মডেল থেকে ফ্যাশন ফটোগ্রাফার: এলেন ভন আনওয়ার্থ
গত ৩০ বছর ধরে ফ্যাশন ফটোগ্রাফির জগতে বিশিষ্টতম আলোকচিত্রীদের মধ্যে গণ্য, জাতিতে জার্মান এই শিল্পী নারীর যৌন আবেদনকে প্রত্যাখ্যান না করে, তাকে শিল্পের উপাদান করে তুলেছেন৷ জার্মানে তাঁর নাম এলেন ফন উনভের্ট৷
দুধের বোতল হাতে কেট মস
লন্ডনের মেফেয়ারে অবস্থিত অপেরা গ্যালারিতে ‘লেডিল্যান্ড’ নাম দিয়ে এলেন ভন আনওয়ার্থের আলোকচিত্রের একটি প্রদর্শনী চলেছে৷ ‘‘ছবি বিজ্ঞাপনের জন্যই হোক আর পত্রিকার জন্যই হোক, (এলেনের) কাজের সবচেয়ে জোরালো উপাদান হলো গল্প বলা,’’ বললেন প্রদর্শনীর পরিচালক সেবাস্তিয়াঁ প্লঁতঁ৷ কেট মস, ক্লাউডিয়া শিফার বা নাওমি ক্যাম্পবেলের মতো সুপারমডেলরা সকলেই ধরা পড়েছেন এলেন ভন আনওয়ার্থের ক্যামেরায়৷
এলেন ভন আনওয়ার্থ
জন্ম ১৯৫৪ সালে জার্মানির ফ্রাংকফুর্টে; স্বল্পবয়সেই এলেন তাঁর বাবা-মাকে হারান৷ তাঁর যখন ২০ বছর বয়স, তখন তিনি মিউনিখে এক ফটোগ্রাফারের নজরে পড়েন এবং প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান৷ পরে প্যারিসে গিয়ে ১০ বছর ধরে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন এলেন – তারপর খেয়াল করেন যে, মডেলিং-এর চেয়ে ছবি তোলার কাজটাই তাঁর বেশি ভালো লাগে৷
ক্লাউডিয়া শিফার
১৯৮৯ সাল, এলেন ভন আনওয়ার্থ তখন ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার ক্যাথারিন হ্যামনেটের হয়ে কাজ করছেন আলোকচিত্রী হিসেবে৷ ‘গেস’ কোম্পানির সে বছরের বিজ্ঞাপন অভিযানে এলেনের ক্যামেরার সামনে আসে মডেলিং জগতে আজ সর্বজনপরিচিত একটি নতুন মুখ: মডেলের নাম, ক্লাউডিয়া শিফার৷ বাকিটা ইতিহাস৷
মুখোশ
এলেনের আলোকচিত্রে নারীত্বকে অন্যভাবে দেখা ও দেখানো হয়েছে৷ এই সব মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন, নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারেন; এদের আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই; এরা পুরুষের উপর নির্ভর নন৷ এভাবেই প্লঁতঁ #MeToo আন্দোলনের আঙ্গিকে এলেন ভন আনওয়ার্থের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেছেন৷
মাথায় কার্লার পরা নাওমি ক্যাম্পবেল
তিনি সবসময়ে তাঁর ‘শুট’-গুলোর আয়োজন করেন যেন তিনি কোনো কাহিনীচিত্রের শুটিং করতে চলেছেন – ‘লেডিল্যান্ড’ প্রদর্শনীর ক্যাটালগে বলেছেন এলেন ভন আনওয়ার্থ৷ শুটিং-এর কাহিনিটা প্রথমে একটা ছোটগল্পের মতো করে সাজিয়ে নেন; তারপর আসে কাস্টিং, লোকেশন, ক্রু ইত্যাদির প্রশ্ন৷ এছাড়া তাঁর ‘শুট’-এর সেটিং আর সংগীতও হয় ঐ গল্প অনুযায়ী৷
সঠিক মুহূর্ত
এলেন ভন আনওয়ার্থের একটি নির্দোষ চাতুরী হলো, অনেক সময় তিনি শুট শেষ হয়ে যাবার পরেও – অর্থাৎ মডেল বা মডেলরা যখন ভাবছেন, ছবি তোলা শেষ হয়েছে –তখনও এলেন ছবি তুলে যান, কেননা তার ফলে যে আন্তরিক ও অকৃত্রিম মুহূর্তগুলি ধরা পড়ে, তা এক অন্য আবহের সৃষ্টি করে৷ ‘‘আমি জীবনকে ভালোবাসি ও তাকে (আমার ছবিতে) ধরে রাখতে চাই,’’ বলেছেন এলেন ভন আনওয়ার্থ৷
‘ওত কুতুর’ বা হাই ফ্যাশন
এলেন ভন আনওয়ার্থের নেশা হলো ছবি তোলা, শুধু ফ্যাশন ফটোগ্রাফি নয়৷ বলতে কি, রাস্তাঘাটে মানুষের ছবি তোলা থেকে তিনি তাঁর বিভিন্ন শুটের কাহিনিগুলো পান৷ শিল্পকলা, সিনেমা, সংগীত বা ফ্যাশন, পথঘাটের দৃশ্য, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পাপারাৎসিদের তোলা সেলিব্রিটিদের ছবি, সব কিছুই তাঁকে প্রেরণা জোগাতে পারে৷
‘কিস মি কুইক’
ছবিটি দেখলে এলভিস প্রেসলির বিখ্যাত গানটির কথা মনে পড়তে বাধ্য৷ মেফেয়ারে এলেন ভন আনওয়ার্থের ছবির প্রদর্শনীর নামটা কিন্তু এসেছে স্বয়ং শিল্পীর কাছ থেকে; এলেন নাকি হঠাৎ একদিন ফোন করে প্লঁতঁকে বলেন যে, তিনি সঠিক নামটা খুঁজে পেয়েছেন: ‘লেডিল্যান্ড’৷
আজ ও কাল
ফ্যাশনের মতো মানুষের মনোভাবও সময়ের সঙ্গে বদলায়, দেখেছেন এলেন ভন আনওয়ার্থ৷ এককালে যা রুচিবিরুদ্ধ, এমনকি প্ররোচনামূলক ছিল, কালে তা গ্রহণযোগ্য – গ্রহণযোগ্য কেন, স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে৷ ত্রিশ বছর আগে এলেন ভন আনওয়ার্থ যখন দুই চুম্বনরত মহিলার ছবি তোলেন, তখন অনেকেই তা আপত্তিকর বলে মনে করেছিলেন৷
প্রতিবিম্ব
এলেন ভন আনওয়ার্থ নিজেই মডেল ছিলেন, কাজেই নারী, নারীদেহ ও নারীত্বের প্রতি তাঁর মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গী পুরুষ আলোকচিত্রীদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা৷ এলেন যেভাবে নারীদের দেখেন ও দেখান, তার মধ্যে কোনো পৃষ্ঠপোষকতার ভাব নেই; যা আছে, তা হলো শিল্প, সৌন্দর্য ও নন্দনতত্ত্ব৷