1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের বিপক্ষে আক্ষেপ দূর করা স্মরণীয় জয়

সামীউর রহমান ঢাকা
৪ ডিসেম্বর ২০২২

মেহেদি হাসান মিরাজ আর মুস্তাফিজুর রহমানের শেষ উইকেট জুটিতে ভর করে ভারতকে ১ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/4KSEG
মিরাজের ৩৯ বলে ৩৮ (অপরাজিত) রানের ইনিংসে ছিল চারটি বাউন্ডারি আর দুইটি ছক্কা
মিরাজের ৩৯ বলে ৩৮ (অপরাজিত) রানের ইনিংসে ছিল চারটি বাউন্ডারি আর দুইটি ছক্কাছবি: Surjeet Yadav/AP/picture alliance

বেঙ্গালুরু, কলম্বো, দুবাই, অ্যাডিলেড। বাংলাদেশের ক্রিকেটের একেকটা দুঃখের বন্দর। ভারতের বিপক্ষে তীরে এসে তরীগুলো ডুবেছিল তো এই ভেন্যুগুলোতেই। টি-২০ বিশ্বকাপ, নিদাহাস ট্রফি, এশিয়া কাপ; আসরের নাম বদলালেও হারের ধরন বদলায়নি। তবে গত ছয় বছরে ভারতের কাছে এই চারটা ম্যাচে হার যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের একেকটা ক্ষত, যেগুলো শুকিয়ে গেলেও মুছে যায়নি।

মেহেদি হাসান মিরাজ আর মুস্তাফিজুর রহমান মিলে হৃদয় ভাঙা হারের বৃত্তটা ভাঙলেন। ঢাকায়, মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটায় ভারতকে এক উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ উইকেট জুটিতে ৫১ রান যোগ করে মিরাজ ও মুস্তাফিজ বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন অবিস্মরণীয় এক জয়, যে জয়ে অ্যাডিলেডে টি-২০ বিশ্বকাপে ৫ রানের হারের জ্বালাটা খানিকটা হলেও হয়তো মিটবে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ৫ রানে হেরে যাওয়া ম্যাচটাকে ঘিরে অপ্রস্তুত মাঠ, আইসিসির ষড়যন্ত্র, বিরাট কোহলির ফেইক ফিল্ডিংয়ে ৫ রান না পাওয়ার অভিযোগ সহ কত কিছু! 

দেশের মাটিতে, চেনা আঙিনায়, তিন দেশি আম্পায়ার থাকার পরও যখন ১৮৭ রান তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ মুখ থুবড়ে যায়, তখন সব অভিযোগই নিষ্ফল আস্ফালন মনে হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মুশফিকুর রহিম, আনামুল হক আর মাহমুদউল্লাহরা দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের উদাহরণ গড়ে বিদায় নেন। অথচ দারুণ বোলিংয়ে আর ফিল্ডিংয়ে ভারতকে অল্পতেই বেঁধে ফেলেছিল বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসান কেরিয়ারে চতুর্থবারের মতো ওয়ানডেতে নিলেন পাঁচ উইকেট, আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বাইরে গিয়ে বড় দলের বিপক্ষে এবারই ওয়ানডেতে সাকিবের প্রথম 'ফাইফার'। এবাদত হোসেন জীবনের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেই নিলেন চার উইকেট। আর শুরুটা হয়েছিল মিরাজকে দিয়ে, শিখর ধাওয়ান তার বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়েই তো বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে।

লোকেশ রাহুলের ৭০ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে ভর করে ৪১.২ ওভারে ১৮৬ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। যে রানটাকে মনে হচ্ছিল মামুলি সংগ্রহ, সেটাই কঠিন বানিয়ে ফেললেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

ভারতীয় দলে নিয়মিত পেসার যশপ্রীত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ সামি-কেউই নেই। এমনকি হার্দিক পাণ্ডিয়া, যুজবেন্দ্র চাহালও নেই। দীপক চাহার, শার্দুল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ আর অভিষিক্ত কুলদীপ সিংকে নিয়ে গড়া দ্বিতীয় সারির বোলিং ভারতের, স্পিনার শুধু ওয়াশিংটন সুন্দর আর শাহবাজ আহমেদ।

কিন্তু শুরুতেই ঝটকা দিল ভারত। দীপক চাহারের করা ইনিংসের প্রথম বলেই নাজমুল হোসেন শান্ত খোঁচা মেরে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পিছনে। এনামুল হক বিজয় অনেকক্ষণ ক্রিজে থেকেও সেট হতে পারলেন না,২৯ বলে ১৪ রান করে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজের প্রথম শিকার হয়ে।

সাকিব আর লিটনের ব্যাটে ভরসা পাচ্ছিল বাংলাদেশ,দুজনের ৬১ বলে ৪৮ রান আসে তৃতীয় উইকেট জুটিতে। কোহলি নিজে লিটনের দারুণ ক্যাচে আউট হয়েছিলেন, নিজেও দারুন ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়েছেন সাকিবকে। লিটন নিজেও উইকেট বিলিয়েছেন, ব্যক্তিগত ৪১ রানে ওয়াশিংটন সুন্দরের লেগ মিডলের নিরীহ দর্শন বলে অফসাইডে সরে এসে গ্লান্স করতে চেয়েছিলেন। ব্যাটে বলে সংযোগ হলেও জোরাল হয়নি, উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল বলটা তালুবন্দী করতে ভুল করেননি।

একজন টি-টোয়েন্টি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন, আরেকজন বাদ পড়েও জেদ চেপে ফেরার লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন। মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ, দুজনেই অনেকটা সময় পর ফিরলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। দুজনের অভিজ্ঞতা আর সামর্থ্য দুটোই আছে এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ জেতানোর। কিন্তু তারা দুজনেও যেন ফিরিয়ে আনলেন বেঙ্গালুরুর সেই স্মৃতি। শার্দুল ঠাকুরের করা বাংলাদেশের ইনিংসের ৩৫তম ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোর উইকেট হলেন মাহমুদউল্লাহ, বাঁচতে পারলেন না রিভিউ নিয়েও। পরের ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ সিরাজ ভেঙ্গে দেন মুশফিকের স্টাম্প। এই জোড়া উইকেট পতনের ঢেউ আর থামেনি। একে একে আফিফ হোসেন, এবাদত, হাসান মাহমুদ সবাই যোগ দেন বিদায়ের মিছিলে। ৩ উইকেটে ৯৫ রান থেকে ৪১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে হারের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

ভারতের বিপক্ষে অতীতে অন্তত চারটি ম্যাচে এরচেয়ে ভাল অবস্থা থেকেও লক্ষ্যের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হেরে যাবার নজির আছে বাংলাদেশের। তাই শেষ জুটিতে মেহেদি মিরাজ আর মুস্তাফিজের জুটি যে ৫১ রান তুলে ম্যাচ জেতাবেন, সেই বিশ্বাসটা খুব সম্ভবত এই দুজন ছাড়া আর কারোরই ছিল না। ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তো মিরাজ বলেই ফেললেন, 'অনেকে আমাকে এখন পাগল ভাবতে পারেন তবে আমার মধ্যে শুরু থেকেই বিশ্বাসটা ছিল যে ম্যাচটা আমরা জিতব। এমন একটা ম্যাচ জেতা আমাদের জন্য দরকার ছিল। আমরা বার বার হারছিলাম। একদম শেষে গিয়ে আমরা অনেক ম্যাচ হেরেছি। কিন্তু আজকে আমরা ম্যাচটা জিততে পেরেছি এজন্য খুবই ভালো লাগছে'।

মিরাজ আরও বললেন, শেষ উইকেটে বন্ধু মুস্তাফিজই তাকে জুগিয়েছে আস্থা। তার কথায়, ''মুস্তাফিজ আমার খুব ভালো বন্ধু এবং ও খুব ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। একটা জিনিস আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে যে ও খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল। ও আমাকে একটা কথা বার বার বলছিল আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। যদি গায়ের ওপর বল লাগে সমস্যা নেই কিন্তু আউট হব না। ওর এই বিশ্বাস দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে এবং আমার আত্মবিশ্বাসটা বেড়েছে ওর আত্মবিশ্বাস দেখে।'

দুজনের সাহস, বিশ্বাস আর একটুখানি ভাগ্যের ছোঁয়া; এই তিনেই ভারতের বিপক্ষে এক উইকেটের জয়। দীপক চাহারের বলে কভারে ঠেলে দিয়েই ছুটেছিলেন মিরাজ, সেই দৌড় থেমেছে সতীর্থদের আলিঙ্গনে। ৪৬ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৭ রান তুলে ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। একাধিকবার ভারতের বিরুদ্ধে জয় পেতে পেতেও হেরে গিয়েছে তারা। এবার সেই দুঃখের বৃত্ত ভাঙলেন মিরাজরা।