ভাস্কর্য দেখতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র!
সুচ এত ছোট যে হারিয়ে গেলে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না৷ তাই ‘খড়ের গাদার মধ্যে সুচ খোঁজা’ বলতে বোঝায় পণ্ডশ্রম৷ কিন্তু সেই সুচের মাথায় যে চোখ, তার মধ্যেও যে ভাস্কর্য থাকতে পারে, ভাবা যায়? উইলার্ড উইগান কিন্তু সেই কাজটাই করেন৷
আকার ০.০০০২ ইঞ্চি!
এক ইঞ্চির মাপ তো সবাই জানেন৷ সেটাকে ১০ হাজার ভাগ করে তার দু’ভাগ নিলে যতটুকু হয়, তার মধ্যে কি কোনো কিছু রাখা সম্ভব? যাঁরা ভাবছেন এটা অকল্পনীয় একটা ব্যাপার, তাঁদের জন্য খবর হলো, ঠিক ঐটুকু জায়গাতেই ভাস্কর্য তৈরি করেন ব্রিটিশ শিল্পী উইলার্ড উইগান! ছবিতে একটি পিনের মাথায় বিশ্বকাপের ট্রফি দেখা যাচ্ছে৷ অবশ্য অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে এটা দেখা সম্ভব নয়৷
তুলনা
বা পাশে সোনালি রংয়ের যে পালতোলা জাহাজটি দেখা যাচ্ছে, সেটা ডানপাশে থাকা সুচের চোখের মধ্যে সহজেই ঢুকে যায়৷ এই ছবির মধ্য দিয়ে নিশ্চয়ই উইগানের কাজের মাহাত্মটা বোঝা যাচ্ছে!
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে
ছবিতে পিনের মতো যে দুটো জিনিস দেখা যাচ্ছে সেগুলোকে ভাস্কর্য গড়ার কাজে লাগান উইগান৷ পুরো কাজটা করতে হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে৷ উইগান নিজেকে শিল্পীর চেয়ে ভাস্কর হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন৷
রং-তুলি হিসেবে চোখের পাতার লোম
উইগানের কাজের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো চোখের পাতার লোম৷ এগুলোকেই রং-তুলি হিসেবে ব্যবহার করেন উইগান৷ আগে মাছির চুলকে রং-তুলি হিসেবে ব্যবহার করলেও পরে দেখতে পান যে, মানুষের চোখের লোম দিয়েও এ কাজ করা যায়৷ ছবিতে একটি কেচিকে এমনই একটি লোমের উপর দেখা যাচ্ছে৷ উইগানের ভাস্কর্য গড়ার উপকরণের মধ্যে আছে আঁশ বা তন্তু, স্বর্ণ, প্লাস্টিক ইত্যাদি৷
সাবধানে শ্বাস নেয়া
উইগান এত ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে কাজ করেন যে, কাজের সময় তাঁকে বেশ সতর্কতার সঙ্গে নিঃশ্বাস নিতে হয়৷ কেননা একটু উলটপালট হলেই নিঃশ্বাসের তোড়ে সব শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা
একেকটি ভাস্কর্যের কাজ শেষ হতে দুই মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়৷ আর দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করাও উইগানের জন্য খুব একটা অস্বাভাবিক নয়৷
যেন সিন্ডেরেলার কাহিনি
ছবিতে ‘সিন্ডেরেলা’ রূপকথার কয়েকটি চরিত্রকে দেখা যাচ্ছে৷ উইগানের জীবনটাও অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই৷ ছোটবেলায় ‘ডিসলেক্সিয়া’ নামক রোগের কারণে ঠিকভাবে পড়তে পারতেন না৷ ফলে স্কুলের বন্ধুরা তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করতো৷ সেসময় থেকেই উইগান অতি ক্ষুদ্র ভাস্কর্য তৈরি করা শুরু করেন, যেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না৷ তাঁর মনে হয়েছিল, মানুষ যদি তাঁর কাজ দেখতেই না পারে, তাহলে তাঁরা সেটা নিয়ে সমালোচনা করতে পারবে না৷
স্বীকৃতি
উইগান তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এ পর্যন্ত অনেক পুরস্কার পেয়েছেন৷ প্রিন্স চার্লস, স্যার এল্টন জন, মাইক টাইসন, ডেভিড লয়েড, সাইমন কাওয়েল সহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি উইগানের ভাস্কর্য তাঁদের সংগ্রহে রেখেছেন৷