1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বকাপ যেতে পারো না কেন: পেলে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩১ ডিসেম্বর ২০২২

পেলের প্রয়াণে স্মৃতির ভারে আক্রান্ত কলকাতা৷ দু'বার এই শহরে এসেছিলেন ফুটবলের রাজা৷ খেলেছিলেন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে৷

https://p.dw.com/p/4LbEz
Indien Kolkata erinnert Pelé
ছবি: Payel Samanta/DW

দক্ষিণ অ্যামেরিকার এক ফুটবলার জিতে নিয়েছিলেন বিশ্বের হৃদয়৷ তিনি ‘ব্ল্যাক পার্ল' পেলে৷ কলকাতাও মজেছিল ব্রাজিলের এই কিংবদন্তিতে৷ তার প্রয়াণে শোক এই শহরেও৷ ক্রীড়াপ্রেমীরা আবেগমথিত, পেলের বিরুদ্ধে মাঠে নামা বাঙালি তারকা ফুটবলাররা হাতড়ে চলেছেন স্মৃতি৷

১৯৭৭ সালে প্রথমবার কলকাতায় আসেন পেলে৷ ২৪ সেপ্টেম্বর ইডেন গার্ডেনে বাঙালি ফুটবলারদের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন৷ মোহনবাগানের বিপক্ষে নিউইয়র্কের কসমস ক্লাবের জার্সিতে নেমেছিলেন পেলে৷ তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল তারকা কলকাতায়, এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না ফুটবলপ্রেমীদের৷

মোহনবাগানের প্রশিক্ষক ছিলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে পিকে৷ তার দলে ছিলেন সুধীর কর্মকার, বিদেশ বসু, মহম্মদ হাবিব, শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ ভৌমিক৷ পেলের বিরুদ্ধে খেলার উত্তেজনা আজো টের পান সেই দলে থাকা মানস ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার, সুব্রত ভট্টাচার্যরা৷

আমাকে বিশেষ দায়িত্ব ছিল, পেলেকে মার্ক করা: গৌতম সরকার

পেলের প্রয়াণের খবর আসতেই সেই স্মৃতি ভিড় করেছে প্রাক্তন ফুটবলারদের মনে৷ মানস ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পেলের সঙ্গে কবে ছবি তুলব, খেলতে নামব, সেজন্য আমরা মুখিয়ে ছিলাম৷ সমানে-সমানে লড়েছি৷ খেলার শেষে পেলে আমাদের প্রশংসা করেন৷ বলেন, তোমরা এতো ভাল খেলো, বিশ্বকাপে যেতে পার না কেন?''

ম্যাচে মোহনবাগান ২-১ গোলে এগিয়ে যায়৷ শেষে পেনাল্টিতে সমতা ফেরায় কসমস৷ পেলেকে রোখার দায়িত্ব ছিল গৌতম সরকারের৷ বাঙালি ছেলের জেদে সেদিন ফুটবলের রাজা বেশ নিষ্প্রভ ছিলেন৷ গৌতম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু আমি-আমি করা ঠিক নয়৷ তবে প্রদীপদা আমাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন, পেলেকে মার্ক করতে হবে৷ সবাই মিলেই কসমসকে রুখেছিলাম৷ শিবাজী আজ নেই, ওর অসাধারণ সেভ ছাড়া কি এই ফল হত?''

৪৫ বছর আগের সেই ম্যাচ হওয়ার আগে কিন্তু পেলের খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল৷ সেপ্টেম্বরের শেষে প্রবল বৃষ্টি শহরে, ইডেনের মাঠ জল-কাদায় ভরা৷ মানস স্মৃতি ঘেঁটে বলেন, ‘‘এঁটেল মাটির মাঠে চটচটে কাদা, পেলের এজেন্ট তা দেখে বেঁকে বসেছিলেন৷ পেলে নামবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়৷ কিন্তু সেদিন শহরজুড়ে পেলে-পেলে রব, ফুটবলের রাজা মাঠের পরোয়া না করে সেই আবেগকে সম্মান দিয়েছিলেন, পুরো ম্যাচ খেলেন৷''

বলেছিলেন, তোমরা বিশ্বকাপে যেতে পার না কেন?: মানস ভট্টাচার্য

এই আবেগকে স্বীকৃতি দিয়ে ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার পেলে কলকাতায় আসেন৷ তারুণ্যের দীপ্তি নেই, তবে সেই ট্রেডমার্ক হাসিতে জিতে নেন তিলোত্তমার মন৷ যদিও কলকাতার হৃদয় ততদিনে দ্বিখণ্ডিত, কালো মুক্তোর জনপ্রিয়তায় ভাগ বসিয়েছেন ম্যারাডোনা৷ এক সপ্তাহ কলকাতায় ছিলেন পেলে৷

সেই সময় পুজোয় মেতে উঠেছিল শহর৷ চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপের উদ্বোধন করেন পেলে৷ এই ক্লাবের কর্মকর্তা সমীর ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখনো চোখে ভাসছে, ক্র্যাচে ভর দিয়ে অশক্ত মানুষটি আমাদের মাঠে অনেকটা হেঁটেছিলেন৷ আমাদের সঙ্গে কথা বলেন, পিঠ চাপড়ে দেন৷''

এই সফরে পাঁচতারা হোটেলেপেলের পাশের ঘরে ছিলেন ভারতের জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস৷ তার স্মৃতি, ‘‘অকাতরে অটোগ্রাফ দিয়েছেন রোজ৷ কার্ডে আমার নাম লিখে সই করে দিয়েছেন৷ ব্রাজিলের জার্সিতে সই করেও দিয়েছেন আমাকে৷''

পেলের স্মরণে একাধিক ক্লাবের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়৷ ময়দানে ফুটবলাররা নামার আগে নীরবতা পালন করেন৷ বাংলার এই আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছে এক ব্রাজিলীয় ফুটবলারকে৷ শুক্রবার ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা গোল করে দলকে জেতানোর পর বলেন, ‘‘পেলের মৃত্যু হয় না৷ তাকে কখনো ভোলা যাবে না৷ ম্যাচের আগে বলেছিলাম আজ আমরা জিতে সেই জয় পেলেকে উৎসর্গ করব৷ আমরা সেটা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি৷''