1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে সেনাদের নিয়ে রাজনীতি না করার নির্দেশ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১১ মার্চ ২০১৯

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হামলা-পালটা হামলার পরই শুরু হয়ে গিয়েছিল নিহত সৈনিকদের ছবি দিয়ে রাজনৈতিক প্রচার৷ নিষেধ করলো ভারতের নির্বাচন কমিশন৷

https://p.dw.com/p/3EmUG
Indien Anhänger der Bharatiya Janata Party in Neu Delhi | Abhinandan Varthaman, Luftwaffe & Narendra Modi
ছবি: Reuters/A. Fadnavis

 জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জৈশ-এ-মোহাম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর আত্মঘাতী আক্রমণে সিআরপিএফ বাহিনীর ৪০ জওয়ানের মারা যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল ‘‌শহিস্মরণে'‌ রাজনৈতিক তৎপরতা৷ দেশের একাধিক জায়গায় নিহত জওয়ানদের ছবি দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পাশাপাশি সেই ছবির প্রেক্ষাপটে নেতাদের ছবি দিয়েও শুরু হয়েছিল ভোটের প্রচার৷ কেন্দ্র সরকারে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির উৎসাহ ছিল এ ব্যাপারে বেশি৷ বিশেষত পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার বদলায় সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা করে আসার গোটা ব্যাপারটাকেই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের দক্ষতা এবং সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে৷

সামনেই লোকসভা ভোট৷ ফলে এমন প্রচেষ্টা আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়৷ কিন্তু সেনাবাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে কাজ করে, রাজনৈতিক নেতারা সেই কৃতিত্বের ভাগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রচারের ঝোঁকে সেনাকর্মীদের সাহসের থেকেও বড় হয়ে উঠছে প্রশাসকের বিচক্ষণতা, এটা সেনাবাহিনীর পছন্দ হয়নি৷

অথচ এমনটা যে করা যায় না, ভোটের প্রচারে সেনাকর্তাদের ছবি যে ব্যবহার করা উচিত নয়, ২০১৩ সালেই এক নির্দেশিকায় সেকথা স্পষ্ট জানিয়েছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষের পরই সে নির্দেশ ভুলে প্রচারে মেতে ওঠেন রাজনৈতিক নেতারা৷ বিষয়টি তুঙ্গে ওঠে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিনন্দন বার্তামান পাকিস্তানে বন্দি হওয়ার পর ও দেশে ফিরে আসার পর৷

যদিও পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের সঙ্গে আকাশযুদ্ধে পরাভূত অভিনন্দনের বিমান পাকিস্তানের এলাকায় ভেঙে পড়ে এবং তিনি বন্দি হন৷ তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পেছনে ভারত সরকারের দাবি ছাড়াও সক্রিয় ছিল আমেরিকার কূটনৈতিক চাপ এবং পাকিস্তানের নমনীয়তা৷ পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশের সংসদের অধিবেশনে এবং সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, যে সৌজন্যমূলক আচরণ হিসেবেই বন্দি বৈমানিককে মুক্তি দিচ্ছে পাকিস্তান৷ কিন্তু সেই দ্বিপাক্ষিক সৌজন্যের মূল গুরুত্বকে কার্যত অস্বীকার করে, অভিনন্দন বার্তামান দেশে ফিরে আসার পরই শুরু হয়ে যায় প্রচার,  যে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর বিজেপি সরকারেরই কৃতিত্ব যে ভারতীয় বৈমানিককে মুক্তি দিতে পাকিস্তান বাধ্য হলো৷ রাজধানী দিল্লি ছেয়ে যায় এমন হোর্ডিংয়ে, যেখানে উইং কম্যান্ডার অভিনন্দনের পাশে প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ-র ছবি!

‌অবশ্য এমন নয় যে একমাত্র বিজেপিই এই ঘটনার রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছে৷ দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির প্রচারেও দেখা গেছে অভিনন্দনের ছবি৷ কলকাতা শহরে পুলওয়ামা হামলার পরই দু'‌হাত পরপরই দেখা গেছে নিহত সেনাদের স্মরণে শহিদ বেদি, যা বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নিতেই, অর্থাৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অনেকেই সন্দেহ করেছেন৷

যদিও পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ আনেন, সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে মোদী সরকার৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন৷ আপত্তি জানাতে শুরু করেন সাংবাদিকদের একাংশ৷

বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব একের পর এক টুইটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হোর্ডিংয়ের ছবি নির্বাচন কমিশনের নজরে আনতে শুরু করেন, যেখানে সেনাকর্মীদের ছবির অপব্যবহার হয়েছে৷ প্রশ্ন তোলেন, এভাবে সেনাকর্মীদের ছবি রাজনৈতিক দলের পোস্টার, ফেস্টুনে ব্যবহার করা যায় কিনা৷

ভারতের সাবেক নৌসেনা প্রধানও এ ব্যাপারে সেনাকর্মীদের তরফ থেকে জোরদার আপত্তি জানান৷ সমাজের নানা অংশ থেকে ক্রমশ জোরাল হয় বিরোধিতা৷ এই সমবেত প্রতিবাদের মুখে শনিবার ভারতীয় নির্বাচন কমিশন আবারও জানিয়ে দিল, সেনাকর্তাদের, বা নিহত সেনানীদের ছবি দিয়ে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নয়৷ ভোটের প্রচারে কোনোভাবেই সেনাবাহিনীর উল্লেখ করা যাবে না৷ কারণ, ‘‘‌আধুনিক গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সেনাবাহিনী একটি অরাজনৈতিক এবং নিরপেক্ষ অস্তিত্ব৷'' এই নির্দেশের কপি শনিবারই, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে দেশের সবকটি রাজনৈতিক দলকে পাঠিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷

আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার, যেটা সবাই গ্রহণ করতে পারছে, হয়ত বিজেপি ছাড়া, যে জঙ্গি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চাই: সুজন চক্রবর্তী

ভারতে বামপন্থিরা গোড়া থেকেই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের প্রতিবাদ করে আসছে৷ এ ব্যাপারে সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‌‘‌আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার, যেটা আস্তে আস্তে বাকি সবাই গ্রহণ করতে পারছে, হয়ত বিজেপি ছাড়া, (‌যে)‌ জঙ্গি বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চাই৷ দেশকে এক করেই সে লড়াই করতে হবে৷ জঙ্গি ঘাঁটিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, কোনোমতেই যাবে না - এটা যতটা সত্য, ততটাই সত্য জওয়ানদের ছবি ব্যবহার করে, অথবা মৃতদেহ ব্যবহার করে, অথবা ঘটনা ব্যবহার করে ভোটের রাজনীতি করার বিজেপিসহ বিভিন্ন দলের যে প্রয়াস, তাকে সমূলে বিনাশ করতে হবে৷'‌'

‌কিন্তু সমস্যা হলো, সব রাজনৈতিক প্রচার প্রকাশ্যে হচ্ছে না৷ জওয়ানদের ছবি দিয়ে, পাকিস্তানে তথাকথিত সার্জিকাল স্ট্রাইক এবং সরকারের বাহাদুরি নিয়ে প্রচার হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়, বিশেষত হোয়াটসঅ্যাপের মতো একের সঙ্গে এক সংযোগ মারফত৷ সেই প্রচার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অমান্য করলেও, তা আটকাবার কোনো উপায় থাকছে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য