1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বুথে আধাসেনা চান পশ্চিমবঙ্গের ভোটকর্মীরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১১ এপ্রিল ২০১৯

নির্বাচন কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিতে সরব পশ্চিমবঙ্গের ভোটকর্মীরা৷ প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি তুলেছেন তাঁরা৷ দাবি আদায়ে মিছিল করেছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে ডেপুটেশনও দিয়েছেন তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/3GbsQ
প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবিতে মিছিল করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ভোটকর্মীরাছবি: DW/P. Samanta

ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার৷ মোট সাত দফায় ভোট নেওয়া হবে৷ সব দফাতেই ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে৷ রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর এই রাজ্যে নির্বাচন ঘিরে হিংসা নতুন বিষয় নয়৷ নির্বাচনি প্রচারপর্ব ও ভোটগ্রহণের সময় হিংসাত্মক ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের৷

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে একশোর বেশি রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থক মারা গিয়েছেন৷ উত্তরবঙ্গে একজন প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায় রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছিলেন৷ রাজকুমার রায়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলেছিল বুথ থেকে কিছুটা দূরে, রেললাইনের ধারে৷ সেই বিষয়টিকে তুলে ধরে এবার পথে নেমেছেন ভোটকর্মীরা৷

প্রবাল চক্রবর্তী

ভোটের দিন ঘোষণার পর জেলায় জেলায় ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন৷ সেই প্রশিক্ষণ চলাকালীন দেখা গিয়েছে অভূতপূর্ব ছবি৷ প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ভোটকর্মী শিক্ষকরা৷ তাঁদের দাবি, প্রতি বুথে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হবে৷ নিরাপত্তা পর্যাপ্ত না হলে তাঁরা ভোট পরিচালনা করবেন না৷ বিক্ষোভ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায়৷

 

বুথে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি

সোমবার পথে নেমেছিল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একটি সংগঠন৷ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষা অনুরাগী ঐক্য মঞ্চের উদ্যোগে কলকাতায় মিছিল করেন বিভিন্ন জেলার ভোটকর্মী শিক্ষকরা৷ তারপর সংগঠনের সদস্যরা মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিকের কার্যালয়ে গিয়ে ডেপুটেশন জমা দেন৷

সংগঠনের সদস্য, কলকাতার শিক্ষক প্রবাল চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজকুমার রায়ের ঘটনাই প্রমাণ করছে, ভোটকর্মীদের কোনো নিরাপত্তা নেই৷ তাঁরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভোট পরিচালনা করেন৷ তাই আমরা প্রতি বুথে আধাসেনা চাইছি৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে গন্ডগোল হবে না৷ নির্বিঘ্নে ভোট পরিচালনা করা যাবে৷''

নির্বাচন কমিশন আগেই ঘোষণা করেছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বুথে আধাসেনা মোতায়েন করা হবে না৷ বৃহস্পতিবার কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের অর্ধেক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল৷ বাকি বুথে রাজ্য পুলিশই বুথ পাহারার দায়িত্বে থেকেছে৷ অর্থাৎ, ভোটকর্মীদের দাবি পূরণ করেনি কমিশন৷

কিঙ্কর অধিকারী

এ ব্যাপারে এই সংগঠনের সম্পাদক শিক্ষক কিঙ্কর অধিকারী কথা বলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনি আধিকারিক আরিজ আফতাবের সঙ্গে৷ আফতাব সংগঠনকে জানান, গোটা দেশে নির্বাচন হচ্ছে৷ তাই সর্বত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়৷ তবে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেটা কমিশন দেখবে৷

সেক্ষেত্রে যে বুথে আধাসেনা নেই, সেখানে গন্ডগোল হলে কী পদক্ষেপ নেবেন ভোটকর্মীরা৷ প্রবাল বলেন, ‘‘কোথাও গন্ডগোলের খবর পেলে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব৷ এমন পদক্ষেপ নেব যে বাংলা উত্তাল হয়ে উঠবে৷ নির্বাচনে কারচুপি, ছাপ্পা ভোটের ক্ষেত্রে আমাদের দর্শক হয়ে থাকতে হয়, আপোশ করতে হয়৷ খুব বিবেক দংশন হয়৷ প্রতিবাদ করলে আক্রান্ত হতে হয়৷ এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চাই না৷''

বিরোধীরা গোড়া থেকেই সব বুথে আধাসেনার দাবি তুলেছে৷ তার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে শিক্ষকদের দাবি৷ এর নেপথ্যে কি কোনো রাজনীতি রয়েছে? পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের শিক্ষক কিঙ্কর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই৷ শাসক বা বিরোধী, যার যেখানে জোর, সে সেখানে ভোটে অনিয়মের চেষ্টা করে৷ আমরা ভোট পরিচালনা করতে গিয়ে সন্ত্রাসের মুখে পড়ি৷ শিক্ষকদের সম্মান নষ্ট হয়৷ রাজকুমার রায়কে প্রাণও দিতে হয়েছে৷ সবাই সুষ্ঠুভাবে ভোট দিক, রাজনৈতিক দলগুলি সেই পরিবেশ তৈরি করুক৷''

সুলগ্না পাল

প্রতিবাদ সর্বত্র

বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনে ভোটকর্মী শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তৃণমূল অভিযোগ করত, তাঁরা ভোট পরিচালনার সময় পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা নেন৷ কিন্তু, ভোটকর্মীদের পক্ষ থেকে কখনও এ ধরনের প্রতিবাদ দেখা যায়নি৷ এটা নতুন কোনও ব্যাপার নয়, তাহলে তৃণমূলের আমলে কেন এই প্রতিবাদ হচ্ছে?

কিঙ্কর বলেন, ‘‘আগে প্রতিবাদ হয়নি, এখন হচ্ছে৷ যে বিরোধী ছিল, সে শাসক হয়ে তার আগের প্রতিবাদের কথা ভুলে যাচ্ছে৷ ক্ষমতা ধরে রাখতে একই পথে চলা শুরু করছে৷ ভোটকর্মীদের অবস্থান একই থাকছে৷ তাঁরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভোট পরিচালনা করছেন৷ তাই কে সরকারে আছে, কে বিরোধী, সেটা কোনো বিষয় নয়৷''

বিশ্বজিৎ মিত্র

ভোটকর্মী হিসেবে মহিলাদের অবস্থান এখানে কোথায়? প্রতিবাদে সামিল কলকাতার শিক্ষিকা সুলগ্না পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সহ শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছি, নির্বাচনের সময় বুথের আবহ কেমন থাকে, কতটা নিরাপত্তার অভাববোধ হয়৷ ভোট পরিচালনার কাজে যাওয়ার আগে সেটা ভাবনায় রেখেছে৷ সে কারণে বুথে আধাসেনার দাবি তুলেছি৷ তাতে নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত করা যাবে৷''

নির্বাচনের আসরে

বৃহস্পতিবার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে নির্বাচন হয়েছে৷ একাধিক জায়গা থেকে অশান্তির খবর মিলেছে৷ আধাসেনা ছাড়া রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট হয়েছে বহু বুথে৷ তাই বাকি ছয় দফার ভোটে হিংসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷

কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ মিত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে জায়গায় গন্ডগোল অতীতে হয়েছে, সেটাই কেবল স্পর্শকাতর বললে চলবে৷ আমরা কমিশনকে বলেছি, অনেক বুথেই নীরব সন্ত্রাস চলে৷ ভোটে অনিয়ম হয়, ভোটকর্মীদের মুখ বুজে দেখে যেতে হয়৷ কমিশনকে লিখে দিতে হয়, অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে৷ এই নীরব সন্ত্রাসও আমরা বরদাস্ত করব না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য