বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা হারানোর ঝুঁকিতে যেসব নিদর্শন
বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান বা স্থাপনাগুলো নিজেদের জায়গা কতোটা দখল রাখতে পারছে তা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিটি। এর ফলে লাল তালিকাভুক্ত হয় কোনো কোনো স্থাপনা।
ভেনিস
দুই বছর আগেই ভেনিসকে বিশ্ব ঐতিহ্যের ঝুঁকির তালিকায় ফেলার আবেদন জানিয়েছিলেন শহরটির মেয়র। অতিরিক্ত পর্যটকের আনাগোনায় ঐতিহ্য হারাতে বসে ইটালির এ বন্দরনগরীটি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়। শহরটি তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে কিনা তা জানা যাবে চলতি মাসেই।
স্টোনহেঞ্জ
দক্ষিন ইংল্যান্ডের অবস্থিত পাথরের এই স্থাপনাটি ১৯৮৬ সালে ইউনেস্কো স্বীকৃত ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত। চার হাজার বছর আগের এ স্থাপনাটি দেখতে আসেন বহু পর্যটক। কিন্তু স্থাপনাটির পাশ দিয়ে নির্মিত এ৩০৩ নামের মহাসড়কটির কারনে লাল তালিকায় যুক্ত হতে পারে ঐতিহ্যবাহী এ স্থানটি।
লেক ওরিড
নয়নাভিরাম এ লেকটির বয়স কতো জানেন? গবেষকরা বলছেন, ১৩ লাখ ৬০ হাজার বছরের পুরোনো এটি। ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন এ লেকের অবস্থান উত্তর মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়ায়। কিন্তু অতিরিক্ত পর্যটকের আনাগোনা নষ্ট করছে ইতিহাসের সাক্ষী এ লেকটির ঐতিহ্য।
আউসভিৎজ-বেয়ারকানাও
পোলান্ডে অবস্থিত এ নাৎসি ক্যাম্পটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এগারো লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো এটিকে ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দিলেও লাল তালিকায় যুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে জায়গাটি।
কামচাটকা উপদ্বীপ
মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোহিত করা পূর্ব রাশিয়ার এই উপদ্বীপকে ২৫ বছর আগে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। নানা কারণে বর্তমানে লাল তালিকাভুক্তির ঝুঁকিতে আছে এটি। অবৈধভাবে মাছ ধরা, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস ইত্যাদি কারণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে আগ্নেয়গিরির দ্বীপ নামে বিখ্যাত জায়গাটি।
লামু টাউন
৭৫০ বছরের পুরোনো কেনিয়ার লামু টাউন বিশ বছর ধরে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, তেলের লাইন স্থাপন ইত্যাদি কারণে এটিও আছে ঝুঁকির তালিকায়।
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ
২৩শ কিলোমিটার জায়গা দখল করে থাকা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পেয়ে আসছে। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, গ্যাস উত্তোলন ও জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি নানা কারণে সেখানকার অর্ধেক প্রবাল ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই মর্যাদা হারানোর ঝুঁকিতে এছে এটিও।
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল
সুন্দবনের দশ হাজার কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে ইউনেস্কো। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারসহ নানা ধরনের বিরল প্রজাতির প্রাণীর এ আবাসটি নদী দূষণ, নির্বিচারে বন ধ্বংসসহ বিভিন্ন কারণে ঐতিহ্যের মুকুট হারানোর ঝুঁকিতে আছে। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কারণে বনের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ও বাংলাদেশকে সতর্ক করে ইউনেস্কো।
সেলোস বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র
আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র তানজানিয়ার সেলোস ১৯৮২ সালে তালিকাভুক্ত হয়। তবে অতিরিক্ত পর্যটন, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, বন্যপ্রাণী হত্যা, বিতর্কিত বাঁধ স্থাপনসহ নানা কারণে ইউনেস্কো ২০১৪ সালে ঐতিহ্যবাহী এ স্থানটিকে লাল তালিকাভুক্ত করে। আর এই মুহূর্তে তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় এ বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি।