1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ভুলোমন কলকাতা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৯ মার্চ ২০১৮

ভুলে যাওয়ার বদভ্যাসে কলকাতা আছে ভারতের এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একেবারে প্রথম সারিতে৷ ট্যাক্সিতে জিনিস ছেড়ে চলে আসার থেকে পরিচিত লোকের নাম ভুলে যাওয়া, সবেরই উদাহরণ ভুরিভুরি৷

https://p.dw.com/p/2uZmJ
ছবি: picture-alliance/Annie Owen/Robert Harding World Imagery

প্রায়ই খবরের কাগজে, টিভিতে জানা যায় এরকম ঘটনার কথা, যেখানে লোকে টাকা-ভর্তি ব্যাগ, গয়নার বাক্স, জরুরি কাগজ-পত্র ট্রেনে, বাসে, ট্যাক্সিতে ফেলে রেখে চলে এসে আবার ফেরত পেয়েছে৷ সাধারণত ফেরত আসে না এ ধরনের মূল্যবান জিনিসপত্র৷ যখন আসে, তখনই খবর হয়৷ আন্তর্জাতিক ট্যাক্সি পরিচালন সংস্থা উবার সম্প্রতি এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, এমন ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে গোটা এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, অস্ট্রেলিয়া এবং ফিলিপিন্সের সঙ্গে ভারতও আছে ভুলোমন দেশেদের তালিকার প্রথম সারিতে৷ আর ভারতে সবথেকে ভুলোমন শহর হচ্ছে দক্ষিণের বেঙ্গালুরু, তারপরেই রাজধানী দিল্লি এবং বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মুম্বই৷ কলকাতা এই তালিকায় আছে পাঁচ নম্বরে৷

ভুলে যাওয়া, হারিয়ে ফেলার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন মৌসুমী কুন্ডু

কী কী হারায় মানুষের?‌ বিচিত্র সেই তালিকা৷ তার মধ্যে যেমন সোনার গহনা আছে, তেমনি আছে জন্মদিনের জন্যে কেনা বিশাল কেক! এছাড়া যা সর্বক্ষণই হারায়, অর্থাৎ ছাতা, পার্স, ইদানীংকালে মোবাইল ফোন, এমনকি চশমাও যে মাঝরাস্তায় হারিয়ে আসে লোকে, তা বোঝা গেল কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে৷ তবে এঁরা কিন্তু এমনিতে, দৈনন্দিন জীবনেও ভুলে যাওয়া, হারিয়ে ফেলায় ওস্তাদ৷ যেমন মৌসুমী কুন্ডু৷ একসময় চাকরি করেছেন এক নামী বহুজাতিক সংস্থায়, মাঝপথে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন পুরোদস্তুর গৃহবধূ, সংসার সামলান৷ মৌসুমীর দীর্ঘ ইতিহাস আছে নানা সময় নানা জিনিস হারিয়ে আসার, যখন নিয়মিত চাকরির জন্যে বাইরে বেরোতেন৷‌ কিন্তু এখন এমনও হয়, যে হন্যে হয়ে চশমা খুঁজে যান, যখন সেই চশমা আছে চোখের সামনে, নাকের ওপর৷ একবার এমনও হয়েছিল যে, বন্ধুদের সঙ্গে বাসে উঠে স্রেফ ভুলে গিয়েছিলেন কোথায় যাচ্ছেন!‌ কন্ডাক্টর টিকিট কাটতে এলে চূড়ান্ত অপ্রস্তুত হয়ে, দূরে বসা বন্ধুদের হেঁকে জিজ্ঞেস করতে হয়েছিল, ‘‘আমরা কোথায় যেন যাচ্ছি?‌’’ ডয়চে ভেলেকে ঘটনাটা বলার সময় হাসি চাপতে পারছিলেন না মৌসুমী৷

ছেলেদের থেকে মেয়েদেরই ভুলে যাওয়ার ‘রোগ’ বেশি: পুরঞ্জিত মুখার্জি

তবে ভুলে যাওয়াটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই বেশি আসে, বলছিলেন প্রবীণ পুরঞ্জিত মুখার্জি৷ পেশায় ব্যবসায়ী পুরঞ্জিত অবশ্য মনে করেন, ছেলেদের থেকে মেয়েদেরই এই ভুলে যাওয়ার ‘রোগ’ বেশি৷ কিন্তু তাঁরও হয়, যে এক বছর আগেই যে জায়গায় ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন, সেই জায়গার নাম চট করে মনে করতে পারেন না৷ বা সামাজিক অনুষ্ঠানে কাউকে দেখে বুঝতে পারেন, লোকটি পরিচিত, কিন্তু তার নাম কিছুতেই মনে পড়ে না৷ কিন্তু নিজে কখনও কোনও জিনিস বাসে বা ট্যাক্সিতে ভুলে ফেলে রেখে চলে এসেছেন, এমন ঘটনা তাঁর সঙ্গে ঘটেনি৷ উবারের ওই সমীক্ষাও বলছে, কলকাতার যাত্রীরা কিন্তু ট্যাক্সিতে ওঠা-নামার সময় নিজেদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়ার বেলায় বেশ সতর্ক৷ এবং কাজের দিনগুলোয় জিনিস ফেলে চলে যাওয়ার ঘটনা কম, বেশি বরং সপ্তাহান্তে৷

ভুলে যাওয়ার কারণ জানাচ্ছেন ডাঃ শান্তনু গোস্বামী

এই ভুলে যাওয়া তিন ধরনের হয়, কারণ, মানুষের স্মৃতিরও তিনটি ধরন আছে৷ ডয়চে ভেলেকে বললেন বিশিষ্ট স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শান্তনু গোস্বামী৷ সাধারণভাবে শেষ ২৪ ঘণ্টার স্মৃতিকে বলা হয় ‘ইমিডিয়েট মেমরি’, ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার স্মৃতি হলো ‘রিসেন্ট মেমরি’ এবং তার আগের সবকিছু হলো ‘পাস্ট মেমরি’৷ যেটাকে সাধারণভাবে ভুলে যাওয়া বলা হয়, সেটা ওই রিসেন্ট, বা সাম্প্রতিক স্মৃতিবিভ্রম৷ এটা যেমন বয়সজনিত কারণে হয়, তেমনি যথেষ্ট মনোযোগ না থাকলে, বা কোনও কারণে অন্যমনস্ক থাকলেও হতে পারে৷ সেটা সাধারণত সাময়িক এবং স্বাভাবিক৷

কাজেই সেভাবেই যাত্রীরা ফেলে যান ব্যাগ, চশমা, ছাতা৷ কিন্তু কী বলে প্রমাণ মাপের এলসিডি টিভি ট্যাক্সিতে ফেলে কেউ চলে যেতে পারেন, সে এক রহস্য৷ হ্যাঁ, সেরকম একটি ভুলে যাওয়ার ঘটনাও নথিভুক্ত আছে উবারের খাতায়৷