1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে বিপিএল জুয়া

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ নভেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশে এখন আলোচিত শব্দ ‘বিপিএল জুয়া’৷ এই জুয়া এখন ছড়িয়ে পরেছে শহর থেকে গ্রামে৷ একে কেউ কেউ বলে টাকা লাগানো৷ আবার কেউ বলেন বাজি৷ এই জুয়া নিয়ে এরইমধ্যে ঢাকায় এক ছাত্র খুন হয়েছে বলে রয়েছে অভিযোগও৷

https://p.dw.com/p/2njXR
Bangladesch Cricket Premier League
ছবি: Mir Farid

সাভারের তরুণ শরীফ দেওয়ান৷ তাঁর ভাষায় ক্রিকেটে এখন অনেকেই টাকা লাগান৷ চায়ের দোকান থেকে সুপার মার্কেট, এমনকি ঘরোয়া আড্ডায় ক্রিকেটে ‘টাকা লাগানোর ব্যবসা' শুরু হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ বা বিপিএল-এর শুরুতেই৷ ঢাকার অদূরে সাভারের মোল্লা মার্কেট এলাকায় প্রতি খেলাতেই জমজমাট এই ক্রিকেট জুয়া৷ শরীফ দেওয়ান জানান, ‘‘প্রতি খেলাতেই মার্কেট এলাকার একটি ক্লাবে টাকা লাগানো হয়৷ ৪০ থেকে ৫০ জন বাজিতে অংশ নেন৷ একেকজন দলপ্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা বাজি ধরেন৷ আর টাকা জমা রাখা হয় একটি মাত্র লোকের কাছে৷ যারা জেতেন তারা টাকা নিয়ে যান৷ দলের সক্ষমতা অনুযায়ী বাজির টাকা ওঠা-নামা করে৷'' 

শরীফ দেওয়ান

শরীফ দেওয়ান জানান, ‘‘ক্লাবে ছোট-বড় অনেকগুলো টিভি সেট আছে৷ সেখানে গোল হয়ে খেলার সময় তারা বসে থাকেন৷'' তিনি আরো জানান, ‘‘এমনকি চায়ের দোকান আর ছোট-খাট আড্ডাতেও এই টাকা লাগানো হয়৷ এখানে মূলত বল প্রতি, প্লেয়ার প্রতি এবং ওভার প্রতিও বাজি ধরা হয়৷ ওই এলাকার তরুণরা, বিশেষ করে কলেজের ছাত্ররা  টাকা লাগায়৷ এছাড়া রিকশা চালক, দোকানদার, বেকার যুবক – এরাও এখন এই টাকা লাগানোর খেলায় মেতেছে৷''

পুলিশ আসে কিনা জানতে চাইলে শরীফ দেওয়ান বলেন, ‘‘পুলিশ আসে না৷ আর পুলিশ জানলে তো আসবে৷''

ঢাকার ইস্কাটন এলাকার চা দোকানি মো. সোলায়মান জানায়, ‘‘খেলার আগে-পরে আমার দোকানে চা খেতে এসে আড্ডা দেয় অনেকেই৷ ওই আড্ডার আলোচনাতেই আমি জানতে পারি বিপিএল জুয়ার কথা৷ এই এলাকার কিছু মেস বাড়ি এবং কিছু বাসায় তরুণরা খেলার সময় বাজি ধরে৷ ‘গেম' বাজি নিয়ে মাঝে-মধ্যে ঝামেলাও হয়৷ ঝামেলা একদিন আমার দোকান পর্যন্ত এনেছিল তারা৷ পরে তাদের এক সিনিয়র মিটমাট করে দেয়৷''

নোমান আহমেদ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মতিঝিল ও শান্তিনগরের ক্লাব পাড়ায় খেলা নিয়ে বাজি নামের এই জুয়া আগে থেকেই প্রচলিত৷ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং আইপিএল নিয়েও এখানে জুয়া খেলা হয়৷ ক্লাবগুলোতে আলাদা আলাদা গ্রপ করে এই জুয়া হয়৷ এ জন্য ক্লাবের ভেতরে প্রয়োজন অনুযায়ী টিভি সেট বসানো হয়৷ আর জুয়ার টাকা নিয়ন্ত্রণ এবং ভাগ বাটোয়ারা করেন ক্লাবের দায়িত্বপ্রাপ্তরা৷

দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহর ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ক্রিকেট জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে৷ খুলনা যশোর, সাতক্ষীরা এবং বরিশাল অঞ্চলে বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, ওই সব এলকার চায়ের দোকান, হোটেল, ক্লাব – সবখানেই খেলার সময় বাজি ধরার নামে এই জুয়া চলে৷ এমনকি জুয়ায় মানুষকে আকৃষ্ট করতে আছে নানা তৎপরতাও৷ কেউ কেউ ফেসবুকে আমন্ত্রণ জানায় জুয়া খেলার জন্য৷ এ নিয়ে ফেসবুকে বেশ কয়েকটি ‘ক্লোজড গ্রুপ'-এর কথাও জানা যায়৷

অনলাইনে খেলাধুলা নিয়ে সক্রিয় নোমান আহমেদ নামে এক তরুণ জানান, ‘‘বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে অনলাইনেও জুয়া খেলা হয়৷ আন্তর্জাতিক জুয়াড়িরা নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এই জুযার আসর বসায়৷ বাংলাদেশের অনেকেই ওই জুয়ায় অংশ নেয়৷ তবে বিপিএল নিয়ে অনলাইনে জুয়া আছে বলে আমার জানা নাই৷ কিন্তু খেলার সময় বাজি ধরা এখন একটা সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে৷'' 

সাদেক আহমেদ

তবে ক্রিকেট নিয়ে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত সাদেক আহমেদ (ছদ্ম নাম) ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বেটিং সাইটগুলো সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও সক্রিয়৷ ভালো দল ও ম্যাচ থাকলে বাংলাদেশের খেলা নিয়েও জুয়া হয়৷ বিপিএল-এ ঢাকার টিমের খেলার সময় জুয়া হয়েছে৷''

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম জুয়াড়ি অতনু দত্তকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ এর আগে জুয়াড়িদের সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ গড়াপেটা বা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে জাতীয় দলের খেলোয়াড় আশরাফুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ কিন্তু বাংলাদেশে এখন যে বিপিএল জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা ‘হোমগ্রোন' বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা৷

এই বিপিএল জুয়ায় বাধা দেয়ার জেরে গত ৬ নভেম্বর ঢাকার বাড্ডা এলাকায় খুন হন বেসরকারি মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসিম আহমেদ৷ তাঁর বাবার অভিযোগ, এই বিপিএল জুয়ায় বাধা দেয়ার জেরেই তাকে হত্যা করা হয়৷ পুলিশ আসিফ শিকদার নামে একজনকে এই ঘটনায় আটক করেছে৷ বুধবার তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলে খবর৷ এর আগে রাজশাহীতে আইপিএল ক্রিকেট নিয়ে জুয়া খেলার বিরোধিতা করে নিহত হন এক যুবক৷

মাসুদুর রহমান

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান দাবি করেন, ‘‘আমরা এখনো বিপিএল জুয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট খবর বা তথ্য পাইনি৷ তবে এ ব্যাপরে সতর্ক আছি আমরা৷ কোনো অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব৷''

গত ৪ নভেম্বর থেকে বিপিএল শুরু হয়েছে৷ সাতটি টিম অংশ নিচ্ছে৷ এ পর্যন্ত ১২টি ম্যাচ হয়েছে৷ শেষ হবে আগামী ১৪ ডিসেম্বর৷

বাংলাদেশে খেলাধুলায় জুয়া বন্ধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, লিখে জানান মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য