1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পচছে পেঁয়াজ

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

রপ্তানি বন্ধ। তাই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ট্রাকেই পচছে পেঁয়াজ। কিছু পচা পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানিও করা হয়েছে।

https://p.dw.com/p/3im1z
ছবি: bdnews24.com/A. Mannan

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ট্রাকের ভিতরেই পচছে পেঁয়াজ। ক্ষতি হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভারতে যখন পেঁয়াজ বাজারে আগুন, তখন কেন এ ভাবে পেঁয়াজ পচতে দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, বহু ঘটনার পরে শনিবার বাংলাদেশে যে পেঁয়াজ শেষ পর্যন্ত রপ্তানি করা হয়েছে, তারও একটা অংশ পচা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গত এক সপ্তাহ ধরে লাল ফিতের বাঁধনেই সীমান্ত পার করতে পারেনি পেঁয়াজ। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সীমান্তের আধিকারিকরা ট্রাক ছাড়ার বিষয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন।

এ বছর ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম। মহারাষ্ট্র সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজের ফলন কম হয়েছে। করোনার কারণে এবং বন্যার জন্য মাঠেই নষ্ট হয়েছে পেঁয়াজ। ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম গত এক মাসে কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশ দেয় ভারত সরকার। বলা হয়, আপাতত দেশের পেঁয়াজ শুধুমাত্র রাজ্যগুলির মধ্যেই বন্টন করা হবে।

সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই। প্রতি বছর কয়েক হাজার টন পেঁয়াজ ভারত বাংলাদেশে রপ্তানি করে। সেখান থেকে ভারত বড় অঙ্কের লাভও করে। এ বছরও পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত এবং দিনাজপুরের মহদিপুর সীমান্তে পেঁয়াজ রপ্তানির জন্য ট্রাক পৌঁছে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ট্রেনের ওয়াগানে করে বনগাঁ এবং রানাঘাটে পেঁয়াজ পৌঁছে গিয়েছিল। মহদিপুরে সাতটি ট্রাকের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সও হয়ে গিয়েছিল। সূত্র জানাচ্ছে, দুই সীমান্ত মিলে কয়েক হাজার টন ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য ট্রাক বোঝাই হয়ে ছিল। কিন্তু রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার হওয়ার পরেই রাতারাতি সীমান্তে পেঁয়াজের ট্রাক আটকে দেয় শুল্ক দফতর এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অফিসাররা।

সমস্যা হলো, সীমান্ত থেকে অত পরিমাণ পেঁয়াজ ফিরিয়ে নেওয়াও সমস্যা। তা ছাড়া যে সমস্ত ট্রাকের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স হয়ে গিয়েছিল, তারাও আর ফিরে যেতে পারছিল না। ফলে ডামাডোলের মধ্যে একের পর এক পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক সীমান্তে দাঁড়িয়ে পড়ে। সূত্র জানাচ্ছে, দুই সীমান্ত মিলিয়ে পাঁচশোরও বেশি ট্রাক পেঁয়াজ বোঝাই হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কোঅর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এলসি এবং শিপিং কেটে রাখা ট্রাক গুলিকে বাংলাদেশে যেতে না দিলে রপ্তানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তেন।'' বস্তুত, রপ্তানিকারকদের চাপে গত শনিবার শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করে। শুধুমাত্র মহদিপুর সীমান্ত থেকে ২০০ টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। পেট্রাপোল সীমান্তেও কিছু ট্রাক ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মোট পেঁয়াজের সংখ্যা প্রায় ৫০০ টন মতো।

কিন্তু মুশকিল হলো, গত এক সপ্তাহ ধরে ট্রাক বোঝাই পেঁয়াজে পচন ধরতে শুরু করেছে। এত সপ্তাহ পরে বাংলাদেশে যে পেঁয়াজ গিয়েছে, তার বেশ খানিকটা পচে গিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন। বস্তুত সীমান্তে আটকে থাকা অনেক ট্রাকই ফের ঘুরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা ক্ষতি স্বীকার করেই ট্রাক ঘুরিয়ে নিচ্ছেন কারণ, এই মুহূর্তে ওই পেঁয়াজ কোল্ড স্টোরে না পাঠালে ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। তাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

প্রশ্ন উঠেছে, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার আগে যে পেঁয়াজ সীমান্তে পৌঁছে গিয়েছিল বা চালান কাটা হয়ে গিয়েছিল, কার নির্দেশে সেই পেঁয়াজ এত দিন আটকে রাখা হলো? কেন ট্রাকেই নষ্ট হলো পেঁয়াজ? বিএসএফ, কাস্টমস কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই ধরনের সিদ্ধান্ত যখন হঠাৎ করে ঘোষণা করা হয়, তখন সীমান্তের আধিকারিকরা সমস্যায় পড়েন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এ বারও তাই হয়েছে। পুরনো নিয়ম এবং নতুন নিয়মের লাল ফিতের ফাঁসে আটকে পড়েছিল পেঁয়াজ।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো