ব্যাংকক: দুটি প্রতিবাদ আন্দোলনের গল্প
তিন বছর আগে রাজপথের আন্দোলনে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইংলাক সিনাওয়াত্রা৷ ব্যাংককের রাজপথ আবার বিক্ষোভে উত্তাল৷ এবার ইংলাকের অপসারণের দাবিতেই চলছে উত্তুঙ্গ আন্দোলন৷ ছবিঘরে থাকছে দুটি আন্দোলনের মিল-অমিল৷
‘দাস সেনা’ থেকে ‘সেলফি আর্মি’
শাসকের অত্যাচার ক্রীতদাসের মতো মেনে না নিয়ে থাইল্যান্ডের মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল ২০১০ সালে৷ প্রতিবাদের ভাষা প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে দিতে ব্যবহার করেছিলেন মুঠোফোন৷ ২০১৪ সালে ব্যাংকক আবার উত্তাল৷ ‘টেক স্যাভি’ তরুণ সমাজ এবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাজপথ থেকে তুলে দিচ্ছে ছবি৷এখানে ব্যাংককের এমবিকে শপিং সেন্টারের সামনে থেকে ছবি তুলে ফেসবুক-টুইটারে দেয়ায় ব্যস্ত ইংলাক-বিরোধী আন্দোলনকারীরা৷
বাড়ি যখন দূরে, বাড়ি যখন কাছে
২০১০ সালের আন্দোলনে দূর দূরান্তের গ্রাম থেকেও ইংলাকের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলে এসেছিলেন ব্যাংককে৷ লাল জামা পরে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক ‘লাল জামা পরিবার’৷ ফুটপাতে রাত কাটাতে হয়েছে তাঁদের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আগুনে গরমে৷ এবার একটু ভিন্ন৷ বেশিরভাগ আন্দোলনকারীই থাকেন ব্যাংকক বা ব্যাংককের আশেপাশে৷ রাতে তাঁরা ফিরে যেতে পারেন নিজের ঘরে, ২০১০ সালের মতো এমন দৃশ্য এখন তেমন একটা দেখা যায় না৷
আরেকটি অন্ধকার দিন?
বোমা বিস্ফোরণ কিংবা গুলি বর্ষণের ঘটনা সত্ত্বেও সব দলের সব নেতাই এবার সামরিক অভিযান কিংবা দোকান, বিপণিবিতান, থিয়েটার বা এটিএম বুথ পোড়ানো এবং লুটপাট রুখতে সদা তৎপর৷ ২০১০ সালের মতো এমন কিছু এখনও হয়নি৷ প্রশ্ন হলো, জনতার এমন আপাত ধৈর্যশীলতা কতদিন বজায় থাকবে?
দৃশ্যমান পরিবর্তন
২০১০ সালের আন্দোলনে ব্যাংককের রাজপথ যেন হয়ে উঠেছিল পল্লীমেলার উৎসব৷ এবার দেখা যাচ্ছে আধুনিক শহুরে জীবনের সংস্কৃতি, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার৷ ঝলমলে আলোকসজ্জা, রক সংগীতে থাইল্যান্ডের কিংবদন্তি ব়্যাং রকেস্ট্রা, কিংবা জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ফ্লাই’-এর নেড়ে-মাথা ভোকালের গান – কী নেই সেখানে! রাজপথের আন্দোলন, আন্দোলনকে ঘিরে জমে ওঠা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – সবই সরাসরি দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে৷
ধ্বংসের চিত্র
২০১০ সালের ছবি৷ তখন সামরিক অভিযান চলছে৷ অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক আন্দোলনকারী৷ এদিক-ওদিক থেকে আসছে স্নাইপারের গুলি, জেন শপিং সেন্টার পুড়ছে, ধোঁয়ায় ঢাকা চারপাশ – ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতেও অকুতোভয় এক আন্দোলনকারী হেঁটে চলেছেন৷ চার বছর পর তাঁর প্রতিপক্ষরাই নিয়েছেন রাজপথের দখল৷ লাল জামা সরকারের পতন চান তাঁরা৷
কৃষক বনাম সেলিব্রিটি
২০১০ সালের আন্দোলনে ব্যাংককের রাজপথ ছিল মূলত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা কৃষকদের দখলে৷ ইংলাকবিরোধী আন্দোলনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডিজে-রা৷ দেশ বরেণ্য অনেক সেলিব্রিটিই রাজপথে সময় কাটাচ্ছেন জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে, কিংবা নানাভাবে রাজা ভূমিপলের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ এবং ইংলাক সরকারের বিদায় কামনা করে৷
সরকার থেকে বিরোধী
ইংলাক সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রধান নেতা সুথেপ থাউংসুবান৷ চার বছর আগে তিনি ছিলেন ইংলাকের পাশে৷ ইংলাক সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন তিনি৷
যানচলাচল বন্ধ
একটি বিষয়ে দুটি আন্দোলনেই খুব মিল৷ ২০১০ সালের মতো এবারের আন্দোলনকারীরাও বিক্ষোভ জানাতে নেমে এসেছেন রাজপথে৷ ফলে ব্যাংককের বড় একটা অংশে যানচলাচল প্রায় বন্ধ৷ তবে এরই মাঝে ফুটপাতে দেখা যাচ্ছে জীবনের নানা রং৷ আন্দোলনকারীদের জন্য টি-শার্ট, টুপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্রের পশরা নিয়ে বসেছেন খুদে ব্যবসায়ীরা৷ আশোপাশের দোকানপাটও খোলা৷