ভার্ল শহরে লকডাউনের দিনলিপি
মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ট্যোনিয়েস-এ করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় কঠোর লকডাউন দিতে হয়েছে জার্মানির দুটি অঞ্চলে৷ এত কঠোর লকডাউন কখনো দেখেনি জার্মানরা৷ ভার্ল শহর থেকে ডয়চে ভেলের মিওদ্রাগ সোরিচ জানাচ্ছেন কেমন সে জীবন৷
লকডাউনে ভার্ল
উত্তর-পশ্চিম জার্মানির শহরটিতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বাস৷ কিন্তু ছবিতে যে ভবনের সামনে ভার্লশহরের মেয়রকে দেখা যাচ্ছে, সেখানে বেশিরভাগই রোমানিয়া থেকে আসা কর্মী৷ তারা জার্মান না জানায় এক অনুবাদকের মাধ্যমে দূরত্ব বজায় রেখে হ্যান্ড মাইকের সাহায্যে কথা বলছেন মেয়র৷ লকডাউনের মধ্যে কী কী করতে হবে, আর কী করা যাবে না, নাগরিকদের জানাচ্ছেন তিনি৷
মেয়রের দ্বিমত
শহরটির মেয়র অবশ্য মনে করেন নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া ফেডারেল রাজ্য সরকারের এ লকডাউন পুরো শহরে চাপিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি৷ কারণ, তিনি মনে করেন কেবল একটি কারখানাতেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে৷
অধিকাংশ আক্রান্তই পূর্ব ইউরোপের
ট্যোনিয়েস কারখানার কর্মীদের বেশিরভাগই রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার নাগরিক৷ তবে তারা শহরের এমন এক অঞ্চলে থাকেন যেখানে অন্যান্য আঞ্চলিক কারখানার কর্মীদেরও বাস৷ ফলে সহজেই ট্যোনিয়েস কারখানায় আক্রান্তদের কাছ থেকে অন্য এলাকাতেও সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে৷
টেস্টে সহায়তায় সেনাবাহিনী
ভার্ল শহরের স্যুরেনহাইডে এলাকা পুরো বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে৷ তিনটি সড়ক মিলিয়ে ৬৭০ জনের মতো বাসিন্দা থাকেন৷ টেস্ট ও লকডাইনের অন্যান্য দিক ঠিকঠাক রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে জার্মান সেনা৷
আইন রক্ষায় পুলিশ
রাজ্যপুলিশ দেখছে যাতে ঘিরে ফেলা এলাকা থেকে টেস্ট ছাড়া কেউ বের না হতে পারেন৷ দুই মিটার উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে এলাকা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা লকডাউনের নানা শর্ত নিয়ে কথা বলছেন৷
টেস্ট চলছে
শহরের গ্যুটারশ্লোহ এলাকাতেও চলছে কঠোর লকডাউন৷ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে ট্যোনিয়েস কারখানার কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের৷ জরুরি ঘেরাও এলাকার বাইরেই এক তাঁবুতে সার্বক্ষণিক ডাক্তার উপস্থিত রয়েছেন৷ বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি সরকারি স্কুলকে টেস্ট করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে৷ এর খরচ পুরোটাই বহন করছে রাজ্য সরকার এবং ট্যোনিয়েস কারখানা মিলে৷
খোঁজ রাখছে সেনাবাহিনী
মেডিক্যাল সুরক্ষা পোশাক ও মাস্ক পরিহিত এক সেনাসদস্যকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ করোনা টেস্টে পজিটিভ হওয়া এক নাগরিকের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন তিনি৷ যারা টেস্টে নেগেটিভ আসছেন, তাদের ছুটি কাটাতে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷
বিপদের বন্ধু প্রতিবেশী
যারা লকডাউনে আটকে পড়েছেন, তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন টেস্টে নেগেটিভ আসা বা সুস্থ প্রতিবেশীরা৷ কার বাড়িতে কী প্রয়োজন জেনে নিজেরাই দোকান থেকে কিনে সরবরাহ করছেন অনেকে৷
সিগারেট-মদ বাদ যাবে কেন?
লকডাউনে যদি সব সুবিধা পাওয়া যায়, মন্দ কী! ঘুরে ঘুরে সিগারেট এবং বিয়ারও বিক্রি করছেন কেউ কেউ৷ বেড়ার এ প্রান্তে না আসতে পারলে কী হবে, এজন্য তো পার্টি থেমে থাকতে পারে না৷
পৌঁছে গেছে রেড ক্রসও
একদিকে কারখানা বন্ধ, ফলে চাকরি নেই৷ অনেকের ঠিকমতো বেতনও হচ্ছে না৷ কিন্তু সে কারণে যাতে খাবারের অভাব না হয়, পাউরুটি নিয়ে হাজির হয়েছে রেড ক্রস৷
শিশুপণ্য
লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের খাবার, ডায়াপারসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছিল৷ তবে বিভিন্ন সংস্থা দ্রুতই মাঠে নেমেছে সে সংকট নিরসনে৷ সবার কাছ থেকে চাহিদা জেনে সে অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করছে তারা৷ এমনকি দরিদ্র শ্রমিকদের অনেক পণ্য দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে৷