরের মূল ভবনে আগুন লাগলে তিন ঘণ্টা বহির্গমন কার্যক্রম বন্ধ থাকে৷ পরে তদন্তে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দরটিতে আগুন নেভানোর অত্যাধুনিক কোনো যন্ত্রপাতিই নেই৷