1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি ও মজুতদারিতে নাভিশ্বাস

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩ অক্টোবর ২০২০

ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির জেরে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের৷ লকডাউনের মধ্যে একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হয়েছে৷ তার উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মজুতদারির ফলে দামও আকাশছোঁয়া৷

https://p.dw.com/p/3jNFD
Kalkutta Indien Lockdown
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

একদিকে করোনা সংক্রমণ ও তা রুখতে লকডাউন, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়সহ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ- এই দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণে বাজারে নানা সামগ্রীর দাম বেড়ে চলেছে৷ মার্চ মাসের শেষে লকডাউন শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষভাগ থেকে আলু, পেঁয়াজ, তেল, সবজিসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে৷ লকডাউনের ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে খাঁড়ার ঘায়ের মতো নেমে এসেছে মূল্যবৃদ্ধি৷

বাঙালির দৈনন্দিন খাবারের মধ্যে অপরিহার্য আলুর দাম কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ক্রমবর্ধমান৷ ২০ টাকা প্রতি কেজি থেকে বাড়তে বাড়তে তা এখন ৪০ ছুঁতে চলেছে৷ পেঁয়াজ ছুঁয়ে ফেলেছে ৫০-এর ঘর৷ গত বছর সেঞ্চুরি পার করেছিল পেঁয়াজ৷ কাঁচালঙ্কা কোনো কোনো বাজারে প্রতি কেজি ২০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষের নাগালে নেই প্রায় কোনো সবজিই৷ দাম বেড়েছে সরষের তেল থেকে ডিমের৷ একদিকে জিডিপি কমেছে, তার বিপরীতে খুচরো ও পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধি কঠিন করে তুলছে জীবনধারণ৷

অভিজিৎ নন্দী

কেন্দ্রের আর্থিক উপদেষ্টা কে সুব্রমনিয়মের মতে, লকডাউনের ফলে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় দাম বেড়েছে৷ লকডাউন শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমবে৷ যদিও পশ্চিমবঙ্গে অভিজ্ঞতা তা বলছে না৷ লকডাউনের সময় খুচরো বাজারে মূল্যসূচক যে জায়গায় ছিল, ধাপে ধাপে তা বাড়ছে আনলক পর্বেই৷ পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আমফান কয়েকটি জেলায় চাষবাসের ব্যাপক ক্ষতি করেছে৷ গড়ে ৩০ শতাংশ জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে৷ কিন্তু দাম যেখানে পৌঁছেছে, তা শুধু লকডাউন বা ঝড়জনিত ক্ষতির জন্য হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতির অধ্যাপক অভিজিৎ নন্দী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্যান্য শিল্পে উৎপাদন বন্ধ থাকায় লকডাউনের সময় গ্রামাঞ্চলে কৃষি মজুর সুলভে পাওয়া গিয়েছে৷ এর ফলে কৃষিপণ্যের উৎপাদনের খরচ কিছুটা কমই হওয়ার কথা৷ দাম বৃদ্ধির অন্য সব কারণ মাথায় রাখলেও চলতি দর অস্বাভাবিক৷’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে দাম বেড়েছে, তার ১০ শতাংশ মাত্র কৃষকের পকেটে আসছে৷ বাকিটা নিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা৷ জোগান ঠিকঠাক না থাকায় দাম বাড়ছে৷ বিভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত পণ্য যাতে না পৌঁছায় তার জন্য একটা অসাধু চেষ্টা চলছে৷’’ এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন রাজ্য টাস্কফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে৷ তাঁর বক্তব্য, নয়া কৃষি বিল মজুতদারিকে উৎসাহিত করেছে৷ এর ফলে দাম বাড়বেই৷ বাজারে নজরদারি চালালেও কোনো লাভ হবে না৷

গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়

আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিলেও লাভ কিছু হয়নি৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলে এই পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী বাজার খুলেছেন বামপন্থিরা৷ কলকাতার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে এই বাজার৷ সেখানে বাজারের থেকে অনেক কম দামে আনাজপত্র মিলছে৷ আরো কয়েকটি স্থানে চলতি সপ্তাহে শুরু হবে বাজার৷ নিমতায় এমন একটি বাজারের দায়িত্বে থাকা সিটু নেতা শিবশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা নিয়েছি৷ তাই বাজারের থেকে অনেকটাই কম দাম রাখা সম্ভব৷ বাজারে আলু ৪০ টাকা কেজি হলে আমাদের দাম ৩০ টাকার নীচে৷’’

অর্থাৎ, মধ্যস্বত্বভোগীদের লভ্যাংশ সরিয়ে নিলে অনেকটাই নাগালে চলে আসছে জিনিসপত্রের দাম৷ কিন্তু উৎপাদন ও বিক্রির মাঝখানে পণ্য কয়েকবার হাতবদলের এই প্রথাতেই চলে বাজার ব্যবস্থা৷ তাহলে এই অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি কোথায়? সিপিএম নেতা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শ্রমজীবী বাজার এক ধরনের স্বেচ্ছাসেবা৷ দলীয় কর্মীরা এই বেচাকেনায় লাভ করছেন না৷ এতে সাময়িক সুবিধা হবে ক্রেতার৷ কিন্তু এর পাকাপাকি সমাধান করতে হবে সরকারকেই৷ এখন কালোবাজারি একটা ব্যবসা হয়ে উঠেছে৷ সেটাকে আগে বন্ধ করতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান