1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শনিবার হাসিনা-মমতা বৈঠক

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৫ মে ২০১৮

শুক্রবার একই মঞ্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ বৈঠকেও সামিল তিনজন৷ তবু ‘‌হাসিনাদি’-র সঙ্গে কথা বলার আলাদা সময় বের করে নিলেন মমতা৷

https://p.dw.com/p/2yJIy
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

শুক্রবার দুই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনার বৈঠকে যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও থাকতে পারেন, থাকবেন, সেটা আগে থেকেই জানা ছিল৷ যেহেতু সেই বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে সরকারিভাবে কিছুই জানা যাচ্ছে না, সেহেতু কূটনৈতিক মহল জল্পনায় সরগরম৷রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা থেকে তিস্তার জলবণ্টন, যে কোনো প্রাসঙ্গিক বিষয়েই আলোচনা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল৷ নয়ত শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের দ্বারোদ্ঘাটনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আসছেন বলেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হাজির হচ্ছেন, এটা নিছক কূটনৈতিক সৌজন্য বলে ধরে নিতে সবারই বাধছিল৷ এবং সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও থাকবেন, এটা পরিস্থিতি আরও কৌতূহলজনক করে তুলেছিল৷ কিন্তু মাস্টার স্ট্রোক দিলেন মমতাই৷ বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতন পৌঁছেই সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিলেন, শনিবার তিনি ‘‌হাসিনাদি’-র সঙ্গে কলকাতায় একান্ত বৈঠক করবেন তিনি৷

সঙ্গে সঙ্গে শান্তিনিকেতনের শুক্রবারের অনুষ্ঠান থেকে নজর ঘুরে গেল শনিবারের কলকাতার দিকে৷ নতুন করে জল্পনা শুরু হলো, কী নিয়ে হবে এই আলোচনা?‌ তিস্তার জল?‌ কূটনৈতিক মহল সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে, কারণ সাম্প্রতিক অতীতেই মমতা-শেখ হাসিনা বৈঠক হয়েছে লন্ডনে৷ ঘরের সমস্যা নিয়ে নিভৃতে আলোচনা করার সেটাই সেরা সময় এবং জায়গা ছিল৷ তাহলে?‌ রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতি এনে দাঙ্গা করার একটা জোরাল অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে নির্বাচনি ক্ষয়-ক্ষতির হিসেব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও আবার জোরগলায় সেই অভিযোগ তুলেছিলেন৷ ধারণা, স্রেফ ধারণা, যে ঐ সীমান্তপার সমস্যা নিয়ে পড়শি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একান্তে নিজের উদ্বেগ জানাবেন মমতা, নিজের দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে যা জানানো সম্ভব ছিল না৷ তাই শেখ হাসিনার দু'‌দিনের এই ভারত সফর শেষ পর্যন্ত আর নিছক সাংস্কৃতিক সফর হিসেবে থাকল না৷

অবশ্য রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান, কিন্তু রাজনীতির ছোঁয়াচ শুরু থেকেই এড়ানো যায়নি৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী, তথা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদীর হাতে সময় কম, এই যুক্তিতে এবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানের চিরাচরিত সূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে৷ তার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো, এবার কাউকে ‘‌দেশিকোত্তম’ খেতাব দেওয়া হচ্ছে না৷ যার আসল কারণ, সম্ভাব্য প্রাপক হিসেবে যাঁদের নাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের অনেককেই বিজেপি-আরএসএস পছন্দ করে না৷ যেমন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক অমিতাভ ঘোষ, যিনি প্রকাশ্যেই মোদী সরকারের সমালোচনা করেছেন৷ বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরি, যিনি মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ এবং রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেস মনোনীত সাংসদ৷ বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, তিনিও মমতা-ঘনিষ্ঠ৷ এছাড়া নাম ছিল অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, বিজ্ঞানী অশোক সেন, লেখক সুনীতিকুমার পট্টনায়েক, গীতিকার গুলজারের৷ কিন্তু দেশিকোত্তম সম্মান দেওয়ার বিষয়টাই শেষ পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়৷

মোদী অবশ্য বিশ্বভারতীর ঐ অনুষ্ঠানে কবিগুরুকে সম্মান জানাতে ভোলেননি৷ ভোলেননি তাঁকে বিশ্বনাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও৷

তারপরও আরও একটি ঘটনায় বিশ্বভারতীর এবং বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতির তাল কাটে, যখন নরেন্দ্র মোদী মঞ্চে ওঠার পরই সভাস্থলের জমায়েত থেকে ‘‌জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ওঠে৷ যদিও দর্শকাসনের সামনের সারিতেই বসেছিলেন রাজ্যের দুই বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ এবং রাহুল সিনহা৷ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিশেষত বীরভূম জেলায় বিজেপির যে শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে, সদ্য হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনের মারামারি-কাটাকাটিতেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ কাজেই দুই নেতা দলের সর্বোচ্চ নেতাকে স্বাগত জানাতে কিছু রাজনৈতিক লোকজনকে জড়ো করে এনেছিলেন, তেমনও হয়ে থাকতে পারে৷ তবু বিশ্বভারতীর লোকজন, বিশেষত প্রাক্তনীরা, রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নভূমিতে এই ধর্মীয় জিগিরে মর্মাহত৷