ভিয়েতনামি শিল্পীর হাতে তৈরি ‘চলচ্চিত্র’
১৪ মার্চ ২০১০তাঁর নিজস্ব শব্দ কলায় তিনি এই ছবি প্রদর্শন করেন যা একবারে মাত্র একজন দর্শকই উপভোগ করতে পারেন৷ সারাজীবন যে ছোট্ট কাঠের ঘরে কাটিয়েছেন, সেখানেই বসে ৬৩ বছর বয়সি লঙ বলেন, ‘‘আমার ছবি হাতে বানানো, এটিই হচ্ছে এর মূল্যবান দিক৷ আমার ছবি আধুনিক নয়৷'' তিনি জানান, ‘‘আমার মোট আড়াই শ' ছবি রয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে আমি নিজে তৈরি করেছি ৫০ টি এবং আরো ২০০ টি কিনেছি৷''
১৯৫০ সালের দিকে ফরাসি শাসকরা যখন তাঁর দেশ ছেড়ে যায়, সেসময়ই তাদের কাছ থেকে ছবি প্রদর্শনীর এই কৌশল আয়ত্ব করেন লঙ৷ এর পর স্থানীয় তথ্য দপ্তরের প্রধান হিসেবে চাকরি ছেড়ে লঙ আত্মনিয়োগ করেন তাঁর এই শখের কাজে৷ লঙ জানান, একেকটি ফিল্ম তৈরি করতে তাঁর প্রায় তিনদিন সময় লাগে৷ এগুলো সাধারণত পুরোনো দিনের রূপকথা কিংবা প্রাণীজগতের রূপক গল্পের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা৷
প্রথমদিকে তিনি এটি মূলত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রদর্শন করতেন৷ কিন্তু পরে চিড়িয়াখানায় এটির প্রদর্শন শুরু করেন৷ গত বছর অসুস্থতা এসে ভর করার পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ১৭ বছর ধরে এই হাতে তৈরি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে আসছেন লঙ৷ রাজধানী হ্যানয়-এর নগর চিড়িয়াখানায় দেখা মিলতো লঙের৷ সেখানে তিনি শিশু এবং বয়স্কদের মনোরঞ্জন করে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরেই৷
তাঁর ছবি দেখার জন্য মোলায়েম কোন আসন নেই৷ নেই বড় পর্দা৷ প্রয়োজন হয় না বৈদ্যুতিক সুবিধা৷ খোলা আকাশের নিচে একজন একজন করে দেখা যায় লঙের ছবির সংগ্রহ৷ অনবরত ছবি দেখার সাথে সাথে লঙের কণ্ঠে ধ্বনিত হতে থাকে গল্পমালা৷ এছাড়া হাতে থাকা ক্ষুদ্র বাদ্য যন্ত্রে বেজে ওঠে সুর লহরি৷ আধুনিক বাণিজ্যিক প্রেক্ষাগৃহের চেয়ে তাঁর ছবি দেখতে খরচ অনেক কম হয়৷ মাত্র ২০ সেন্ট খরচ করেই উপভোগ করা যায় লঙের হাতে তৈরি ‘ফিল্ম'৷
লঙ একটি প্লাস্টিক ব্যাগে করে বহন করেন তাঁর ফিল্ম প্রদর্শনীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ৷ এর মধ্যে রয়েছে এক গুচ্ছ ফ্লিপ কার্ডস৷ প্রত্যেকটি সাধারণ বিজনেস কার্ডের আকৃতির৷ এগুলোতে রয়েছে হাল্কা রঙের চকখড়ি দিয়ে আঁকা ছবি৷ তিনি এগুলোকে একটি কাঠের বাক্সের ছিদ্র দিয়ে দেখান৷ এগুলোকে আঙুল দিয়ে দ্রুত তালে সরাতে থাকলে তৈরি হয় একটি কাহিনীর রূপ৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: জাহিদুল হক