ভুল করল নেপাল?
১ জানুয়ারি ২০১৮নতুন নিয়ম৷ একক এভারেস্ট অভিযান আর করা যাবে না৷ আরোহণের সময় দুর্ঘটনা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত, বলছে নেপাল সরকার৷ একই কারণে দৃষ্টিহীন অভিযাত্রীদের, বা যে অভিযাত্রীর দু'টি পা-ই কোনো কারণে কাটা পড়েছে, তাঁদেরও এভারেস্ট আরোহণ বারণ হয়ে গেল৷
২০১৭ সালে সব থেকে বেশি সংখ্যক অভিযাত্রী এভারেস্ট শৃঙ্গে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন৷ মারা গিয়েছেন ছ'জন, যাঁদের মধ্যে আছেন ৮৫ বছরের মীনবাহাদুর শেরচান, যিনি বিশ্বের প্রবীণতম এভারেস্ট বিজয়ী হিসেবে নিজের আগের স্বীকৃতি ফিরে পেতে চেয়েছিলেন৷ আছেন বিখ্যাত সুইস পর্বতারোহী উলে স্টেক, যিনি এভারেস্ট লাগোয়া অন্য একটি শৃঙ্গ একা আরোহণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন৷
মনে হতে পারে, এই ধরনের মৃত্যু আটকানোর জন্যেই নতুন নিয়ম চালু করে একক আরোহণ নিষিদ্ধ করল নেপাল৷ কিন্তু এই যুক্তি মানতে চাইছেন না সেইসব পর্বতারোহীরা, যাঁরা মনে করেন, একক অভিযান হলো একজন পর্বতারোহীর ব্যক্তিগত দক্ষতা, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা এবং কৌশলগত নৈপুণ্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা, যার জন্য তাঁরা খুব ভালো করে তৈরি হয়ে আসেন৷ এঁরা কোনো সাধারণ অভিযাত্রী হন না, যে স্রেফ খেয়ালের বশে একা একা মাউন্ট এভারেস্টের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করতে চলে যাবেন৷ বরং ওটা এমন একটা চ্যালেঞ্জ, যা জিতে নিজেদের সক্ষমতা এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চান তাঁরা৷
চন্দননগরের অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় পেশাদার পর্বতারোহী এবং পর্বত আরোহণে উৎসাহী অভিযাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাঁদের অভিযান-সঙ্গী এবং পথ প্রদর্শক হিসেবে হিমালয়ের দুর্গম পথেই বছরের একটা বড় সময় কাটে তাঁর৷ অনিন্দ্য ডয়চে ভেলেকে পরিষ্কারই বললেন, এটা নেপাল সরকারের একটা চমক দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়৷ নেপাল দেখাতে চাইছে, অভিযাত্রীদের সুরক্ষার জন্য এবং এভারেস্টের পরিবেশের সুরক্ষার জন্য ওরা কিছু একটা করল৷ কিন্তু আসলে যেটা হলো, বিশ্ববিখ্যাত পর্বতারোহী এবং অভিযাত্রীরা, যাঁদের কাছে স্রেফ আর একটা এভারেস্ট অভিযানই একমাত্র লক্ষ্য নয়, বরং পর্বতারোহণের কলাকৌশলকে যাঁরা আরও সমৃদ্ধ করেন নিজেদের একক অভিযানের অভিজ্ঞতা দিয়ে, তাঁদের আসার রাস্তাটা বন্ধ করে দেওয়া হলো৷
অনিন্দ্যর খুব স্পষ্ট বক্তব্য, যে নেপালের বরং নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল বাণিজ্যিক এভারেস্ট অভিযান, যা মূলত বহু অর্থের বিনিময়ে এভারেস্ট জয়কে বিত্তবান, খামখেয়ালি অভিযাত্রীদের কাছে সহজ করে তুলেছে৷ যাঁরা পর্বতারোহণ বা এ ধরনের অভিযানকে আদৌ ‘স্পোর্টস' হিসেবে দেখেন না, বরং বিনোদন মনে করেন৷ এভারেস্টের যাত্রাপথেও তাঁরা আয়েসি জীবন চান এবং তার জেরেই খাবারের ক্যান আর পানীয়র বোতলের স্তূপ জমে ওঠে এভারেস্টের পায়ের কাছে, প্রতি বছর৷ এবং দুর্ঘটনা মূলত এদের সঙ্গেই ঘটে, যেহেতু পর্বতারোহণের প্রাথমিক শিক্ষা এবং মানসিকতার অভাব থাকে এঁদের মধ্যে৷ গত কয়েকটি মরশুমে বাংলা থেকে এভারেস্টে যাওয়া অভিযাত্রীদের দুর্ঘটনাগুলি একটু খতিয়ে দেখলেই সেটা আরও স্পষ্ট হবে, বললেন অনিন্দ্য৷
পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে এভারেস্ট অভিযানে মৃত্যুর ২০ শতাংশ ঘটে ওই ৮০০০ ফুট উচ্চতার প্রতিকূল পরিবেশের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে৷ ২৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে পড়ে গিয়ে আর ২৯ শতাংশ মৃত্যু হয়ে তুষারধ্বসের কারণে৷