সমুদ্রসীমা বিরোধ: ন্যায্যতার সমাধান
৮ জুলাই ২০১৪বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ রায় প্রকাশ করেন৷ জানান, ‘‘বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধপূর্ণ এলাকা ছিল প্রায় ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটার৷ এর মধ্যে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পেয়েছে বাংলাদেশ৷''
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এই রায়ের ফলে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্রগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে৷''
নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশি আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন বা পিসিএ) সোমবার এ রায় ঘোষণা করে৷ রায়ের কপি সোমবার দুপুরেই বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ কিন্তু আদালতের কার্যবিধি অনুযায়ী, রায়টি ৮ই জুলাই, মঙ্গলবারের আগে জনসমক্ষে প্রকাশ করার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা ছিল৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে রায় জানাবার পর বলেন, ‘‘রায় পর্যালোচনায় উভয়ের জন্য বিজয় নিশ্চিত হয়েছে৷ এ বিজয় বন্ধুত্বের বিজয়, বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ মানুষের বিজয়৷'' এছাড়া ভারত এই রায় মেনে নেয়ায় ভারতকে ধন্যবাদও জানান তিনি৷
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইমামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত ন্যায্যতার সঙ্গে বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি করেছে৷ এতে উভয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷''
তিনি একে ‘উইন উইন সিচুয়েশন' বলে ব্যখ্যা করেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের দাবি করা মোট ১,১১,৬৩১ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমার মধ্যে ভারতের দাবি ছিল ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটারের৷ আদালতের রায়ে ভারতের দাবিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ কারণ তারা ৬,১৩৫ বর্গ কিলোমিটারের অধিকার পেয়েছে৷''
ইমামুল হক মনে করেন, এই রায়ের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের আরো উন্নয়ন ঘটবে৷ কারণ ন্যায্যতার ভিত্তিতে একটি বিরোধের সমাধান হলো৷ আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে দুই প্রতিবেশী স্থলসীমাসহ আরো অনেক বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারবে বলেও তিনি আশা করেন৷
নেদারল্যান্ডসের হেগে স্থায়ী সালিশি আদালতে ২০১৩ সালের ৯ থেকে ১৮ই ডিসেম্বর সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পক্ষে বাংলাদেশ ও ভারত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে৷
উল্লেখ্য, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে ২০০৯ সালের ৮ই অক্টোবর সালিশি আদালতে যায় বাংলাদেশ৷ ২০১২ সালের ১৫ই মার্চ মিয়ানমারের সঙ্গে মামলায় বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয় আদালত৷