‘বিশ্ব পানি দিবস’এ আশ্চর্যজনক তথ্য তুলে ধরলো আইএফআরসি
২২ মার্চ ২০১০সোমবার ‘বিশ্ব পানি দিবস' উপলক্ষে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত জল-বিষয়ক সম্মেলনে এই চরম সত্যটা তুলে ধরলো ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস' এবং ‘রেড ক্রেসেন্ট সোসাইটি' বা আইএফআরসি৷ সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের কর্মকর্তা জেন এডগার'এর কথায়, ‘‘এ অবস্থা পরিবর্তনের এটাই মোক্ষম সময়৷ কারণ, বিশুদ্ধ পানীয় জল, পরিচ্ছন্ন নিকাশি ব্যবস্থা এবং মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধার অধিকার মানুষের জন্ম, দেশ বা ভাগ্য নির্ভর হতে পারে না৷ এটা ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষের জন্মগত অধিকার৷''
মজার ব্যাপার, পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ জল হলেও, তার একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ মানুষের কাজে আসে৷ বিশ্বের নারী ও শিশুরা দৈনিক গড়ে ২০ কোটি ঘন্টা জলের খোঁজে ব্যয় করলেও, প্রতি ছয় জনের মধ্যে মাত্র একজন বিশুদ্ধ জল পান করতে পারে৷ তার ওপর, দূষিত পানির ব্যবহার মানবজাতির স্বাস্থ্যের জন্যও বিরাট এক হুমকিতে পরিণত হয়৷
আইএফআরসি জানায়, প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৩১ লাখ মানুষ দূষিত জল পান করার ফলে নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে৷ দুঃখের বিষয়, এদের প্রায় ৯০ শতাংশ ৫ বছরেরও কম বয়সের শিশু৷ প্রত্যেক ১৫ সেকেন্ডে একজন করে শিশু জলবাহিত রোগে মারা যায় বিশ্বে৷ শুধু তাই নয়, অস্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামীতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে বিশ্বে৷ যার ফলে, পানীয় জলের সংকট আরো তীব্রতর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
এদিকে, বর্তমানে বাংলাদেশেও চলছে তীব্র পানি সংকট৷ মহানগরীর ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় পানির চাহিদা প্রতিদিন গড়ে ২১০ কোটি লিটার৷ অথচ, ‘ওয়াসা' প্রতিদিন সরবরাহ করে মাত্র ১৮০ কোটি লিটার পানি৷ অর্থাৎ, চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩০ কোটি লিটার পানি কম পড়ে প্রতিদিন৷ এছাড়া, ঢাকা'র মাত্র ৫৫ শতাংশ আবাসিকের রয়েছে জল সরবরাহের সংযোগ৷ অন্যান্য ছোট-বড় শহরগুলির অবস্থা আরো খারাপ৷
স্বাভাবিকভাবেই, এহেন এক পরিস্থিতিতে প্রয়োজন আরো বেশি সতর্কতা, প্রয়োজন অবিলম্বে পরিস্থিতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা৷ তাই জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এদিন পানি সংক্রান্ত প্রায় তিনশটি আন্তর্জাতিক চুক্তিকে যথাযথ কাজে লাগানোর কথা বলেন৷ বলেন মূল্যবান ও সীমিত পানি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা৷
আশ্চর্যের বিষয়, ‘বিশ্ব পানি দিবস' বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারের কথা প্রতিবার মনে করিয়ে দিলেও, প্রতিবছরই তা উপস্থিত হয় নিরাপদ, বিশুদ্ধ পানির অভাব নিয়ে৷ উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে গৃহীত ১৯৩ নম্বর প্রস্তাবে ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২২ মার্চকে ‘বিশ্ব পানি দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ এর প্রধান লক্ষ্য, পানি সম্পদের বহুমুখী ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান ত্বরান্বিত করা, পানি সম্পদ সংরক্ষণ কাজ জোরদার করা এবং সচেতনতা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পানি সম্পদের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে জনগণের সচেতনতা বাড়ানো৷
তাই আমাদের সুপেয় জলের বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিৎ এখনই৷ বিশুদ্ধ জল ছাড়া সুস্থ থাকা যেমন দুরূহ৷ তেমনই, জীবনে সচলতার জন্যও জলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য৷ কথায় বলে না, জলের আরেক নাম যে জীবন !
প্রতিবেদক : দেবারতি গুহ
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক