1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভূমিকম্প সামলাতে ইন্দোনেশিয়ায় বাঁশের বাড়িঘর

১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর মানুষের পুনর্বাসন একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পপ্রবণ একটি এলাকায় বাঁশের তৈরি চিরায়ত বাড়িঘর তৈরির এক উদ্যোগ স্থানীয় মানুষের নিরাপদ আবাসন ও পেশাগত সুবিধা সৃষ্টি করছে৷

https://p.dw.com/p/3V0oe
প্রতীকী ছবিছবি: Pasi Aalto

ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের কেন্দ্রস্থলে কুলাউই মালভূমি অত্যন্ত বিপর্যয়-প্রবণ এলাকা৷ বন্যা, ধস, ভূমিকম্প লেগেই রয়েছে৷ রিশটার স্কেলে সাত দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে গ্রামের অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে৷ কুলাউই জেলার পর্যটন কেন্দ্র পালু সিটি সেই বিপর্যয়ের কয়েক সপ্তাহ পর বাইরের জগত থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল৷

বোলাপাপু গ্রামে একদল তরুণ বাঁশ দিয়ে বাড়ি তৈরি করছে৷ এএসএফ-আইডি সহযোগীদের সঙ্গে তারা বসবাস ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্য একটি জায়গা গড়ে তুলছে৷ গ্রামের বাসিন্দা মারওয়ান বলেন, ‘‘দেখলে লোবো, অর্থাৎ গ্রামের চিরায়ত সমাবেশের জায়গা মনে হতে পারে৷ তবে ভালো করে দেখলে গামপিরি বা বোলানোয়া, অর্থাৎ কুলাউই-র মূল বাড়িঘরের সঙ্গে মিল পাওয়া যাবে৷ সামান্য কিছু পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে৷ আজকাল বেশিরভাগ মানুষ শুধু লোবো চেনেন বলে বাঁশের তৈরি এই বাড়িগুলিকেও লোবো মনে করেন৷ বাস্তবে সেগুলির আকার-আয়তন অতীতের কুলাউয়ি বাড়ির মতো৷ আশ্রয়ের প্রয়োজনের তাগিদই মূল কারণ ছিল৷ বাসস্থানের পাশাপাশি কোনো পেশাগত দক্ষতা শেখানো হবে বলে আমাদের বলা হয়েছিল৷ প্রথমে আমাদের ডিজাইন দেখানো হয়েছিল৷ তারপর বিভিন্ন কর্মশালায় বীজ বপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া পর্যন্ত সব ধাপ বোঝানো ও হাতেনাতে পরখ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল৷ আমাদের কাছে এ সবই ছিল নতুন৷ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত সবকিছু আমাদের শিখতে হয়েছিল৷ শিখতে অনেক সময় লেগেছিল বটে, তবে কী আর করা যেত!

অনেককাল আগে কুলাউয়ি-তে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে বাড়িঘর তৈরির ঐতিহ্য ছিল৷ আধুনিক সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ইঁটপাথর ও কংক্রিট দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু করে৷ ইঁটের বাড়ি বিশেষ মর্যাদা পেতে থাকে৷ কিন্তু ভয়ংকর ভূমিকম্পের ফলে এ সব বাড়ি ভেঙে পড়লে ভারি কাঠামোর নীচে অনেকের মৃত্যু হয়৷ নির্মাণের ভারি উপকরণের ভয়ে মানুষ তখন বিকল্পের খোঁজ শুরু করে৷

হালকা ও নমনীয় উপকরণ হিসেবে বাঁশ বেছে নেওয়া হয়৷ ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয় সামলানোর ক্ষমতা বাঁশের রয়েছে৷ আর্কিটেক্টস উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের সদস্য রোব্বানি এ রোমিস৷ তিনি মারওয়ান ও তার বন্ধুদের সঙ্গে বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ করেছেন৷ রোব্বানি বলেন, ‘‘বাঁশ ব্যবহারের অন্যান্য পরিবেশগত সুবিধার মধ্যে সীমিত কার্বন নির্গমন, পানি সংরক্ষণও রয়েছে৷ কারণ বাঁশ গাছ শুকনা এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ফিরিয়ে আনতে পারে, গোটা অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার করতে পারে৷ সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বাঁশ নিয়ে কাজের গোটা প্রক্রিয়ার জন্য দক্ষ শ্রমিক ও কর্মীর প্রয়োজন৷ অর্থাৎ বিপর্যয়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য বাড়িঘর তৈরির পাশাপাশি আমরা সেই সব মানুষের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ করে দেই, যারা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে৷''

নিরাপদ বাঁশের বাড়ি

কেন্দ্রীয় সুলাওয়েসি কার্সা ইনস্টিটিউটের প্রধান রহমত সালেহ-র মতে, বাঁশ দিয়ে বাড়ি তৈরি আসলে শুধু উপলব্ধির বিষয়৷ ‘রিবিল্ডিং বেটার' নামের অভিযানের আওতায় এই প্রতিষ্ঠান বাঁশের তৈরি বাড়িঘরের একটি আবাসন প্রকল্পে সহযোগিতা করছে৷ রহমত জানান, ‘‘সাধারণত সামাজিক ও পরিসংখ্যান সংক্রান্ত এজেন্সিগুলি দারিদ্র্য সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে৷ বাড়িঘর তৈরির উপকরণের মতো সূচক ব্যবহার করে সেই তথ্য সৃষ্টি হয়৷ কংক্রিট ছাড়া সবকিছুই নিম্ন মানের হিসেবে দেখানো হয়৷ এমন বিভাজন আমাদের উপলব্ধিকে প্রভাবিত করে৷ # যে সব পরিবার নিজেদের দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হতে দিতে চায় না, অথবা দারিদ্র্য কাটিয়ে সচ্ছলতার দিকে এগোনোর সাফল্য তুলে ধরতে চায়, তাদের মধ্যে কংক্রিট ব্যবহার করে বাড়িঘর তৈরির প্রবণতা দেখা যায়৷ অনেক বেশি দামী হওয়া সত্ত্বেও এবং এলাকার চরিত্রের সঙ্গে খাপ না খেলেও তারা কংক্রিটের বাড়িঘর চায়৷ # প্রশাসনিক সংস্কার সহযোগিতা কর্মসূচি, বাম্বু লেস্তারি ফাউন্ডেশন ও এএসএফ-এর সাহায্য নিয়ে কার্সা বাঁশ দিয়ে তৈরি একাধিক বাড়িঘরের মডেল সৃষ্টি করেছে৷ ব্যক্তিগত মালিকানার বাড়ি, বিকল্প আবাসন এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলের মতো গণ পরিষেবার ভবনের মডেলও রয়েছে৷''

মারওয়ান অদূর ভবিষ্যতে সপরিবারে বাঁশের তৈরি বাড়িতে প্রবেশের পরিকল্পনা করছে৷ নিজের প্রশিক্ষণ সম্পর্কেও তিনি গর্ব অনুভব করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যে চেয়ারে আমি এখন বসে আছি, সেটি এই প্রশিক্ষণের সাক্ষাৎ ফল৷ আগে এমন চেয়ার তৈরির কাজ অত্যন্ত কঠিন ছিল৷ কয়েক মাসের প্রশিক্ষণের অন্যতম সুফল এটি৷ # আমি কেন এই শিক্ষা কর্মসূচিতে যোগ দিলাম? আমি খুচরো কাজ করে আয় করতাম৷ কোনো কাজে তেমন দক্ষতা ছিল না৷ এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আমি যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করে বাঁশ দিয়ে বাড়ি তৈরির কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবো বলে আশা করছি৷ আশাকরি এটি আমার পরিবারের আয়ের উৎস হয়ে উঠবে৷''

প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করে বেশিরভাগ বাসিন্দাই নিরাপদ আবাসন ও পেশার ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন৷

বানগুনান বাম্বু রামাহ বেনকানা/এসবি