1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বয়সসীমা বাড়াতে নারাজ মোদী সরকার

গৌতম হোড়
১১ জুন ২০২১

করোনায় বছর নষ্ট হয়েছে। চাকরির পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। তাই দাবি উঠেছে বয়সসীমা বাড়ানো হোক। মানতে নারাজ মোদী সরকার।

https://p.dw.com/p/3um3j
West Bengal, India | Bus Service
ছবি: Payel Samanta/DW

দাবিটা এককথায় নাকচ করে দিয়েছেন মোদী সরকারের পার্সোনেল প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। জম্মুর এই বিজেপি নেতা গত মার্চে রাজ্যসভায় কোনোরকম রাখঢাক না করে একেবারে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, করোনার কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির বয়সসীমা দুই বছর বাড়াবার যে দাবি উঠেছে তা মানা হবে না। তার যুক্তি, ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন তাদের মতো করে চাকরির পরীক্ষা নিচ্ছে্। করোনাকালে যাবতীয় সতর্কতা বজায় রেখে তা নেয়া হচ্ছে। ২০২০ সালের সিভিল সার্ভিস প্রিলিমিনারির পরীক্ষা ৪ অক্টোবর নেয়া হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকার বয়সসীমা বাড়াবে না। রাজ্য সরকার বাড়াবে কিনা তা তাদের উপর নির্ভর করছে।

জিতেন্দ্র সিং ঠিকই বলেছেন, সিভিল সার্ভিস প্রিলিমিনারির পরীক্ষা ৪ অক্টোবর হয়েছে। মেইন-এর পরীক্ষাও জানুয়ারিতে হয়ে গেছে। কিন্তু তারপর ইন্টারভিউ নেয়া হয়নি বা বলা ভাল, নেয়া যায়নি। কারণ, করোনা। পরিস্থিতি ঠিক হলে তা অগাস্টে হতে পারে। বা আরো দেরি হতে পারে। তারপর যারা তাতে উতরে যাবেন, তারা প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন। পুরো প্রক্রিয়াটা প্রায় এক বছর দেরিতে চলছে।

আর কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি বলতে তো শুধু সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগে প্রচুর চাকরি খালি হয়। তার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। কর্মী নিয়োগ করা হয়। কিন্তু করোনা সবকিছুই থমকে দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষা হয়নি। হলেও সিভিল সার্ভিসের মতো তা শেষ হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তো ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের ধারণা, এরপর ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসবে। সেটাও সেপ্টেম্বর নাগাদ। যদি তাদের কথা মিলে যায়, তা হলে এবারও সরকারি চাকরির পরীক্ষা নেয়া কঠিন হবে। লোকসভা ও রাজ্যসভা সচিবালয়ের মতো অনেক জায়গাতেই গত এক বছরে কোনো চাকরির পরীক্ষা হয়নি।

করোনার জন্য এবার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার কাছে ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার প্রশ্নটি সর্বোত্তম। তাই পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে্। চাকরি প্রার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টাও তো একইরকমভাবে খুবই জরুরি হওয়ার কথা। এ তো আর এক দুই হাজার মানুষ নন, ভারত-জুড়ে লাখ লাখ মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসেন। এখনো ভারতে প্রতিদিন প্রায়. এক লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এক মাসের উপর লকডাউন থাকার পর দিল্লি গত সোমবার থেকে খুলেছে।

হাসপাতালে অক্সিজেন নেই বলে করোনা রোগী মারা যাচ্ছেন সেই স্মৃতি এখনো দেশের মানুষের কাছে টাটকা। করোনা কী করতে পারে, আর তার প্রকোপের কাছে দেশের স্বাস্থ্যপরিষেবা কীভাবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে তা দেশের মানুষ গত কয়েক মাস ধরে দেখেছেন। উত্তর প্রদেশে গঙ্গায় বালিতে মৃতদেহ পুঁতে দেয়া হয়েছে। নদীতে মৃতদেহ ভাসানো হয়েছে। ব্রিজের উপর থেকে কেরোনায় মৃতদের দেহ নদীতে ফেলার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। ফলে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে বলে হুড়মুড় করে আবার চাকরির পরীক্ষা হয়ে যাবে, নিয়োগ হয়ে যাবে, ভারতে তা মনে করাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।

ফলে পরিস্থিতিটা কী দাঁড়ালো? মন্ত্রী যাই বলুন না কেন, অনেক চাকরিপ্রার্থীই সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ হারাবেন। আর যদি তাদের বয়স হয়ে যায়, তাহলে তাদের সরকারি চাকরি পাওয়ার আশাও শেষ। করোনাকালে বেসরকারি চাকরির সীমানা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে চাকরি কমেছে। অনেক সংস্থায় বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যাপক হারে ছাঁটাই করা হয়েছে। করোনা কবে যাবে, বাজার কবে উঠবে, তারপর বেসরকারি ক্ষেত্রে আবার চাকরির সুযোগ বাড়বে, সেই অপেক্ষায় বসে থাকা তো সম্ভব নয়। তাই অনেক যুবক-যুবতীর ভরসা সরকারি চাকরি। ভারতে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের চাকরি। কিন্তু করোনায় মানুষের প্রাণ বাঁচাতেই রাজ্য সরকারগুলি ব্যস্ত। তার উপর রয়েছে সুরক্ষার প্রশ্ন। তাই দাবিটা উঠছে, অন্তত একবারের জন্য হলেও সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হোক।

সেন্ট্রাল বোর্ড অফ কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজের সাবেক চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার মনে করেন, যদি সিভিল সার্ভিস সহ কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির পরীক্ষা পিছিয়ে যায় বা না হয়, তা হলে সাময়িকভাবে বয়সসীমা বাড়ানো উচিত। তবে তা স্থায়ীভাবে নয়। করোনা পরিস্থিতির কথা ভেবে এই বছরের জন্য হতে পারে। না হলে অনেকে বঞ্চিত হতে পারেন। আর যদি পরীক্ষা না হয় বা পিছিয়ে গিয়ে থাকে তা হলে দুই বছরে যত পদে কর্মী নিয়োগ করার কথা, তা যেন একবারে নেয়া হয়। তা হলে সঠিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। চাকরিপ্রার্থীরাও বঞ্চিত হবেন না।    

দাবিটা বিভিন্ন জায়গা থেকেই উঠছে। মাস কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর দাবি তুলেছেন বিজেপি-র সাংসদ জগন্নাথ সরকার। কর্ণাটকে কংগ্রেস দাবি করেছে, সেই রাজ্যে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বয়স ৩৪ থেকে বাড়িয়ে ৪৪ করতে হবে। চাকরিপ্রার্থীরা দেশজুড়ে এই দাবি জানাচ্ছেন।

ভারতে আবার সমস্যা হলো, রাজ্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বয়সসীমা এক নয়। কোনো রাজ্যে তা ৩২, কোথাও ৩৫, কোথাও ৪০। সম্প্রতি ওড়িশায় মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের কাছে চাকরিপ্রার্থী যুবক-য়ুবতীরা আর্জি জানিয়েছিলেন, ওড়িশায় যেন সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হয়। ওড়িশায় সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩২ বছর। অন্য রাজ্যের উদাহরণ দিয়ে তারা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, অবিলম্বে তা বাড়ানো দরকার। তারপর আবার অনেক বছর সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ ছিল।

এটাও একটা যন্ত্রণা। এমনিতে সরকারি চাকরি পাওয়া লটারি পাওয়ার মতো। তার উপর সেখানেও চাকরির সুযোগ সমানে সংকুচিত হচ্ছে। কর্মীরা অবসর নিচ্ছেন। তার জায়গা পূরণ হচ্ছে না। একসময়  রেল এবং ডাক ও তার বিভাগে সব চেয়ে বেশি চাকরি পাওয়া যেতো। দুই জায়গাতেই কর্মী সংকোচন হয়েছে। ২০১৮ সালের হিসাব, প্িরায় সাত লাখ কেন্দ্রীয় সরকরি পদ খালি রয়েছে। কর্মী নেয়া হয়নি। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনার আঘাত। ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। তাই বয়সসীমার জন্য চাকরির পরীক্ষা দিতে না পারলে সেটা হাজার হাজার চাকরিপ্রর্থীর প্রতি ন্যায় করা হবে না। এই করোনাকালে। তাই এই দাবি এককথায় উড়িুয়ে না দিয়ে আরেকবার সহানুভূতির সঙ্গে ভেবে দেখতেই পারে মোদী সরকার।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য