‘বিশ্বের সংস্কৃতি’- এক যাদুঘরের নবরূপে আত্মপ্রকাশ
২৩ নভেম্বর ২০১০নতুন ভবনে যাদুঘরের ৬৫ হাজার নিদর্শন
নতুন ভবনে এসে নব সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে মিউজিয়ামটি৷ বিশ্বের নানা দেশের প্রাচীন সংস্কৃতির ৬৫ হাজার নিদর্শন এখন আলোর মুখ দেখতে পারবে৷ এতদিন ছোট এক বাড়িতে একটা অংশই কেবল প্রদর্শিত হতে পেরেছে৷ কোলনের বিপণি এলাকা নয়মার্কট' সংলগ্ন সংস্কৃতি ভবনে স্থান পেয়েছে লোকসংস্কৃতির মিউজিয়ামটি৷ একই ছাদের নীচে আরো তিনটি মিউজিয়ামও জায়গা পেয়েছে৷
প্রাচীন ঐতিহাসিক সামগ্রী ছাড়াও ছায়াছবি, তথ্যচিত্র, সংগীত এসবের মাধ্যমে নানা দেশের ও যুগের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি তুলে ধরা হবে৷ কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা কোথা থেকে এল তারও ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে৷ এ প্রসঙ্গে মিউজিয়ামের পরিচালক ক্লাউস শ্নাইডার বলেন, ‘‘এটা এমন এক বিষয়, যা বর্ণবাদ পর্যন্ত গড়ায়৷ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ না হলে যে কী হয়, উঠে আসবে সেটাও৷ আফ্রিকার মানুষদের দেখা যাবে কখনও বা বনেজঙ্গলে কখনও বা সেবকের ভূমিকায়৷ স্পষ্ট হয়ে উঠবে ঔপনিবেশিক শাসনামলের চিত্র৷ প্রাচীন কোন নিদর্শনে বা ছায়াছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে এসব৷''
নতুন সাজে সজ্জিত হতে চায় মিউজিয়ামটি
মিউজিয়ামটি এখন তার সাজে একটা অভিনবত্ব আনতে চায়৷ ২০০০ সামগ্রীকে অঞ্চল অনুযায়ী ভাগ না করে, বিষয়ের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে৷ প্রদর্শনীতে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশ্বের নানা অঞ্চলের সম্ভাষণের রীতিনীতি৷ গালে চুম্বন, অল্পনতজানু হওয়া কিংবা কাঁধে হালকা চাপড় দেয়া, এক এক সংস্কৃতিতে যে এক এক এক ধরনের সম্ভাষণের প্রথা চালু, তা তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে৷ তাই তো এই মিউজিয়াম এখন ‘বিশ্বের সংস্কৃতি' নামে পরিচিত হতে চায়৷ এ প্রসঙ্গে ক্লাউস শ্নাইডার বলেন, ‘‘ লোকসংস্কৃতির মিউজিয়াম- এই নামটা আমরা অনেক আগেই বদলাতে চেয়েছিলাম৷ কেননা মিউজিয়ামের বিষয় বস্তুর মধ্যেও আমরা একটা পরিবর্তন আনতে চেয়েছি৷ নতুন ভবন আমাদের এই সুযোগটা এনে দিয়েছে৷ এছাড়া ‘লোকসংস্কৃতি' কথাটায় যেন ঔপনিবেশিক শাসনামলের একটা নেতিবাচক গন্ধ পাওয়া যায়৷''
মৃত্যু ও বাসস্থান, সব বিষয়কেই তুলে ধরা হয়েছে
মিউজিয়ামের আরেক বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে মৃত্যু এবং পরপারের বিষয়টি৷ তুলে ধরা হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্যু ও শেষকৃত্যের বৈচিত্র্যময় প্রথা৷ যেমন বালিতে পুরোহিতদের মৃতদেহ একটি ষাঁড়ের আকৃতির সাদা কফিনে ঢোকানো হয়৷ তারপর তা রাস্তা দিয়ে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর তুলে দেয়া হয় আগুনে৷ বিদায় জানানো হয় দেহটিকে৷ বেঁচে থাক আত্মা৷ শব পোড়ানো ছাই ছড়িয়ে দেয়া হয় নদীতে৷ ধর্ম, ক্ষমতা, ঐশ্বর্য বা আচার আচরণ, এসবই এক এক সংস্কৃতিতে এক এক ভাবে দেখা হয়েছে৷ আর দর্শকরা সেটা উপভোগ করতে পারবেন এই মিউজিয়ামে৷ আরেক জায়গায় তুলে ধরা হয়েছে বাসস্থানের বৈচিত্র্য৷ দেখা যাবে ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত তুর্কি এক ব্যবসায়ীর অভ্যর্থনা কক্ষ৷ আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের তুয়ারেগ জাতির তাঁবুর পাশে স্থান পেয়েছে ক্যানাডার ব্ল্যাকফুট আদিবাসীদের আরেক ধরনের তাঁবু ‘টিপি'৷ এ প্রসঙ্গে ক্লাউস শ্নাইডার বলেন, ‘‘ মিউজিয়ামের আগের বাড়িটি ছোট থাকায় আমরা এতদিন টিপি প্রদর্শন করতে পারিনি৷ এখন সেটা সম্ভব হয়েছে৷ ব্ল্যাকফুট জাতিরা যেখানে বসবাস করেন, আমরা সেখানে গিয়ে লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের সাহায্যেই এই তাঁবু তৈরি করেছি৷ ব্ল্যাকফুটদের এক কর্তাব্যক্তি দুবার আমাদের এখানে এসে দেখেও গেছেন, জিনিসটা ঠিক হয়েছে কিনা৷ কোথাও খুঁত থাকলে, তাও ধরিয়ে দিয়েছেন৷''
মিউজিয়ামের নতুন ভবনটি নিয়ে বেশ হৈচৈ হয়েছিল৷ দুবার তো উদ্বোধনের দিনই পিছিয়ে দিতে হয়৷ খরচ পড়েছে দেড় কোটি ইউরোর মত৷ তবে এখন মনে হচ্ছে দেরি করে খোলাতে মিউজিয়ামটির তেমন ক্ষতি হয়নি, বরং লাভই হয়েছে৷ সবগুলি সামগ্রীই পুনর্বিন্যাস করা সম্ভব হয়েছে৷ কোথায় কোনটি খাপ খায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা গেছে৷ কোনো যাদুঘরের প্রদর্শনী একই সঙ্গে শিক্ষামূলক ও মনোরঞ্জক তা খুব কমই দেখা যায়৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক