বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য ভারতের দরজা উন্মুক্ত
১৯ মার্চ ২০১০অপেক্ষা শুধু এই সংক্রান্ত বিলটি সংসদে পাশ হওয়ার৷ তবে আশা আকাঙ্ক্ষা দুই-ই জড়িয়ে আছে এই সিদ্ধান্তে৷ অবশ্য বোঝাই যাচ্ছে, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণে ভারতে এবার পুরোপুরি লেগেছে বিশ্বায়নের হাওয়া৷ চার বছর গড়িমসি করার পর, মনমোহন সিং সরকার বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ভারতের দরজা খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই সংক্রান্ত বিলটি এখন সংসদের অনুমোদনের অপেক্ষায়৷ বিলে আছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে বিস্তারিত বিবরণসহ৷ যার মধ্যে থাকবে সিলেবাস, শিক্ষাপদ্ধতি, পঠনপাঠন এবং কী ধরণের ডিগ্রি দেওয়া হবে ইত্যাদি৷ আবেদনের ৮ মাসের মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হবে৷ ক্যাম্পাস খুলতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে জমা দিতে হবে ৫০ কোটি টাকা৷ আর লাভের টাকা দেশেই খরচ করতে হবে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে৷
ভারতের শিক্ষার বাজার বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির জন্য খুলে দেবার পক্ষে-বিপক্ষে উভয় মতই আছে৷ মোটের ওপর শিক্ষাজগত একে স্বাগত জানিয়েছে৷ বলেছে, এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে, শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার ত্বরান্বিত হবে, উন্নত হবে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামো ও গুণমান৷ এদেশের ছাত্রছাত্রীরা কম খরচে এদেশেই পেতে পারবে বিদেশি ডিগ্রি৷ উল্লেখ্য, ভারত থেকে গড়ে বছরে বিদেশে পড়তে যায় প্রায় এক লাখ ষাট হাজার শিক্ষার্থী৷ তবে আশঙ্কা এই যে বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি টাকার জোরে ভাল ভাল শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের টেনে নেবে৷ বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির জন্য নিয়মকানুন আলাদা হলে প্রতিযোগিতা হবে অসমান৷
বিষয়টি খোলা মনে দেখতে চান ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্বরাজ বসু৷ ডয়চে ভেলেকে উনি বলেন, আগে থেকেই বিষয়টিকে নেতিবাচক রঙ দেওয়া হলে, কোন উদ্যোগই নেওয়া যায়না৷ বিল পাশ হলেই অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বা এম আই টি ম্যাসাচুসেটস, হার্ভার্ডের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি হুড়মুড়িয়ে ঢুকবেনা৷ তাদের মান অনুযায়ী পরিকাঠামো গড়ে তোলা সময়সাপেক্ষ৷ এমবিএ-এর ছাত্র নীলাঞ্জন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই ডিগ্রি যদি আন্তর্জাতিক ডিগ্রির স্বীকৃতি পায়, তাহলে ছাত্র হিসেবে আমার কাছে তা অবশ্যই স্বাগত৷'' জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বি.বি ভট্টাচার্য ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশি গবেষণা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আসবে বলে মনে হয়না৷ আসবে ম্যানেজমেন্ট, তথ্য প্রযুক্তি, ডিজাইনিং বা টেকনিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি৷''
এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দ্রুত আর্থিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারত যেসব কারণে পিছিয়ে আছে, তার ১০টি কারণের একটি হলো ভারতে পুরোনো আমলের শিক্ষা পদ্ধতি যা মুখস্থ বিদ্যা নির্ভর৷
প্রতিবেদক : অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন