1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের নগরাঞ্চলে কবরের স্থান সঙ্কট

১৫ জুন ২০১০

৩১ লাখ বর্গ কিলোমিটারের দেশ ভারতে কবরের স্থান নিয়ে সমস্যায় পড়েছে প্রায় দুই কোটি মুসলিম ও খ্রিষ্টান৷ বড় নগরীগুলোতে এ সঙ্কট বেশ কিছুদিন ধরে চলছে, এখন তা দেখা যাচ্ছে ছোট শহরগুলোতেও৷

https://p.dw.com/p/NrPP
ফাইল ফটোছবি: AP

ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু৷ কবরের স্থান নিয়ে সমস্যা তাদের নেই৷ কেননা মৃত্যুর পর তাদের দাহ করা হয়৷ তবে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের আচার ভিন্ন৷ তাদের দেওয়া হয় কবর৷

প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে৷ ফলে আগের যে কবরস্থানগুলো ছিলো, তাতে আর স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না৷ আর তাতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি৷ তেমনই সমস্যায় পড়েছিলেন রাজধানী নয়াদিল্লীর উপকণ্ঠের নয়ডা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আরিফ৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে আমার ভাগ্নে দুর্ঘটনায় মারা যায়৷ তখন তাকে কবর দেওয়ার মতো জায়গা পেতে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়েছিলো৷'' এ সমস্যায় যেন ফের পড়তে না হয়, সে জন্য আরিফরা সব ভাই মিলে কবরের জন্য একটি জায়গা কিনে রেখেছেন৷

সর্বভারতীয় ইমাম সমিতির চেয়ারম্যান উমর আহমেদ ইলিয়াসি বলেন, কবরস্থানগুলোতে যান, দেখবেন কোথাও জায়গা খালি নেই৷ এ সমস্যা আগে দিল্লি, মুম্বই ও কলকাতায় ছিলো৷ এখন অন্য শহরগুলোতেও৷ ইলিয়াসির অভিযোগ, এই সমস্যা সমাধানে সরকারের মনোযোগ নেই৷

মুসলমানদের জন্য সরকারের দেওয়া ওয়াকফ সম্পত্তিতে এক সময় গড়ে উঠেছিলো বেশ কিছু কবরস্থান৷ তবে সে সম্পত্তির অধিকাংশই এখন অন্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ মুসলিমদের৷ লোকসভার ওয়াকফ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য রেহমান খান বললেন, ‘‘সরকারি ভবন, স্কুল, হোটেল- কী নেই ওয়াকফ সম্পত্তিতে? অনেক জায়গায় বস্তিও গড়ে উঠেছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে নতুন জমি চাই না, বরং আগের জমিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷ যাতে আমরা কিছু কবরস্থান তৈরি করতে পারি৷''

সাধারণত একটি কবরে একজনকে সমাহিত করা হলেও স্থান সঙ্কটের কারণে এতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়৷ তারা এক কবরে একাধিক জনকে এখন সমাহিত করছে৷ তেমনই একজন প্রিয়াংকা টমাস৷ দিল্লীতে বসবাসরত এই নারী কিছুদিন আগে স্বামী হারিয়েছেন৷ প্রিয়াংকার শ্বশুরকে যেখানে কবর দেওয়া হয়েছিলো, সে কবরেই সমাহিত করা হয় তার স্বামীকে৷ প্রিয়াংকা বলেন, আমাকে এবং পরে হয়তো আমার সন্তানদেরও এই কবরেই মাটি দেওয়া হবে৷

সরকারের কাছে কবরের জন্য জমি না পাওয়ার অভিযোগের কথা জানালেন বিহারের ক্যাথিলক চার্চের যাজক ভিনসেন্ট ফ্রান্সিসও৷ পাটনার চার্চ কবরের জন্য জমি কিনতে ইতোমধ্যে সবাইকে ৬০ হাজার টাকা দান করতে বলেছে৷

কবরস্থান সমস্যার দিকে মনোযোগ দিতে নগর পরিকল্পনাবিদরাও সরকারকে বলছেন৷ দিল্লীর অধ্যাপক শোভা দয়াল বলেন, এখন নতুন নতুন স্যাটেলাইট শহর গড়ে উঠছে৷ সেখানে স্কুল থেকে শুরু করে সুইমিং পুল-গলফ কোর্ট পর্যন্ত থাকে৷ কিন্তু কোনো কবরস্থান থাকে না৷

সংখ্যালঘুদের কবরস্থানের এই সঙ্কট যে নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে, তেমন আশঙ্কার কথা জানালেন নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা৷ তবে তিনি মনে করছেন, এই সমস্যার সমাধান স্থানীয় পর্যায়েই সম্ভব৷ আর তাই করতে পরামর্শ দিলেন তিনি৷ যার মানে দাঁড়ায়, কেন্দ্রীয় সরকার এতে গা লাগাতে চাইছে না৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন