ভাটপাড়ায় ১৬ ঘণ্টায় দুই খুন, কেন অশান্ত শিল্পাঞ্চল?
ব্যবধান মাত্র ১৬ ঘণ্টা। তারমধ্যেই কলকাতার কাছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ভাটপাড়ায় দুইজন খুন হলেন। অর্জুন সিং বিজেপি-তে যাওয়ার পর অশান্ত ছিল ভাটপাড়া। নেতা তৃণমূলে ফিরেছেন। কিন্তু ভাটপাড়ায় অশান্তি কমেনি।
প্রথমে খুন সালাউদ্দিন
ভাটপাড়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ইমারতি ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন আনসারিকে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়। বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে বসে তাকে চা-সিগারেট খাওয়ানো হয়। তারপর দুষ্কৃতীরা তার মাথায় গুলি করে।
কে এই সালাউদ্দিন?
সালাউদ্দিন ৩৫ বছর বয়সি এক যুবক। তার ইমারতি ব্যবসা ছিল। কিছুদিন আগে তৃণমূলে ফেরা অর্জুন সিং শনিবার বলেছিলেন, পুলিশের খাতা নাম ছিল সালাউদ্দিনের। আর শাসক দলের আরেক দাপুটে নেতা ও বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের দাবি, সালাউদ্দিন তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিল। ছবিতে সালাউদ্দিনের বাড়ির এলাকা।
এলাকা থমথমে
সালাউদ্দিনকে যেখানে খুন করা হয়, সেই পুরো এলাকা থমথম করছে। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু এলাকায় ঘুরলেই চাপা উত্তেজনা টের পাওয়া যাচ্ছে।
রোহিত দাস খুন
১৮ বছর বয়সি রোহিত দাসকে তার বাড়ির দরজার সামনে খুন করা হয়েছে। ছবিতে রোহিত দাসের বাড়ি। দরজার সামনে পড়েছিল তার দেহ।
কী বলছেন রোহিতের বাবা?
রোহিত দাসের বাবা প্রদীপ দাস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''রাতে আমার ছেলে খেয়েদেয়ে কাজে যায়। রাত আড়াইটের সময় ওর চিৎকার শুনি। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছটফট করছে।'' প্রদীপ জানিয়েছেন, ''ছেলে বললো, করণ যাদব আমায় গুলি করেছে। ছেলের পেটে গুলি লেগেছিল। করণ কোনো কাজ করে না। মন্দিরে থাকে এবং নেশাভাঙ করে।'' প্রদীপ বলেছেন, ''আমার ছেলেও গাঁজা খেত।''
মায়ের বক্তব্য
রোহিতের মা রেখা দাস ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, তার ছেলে খুবই ভালো ছিল। এমন হবে, তা তিনি কখনো ভাবেননি।
মাসীর কথা
রোহিতের মাসী পার্বতী দাস ডয়েচে ভেলেকে জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত হওয়ার দরকার। তাহলেই সত্য জানা যাবে। এর পিছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র আছে।
দুই খুনে গ্রেপ্তার তিন
জগদ্দল থানার পুলিশ এই দুইটি খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু যে বিষয় নিয়ে পুলিশ কিছু বলছে না, তা হলো, দিনের বেলায় বাড়ির সামনে খুন হচ্ছে, রাতের বেলায় বাড়ির দরজার সামনে মানুষ খুন হচছে, তার অর্থ, ভাটপাড়ায় আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই? প্রশ্ন হলো, এত অস্ত্র কোথা থেকে আসছে?
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল
ব্যারাকপুর, ভাটপাড়া, কাকিনাড়া, জগদ্দলের মতো জায়গায় খুন, জখম, মারামারি, বোমাবাজি নিত্যদিনের ঘটনা। বগটুই-কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বেআইনি অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতার কাছে এই শিল্পাঞ্চলে বেআইনি অস্ত্রের রমরমা বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। প্রশ্ন হলো, কেন সেই অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করে না?
অল্পবয়সিদের হাতে
রোহিতকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করণের বয়স ১৮ বছর। সে পিস্তল থেকে গুলি করে বন্ধুকে মেরেছে বলে অভিয়োগ। সূত্র জানাচ্ছে, এই অঞ্চলে এক শ্রেণির যুবকদের হাতে ঢালাও বেআইনি অস্ত্র আছে। এত কম বয়সিদের হাতে এত অস্ত্র থাকাটা মারাত্মক ঘটনা।
অপরাধ ও রাজনীতি
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, অপরাধ ও রাজনীতি এখানে হাত ধরাধরি করে চলে। জিতেন্দ্র সিং যখন বিজেপি-তে চলে যান, তখন বোমাবাজি, মারামারি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। নেতা পুরনো দলে ফেরার পরেও গোলমাল শেষ হয়নি। এমনকী পুলিশও এদিন ডিডাব্লিউর চিত্রগ্রাহক প্রতিনিধিকে পরামর্শ দিয়েছে, ''বেশি সময় থাকার দরকার নেই। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে চলে যান। প্রবল উত্তেজনা আছে।''
চটকল কর্মী
রোহিত একটা চটকলে কাজ করত। রোহিতের বাবাও একটা চটকলে কাজ করেন। এই পুরো এলাকাতে একের পর এক চটকল আছে। কিন্তু তার অনেকগুলিই বন্ধ। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। তারও ফলেও অপরাধ বাড়ছে।