বিশ্বকাপে নতুন হুমকি
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ব্রাজিল এমন একটি দেশ যেখানে অনলাইন অপরাধ মাত্রাতিরিক্ত, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে হ্যাকারদের হাত থেকে ওয়েবসাইট বাঁচাতে মরিয়া কর্তৃপক্ষ৷ সরকারি ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফিফার ওয়েবসাইট রক্ষা করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের৷
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এ তহবিল জনগণের অর্থ থেকে গঠিত হয়েছে, ফলে জনগণের পরিবহণ এবং অন্যান্য খাতে সুবিধা কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ এ নিয়েই গত বছরের জুন থেকে ব্রাজিল জুড়ে চলছে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ৷ এই প্রতিবাদে এবার যোগ দিল হ্যাকাররা৷
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হ্যাকারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘অ্যানোনিমাস'-এর সঙ্গে নাকি সংশ্লিষ্টতা আছে ফিফা বিশ্বকাপের উপর সাইবার আক্রমণের হুমকি দেওয়া ব্রাজিলের হ্যাকারদের৷ ব্রাজিলের একাধিক হ্যাকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে হুমকির সত্যতাও নিশ্চিত করেছে রয়টার্স৷ কয়েকজন হ্যাকারের সাথে কথা বলেছে তারা৷ একজন হ্যাকার জানিয়েছেন, ‘‘আমরা পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছি৷ আমার মনে হয় না যে, আমাদের রুখতে তারা বেশি কিছু করতে পারবে৷''
রয়টার্স এই হ্যাকারসহ আরো কিছু হ্যাকারদের নেটওয়ার্ক থেকে পরিচিতি বের করতে সমর্থ হয়েছে৷ তবে তাঁদের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারেনি৷
তারা জানিয়েছে, ‘‘বিশ্বকাপ এমন একটা আয়োজন, যেখানে বিশ্বের সব প্রান্তের দর্শক উপস্থিত থাকবেন আর বিশ্ববাসীর সম্মুখে ফিফা, ব্রাজিল সরকার এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর একসঙ্গে সাইবার আক্রমণ চালানোর এটাই সুবর্ণ সুযোগ৷'' তবে ব্রাজিলের সাধারণ নাগরিক ঐ সাইবার আক্রমণের শিকার হবেন না বলে দাবি করেছে তারা৷
আগামী ১২ই জুন থেকে ১৩ই জুলাই পর্যন্ত ব্রাজিলে মোট ১২টি ভেন্যুতে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে৷ পাইরেটেড সফটওয়্যার, অনলাইন নিরাপত্তায় কম বিনিয়োগ-নেটওয়ার্কের নিরাপত্তায় এমনিতেই সমস্যা তৈরি করেছে৷ এরই মধ্যে টিকেট বিক্রি এবং বিশ্বকাপ সংক্রান্ত অন্যান্য ব্যবসায় অনলাইন অপরাধ বেড়ে গিয়েছে৷
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম বিয়ার জানান, ‘‘বিশ্বকাপকে লক্ষ্য করেই যে এটা হচ্ছে এটা নিশ্চিত, কিন্তু প্রশ্ন হলো কখন তাঁরা এটা করবে? তাই এখনই এটার প্রতিরোধ করা এবং পদক্ষেপ নেয়া উচিত৷''
ব্রাজিলের সেনাবাহিনীর সাইবার কমান্ড এর প্রধান জেনারেল হোসে কার্লোস জোদ সান্টোস বলেছেন, যে কোনো দেশের জন্যই এটা বলা সম্ভব নয় যে এই হুমকি মোকাবিলায় তারা একশ ভাগ প্রস্তুত৷ তবে ব্রাজিল এরই মধ্যে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তবে ফিফার এক মুখপাত্রকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
সম্প্রতি কয়েকটি বছরে ব্রাজিলের বড় কয়েকটি ইভেন্টে বেশ কিছু অনলাইন নিরাপত্তা লঙ্ঘণের ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১২ সালে রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ সম্মেলনের সময় সাইবার কমান্ড ১৪০টি নিরাপত্তা লঙ্ঘণের চেষ্টার কথা জানান৷ আর গত বছরের কনফেডারেশন্স কাপে এই সংখ্যাটা ৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল৷
সান্টোস বলেন, তাদের ধারণা বিশ্বকাপে হ্যাকারদের দৌরাত্ম্য আরো বাড়বে এবং হয়ত ২০১৬ সালে অলিম্পিকের সময় তারচেয়েও বেশি হবে৷
রিও অলিম্পিকের তথ্য প্রযুক্তি নেটওয়ার্কের দায়িত্বে থাকা ফরাসি কোম্পানি ‘আটোস' জানায়, ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে তারা ২৫ কোটি ৫০ লাখ সিকিউরিটি ইভেন্ট ধরতে পেরেছে৷ এই দলের প্রধান মিশেল হিরন বললেন, এটা আসলেই বিশাল একটা সংখ্যা, কিন্তু এটা খেলায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি৷ তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিশ্বকাপের টিকেটের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনলাইন অপরাধীরা বিভিন্ন বিক্রেতার ওয়েবসাইট হ্যাক করে অনলাইন টিকেটগুলো হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় আছে৷
এপিবি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)