1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-পাকিস্তানে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে, ইটালিতে মৃত্যুমিছিল

১৮ মার্চ ২০২০

ভারত এবং পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ইউরোপে আগামী সপ্তাহে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা। বাতিল ফ্রেঞ্চ ওপেন।

https://p.dw.com/p/3Zc81
ছবি: DW/S. Dick

মৃত্যু মিছিল অব্যাহত ইটালিতে। করোনা ভাইরাসের দাপটে গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৩৪৫ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে আড়াই হাজার। মোট আক্রান্ত ৩১ হাজার ৫০৬ জন। অন্য দিকে অ্যামেরিকায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ১০০। মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, দেশের প্রতিটি প্রদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে গিয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা ইরানেও। ভারত এবং পাকিস্তানে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১২০ জন। বুধবার সেই সংখ্যাটাই ১৪৭ এ পৌঁছে গিয়েছে। মৃত ৩। সরকারি হিসেবে পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত ২১৩। তারই মধ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমী দেশগুলির মতো পাকিস্তানে গোটা শহর লক ডাউন করে দেওয়া সম্ভব নয়।

করোনা নিয়ে দুই দেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর উত্তপ্ত হয়ে থাকল গোটা বিশ্ব। এক দিকে অ্যামেরিকার রাষ্ট্রপতি ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাসকে বললেন 'চীনা ভাইরাস'। অন্য দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার মতো পাকিস্তানে শহর ধরে ধরে লক ডাউন করা সম্ভব নয়। ইমরানের মন্তব্য, ''মানুষকে করোনা থেকে বাঁচাতে গিয়ে অভুক্ত রেখে মেরে ফেলা যায় না।'' পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে বিশ্ব জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে ভারতেও অনেকেই ইমরানকে সমর্থন করছেন। অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তাঁরা দিন আনেন, দিন খান। লক ডাউন করে সব বন্ধ করে দিলে দরিদ্র মানুষ খাবেন কী? ভারত, পাকিস্তানে এখনই সাধারণ মানুষের ভয়াবহ অবস্থা। স্কুল, কলেজ, ক্লাব, রেস্তোরাঁ বন্ধ হওয়ার কারণে বহু অস্থায়ী কর্মীর রুটি রুজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ লক ডাউন হয়ে গেলে কাজ হারাবেন আরও বহু মানুষ। এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, আফগানিস্তানে আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ৩৭ জন আক্রান্ত পালিয়ে গিয়েছেন। অর্থের অভাবেই তাঁরা এ কাজ করেছেন বলে সূত্র জানাচ্ছে।

অন্য দিকে ট্রাম্প একাধিকবার করোনা ভাইরাসকে চীনা ভাইরাস বলায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা শুরু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের উহান থেকে হলেও তার সঙ্গে একমাত্র চীনকে জড়িয়ে ফেলা ঠিক নয়। পৃথিবীর যে কোনও জায়গাতেই এর প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারত। শুধু তাই নয়, এ ধরনের মন্তব্য করলে বিভাজন তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ফলে সকলকেই এ ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। যদিও ট্রাম্প সে কথা শুনবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করছেন কূটনীতিবিদরা।

এ দিকে ভারত থেকে ইরানে যাওয়া ২৫০ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ মিলেছে। তাঁরা সকলেই কয়েক মাস আগে একটি অনুষ্ঠানে ইরানে গিয়ে আটকে পড়েছেন। আটকে পড়া সেই ভারতীয়দের অবস্থা দেখতে কিছু দিন আগে ভারতের পুণে থেকে একটি চিকিৎসক দলকে পাঠানো হয়েছিল ইরানে। তাঁদের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ২৫০ জন সংক্রমিত। কিন্তু সেই আক্রান্তদের দেশে ফেরানো হবে কি না, তা নিয়ে এখনও নির্দিষ্ট কিছু জানায়নি সরকার। আক্রান্তদের পরিবারের অভিযোগ, সরকার আগেই ওই ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনলে এ ভাবে সংক্রমণ ছড়াতো না। শুধু তাই নয়, গোটা দেশ জুড়ে আরও একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, করোনা পরীক্ষা করার মতো যথেষ্ট পরিকাঠামো তৈরি নেই। অন্য দিকে, তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন দাবি করেছেন, সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় অধিকাংশ রাজনীতিবিদই ষাটোর্ধ্ব। তাঁদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আপাতত বন্ধ রাখা হোক সংসদ।

ইউরোপে ইটালি, ফ্রান্স এবং স্পেনের পাশাপাশি জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। স্পেনে ১১ হাজার মানুষ এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ফ্রান্স আপাতত বাতিল করেছে টেনিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট, ফ্রেঞ্চ ওপেন। যুক্তরাজ্যে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। আক্রান্ত প্রায় দুই হাজার। আরব বিশ্বেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। লক ডাউনের পরেও সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনার কারণে মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ৫০০ জনের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৭৬। তবে এর মধ্যে ৮০ হাজার মানুষ এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)