ভয়ংকর কিছু খাবার
বিশ্বময় ভালো খাবারের তো কোনো অভাব নেই! তবুও মানুষের শখ মেটে না৷ দেশদেশান্তের বিষাক্ত সমস্ত খাবারের দিকেই তাদের টান৷ বিশেষজ্ঞেরা বলেন, অনেকে মনে করেন, বিষাক্ত জিনিস খাওয়ার মধ্যে একধরনের রোমাঞ্চ আছে৷
লম্বাহাত অক্টোপাস
কোরিয়াতে এ ধরনের বিষাক্ত অক্টোপাসের নাম সান-নাকজি৷ সাধারণত রান্না না করেই এ ধরনের অক্টোপাস কোরিয়ায় খেতে দেওয়া হয়৷ সেটাই ডেলিকেসি৷ তবে শরীর থেকে পা’গুলো আলাদা করে দেওয়া হয়৷ শরীরেই থাকে বিষ, যা খাওয়া যায় না৷ কিন্তু পা’গুলো আলাদা করে সিসেম তেল দিয়ে মাখিয়ে সার্ভ করা হলেও পা’গুলো নড়তে থাকে৷ অতিথিদের বলে দেওয়া হয়, সাবধানে খেতে৷ যে কোনো সময় গলায় লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতা
সারা পৃথিবীতেই ব্যাঙের ছাতা খাওয়ার চল আছে৷ কিন্তু সব ধরনের ছাতা খাওয়া যায় না৷ অনেক ব্যাঙের ছাতাই হয় বিষাক্ত৷ ‘আমানিতা ফ্যালোয়ডেস’ তেমনই একপ্রকার ছত্রাক৷ কেউ কেউ যাকে ‘মৃত্যু ছত্রাক’ও বলেন৷ ঠিকমতো রান্না না করে এই ছত্রাক খেলে মৃত্যুও হতে পারে৷ কিডনি এবং লিভার নষ্ট করে দেয় এই ছত্রাক৷
বিষাক্ত ব্যাঙ
নামিবিয়ার ‘বুলফ্রগ’ খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় আছে৷ বলা হয়, তৃতীয় বৃষ্টির আগে একে মারা ঠিক নয়৷ তাহলে ব্যাঙের শরীরে বিষ থেকে যাবে৷ তৃতীয় বৃষ্টির দিনে নাকি এই ব্যাঙ সবচেয়ে বেশি ডাকতে থাকে৷ এরপর কাঠের উনুনে সেই ব্যাঙ রান্না করাই রেওয়াজ৷ এই রীতি ঠিকমতো পালন না করলে কিডনি নষ্ট হওয়ার সমূহ আশঙ্কা৷
বিষ ফল
এলডার বেরি দেখতে দারুণ৷ গন্ধও চমৎকার৷ এ ধরনের বেরি বা আঙুর দিয়ে সিরাপ তৈরি হয়৷ পাই বা কেকের সিজনিং, জ্যাম, চাটনি এমনকী, লিকারও তৈরি হয় এই ফল দিয়ে৷ কিন্তু ভালো করে রান্না করতে না পারলে বিপদ৷ এই ফলের মধ্যে থাকে বিষ৷ না পাকা অবস্থায় এই ফল খেলে মৃত্যু অবধারিত৷ আর পাকা ফলও ঠিকভাবে রান্না করে খেতে হয়৷ এল্ডার বেরির পাতা এবং ডালে থাকে সায়ানাইড বিষ৷ কোনোভাবে তা পেটে চলে গেলে মৃত্যু অবধারিত৷
মাছ হইতে সাবধান
জাপানের অন্যতম দামি মাছ ফুগু৷ এ মাছের লিভার, পাকস্থলী এবং ওভারিতে থাকে নিউরোটক্সিন৷ বৈজ্ঞানিক ভাষায় এর নাম টেট্রোডটক্সিন৷ সকলে এই মাছ রান্না করতে পারেন না৷ এর জন্য দরকার আলাদা লাইসেন্স৷ কয়েক বছর আগে লাইসেন্সহীন রাঁধুনিদের হাতে এই মাছ খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের৷ তারপর থেকেই এই নিয়ম চালু হয়েছে৷ বলা হয়, ফুগু খেয়ে মৃত্যু নাকি অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক৷
বিষাক্ত আলু
ফুগুর মতো না হলেও, আলুর ছত্রাক খেয়েও মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে৷ কোনো কোনো প্রজাতির আলু কাঁচা থাকার সময় তার মধ্যে এক ধরনের বিষ থাকে৷ আলুর রং তখন থাকে সবুজ৷ এই বিষের নাম সোলানাইন৷ সেই বিষ বেশি পেটে চলে গেলে মাথা ধরে, বমি হতে পারে৷ কখনো কখনো মানুষ কোমাতেও চলে যান৷ মৃত্যুও ঘটে৷
গেঁজিয়ে যাওয়া হাঙর
এটি বহু পুরনো ভাইকিং খাবার৷ আইসল্যান্ডে এটি জাতীয় খাবারের মর্যাদা পেয়েছে৷ পচে যাওয়া গ্রিনল্যান্ডের শার্ক৷ এ ধরনের হাঙর ধরার পর বালির নীচে পুঁতে দেওয়া হয়৷ ফলে হাঙরের দেহ খানিক পচে যায়, খানিক শুকিয়ে যায়৷ এভাবে ১২ সপ্তাহ রাখার পর হাঙরের শরীর থেকে সমস্ত তরল বেরিয়ে যায়৷ পচে যাওয়া সেই হাঙর তখন শুকোতে দেওয়া হয়৷ খাওয়া হয় আরো কয়েকমাস পর৷
কামরাঙাতেও বিষ?
কামরাঙা সকলেই খান৷ পেকে গেলে টকমিষ্টি৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরমধ্যে এক ধরনের অজানা নিউরোটক্সিন থাকে৷ স্বাভাবিক কিডনির যা কোনো ক্ষতি করে না৷ কিন্তু কারও কিডনি খারাপ হলে সেই বিষ কিডনির আরো ক্ষতি করতে পারে৷ খাওয়ার সময় তা বোঝাও সম্ভব না৷