1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিচার ব্যবস্থাকে অগ্রসর করতেই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৯ নভেম্বর ২০২১

সম্প্রতি রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলার রায়ের সময় বিচারকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে৷ বিচার আদালতের পর্যবেক্ষণ সবার জন্য মানা কী বাধ্যতামূলক?

https://p.dw.com/p/43Bi6
Bangladesch | Richterin | Mosammat Kamrunnahar
ছবি: bdnews24.com

অন্যদিকে রায়ের কপি বের হওয়ার আগেই গণমাধ্যমের সংবাদের প্রেক্ষিতে একজন বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কতটা যৌক্তিক? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল ৷  

ডয়চে ভেলে : কোনো বিচারকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আইনমন্ত্রীর চিঠি দেওয়া কতটা সাংবিধানিক?

আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন : সম্পূর্ণ সাংবিধানিক৷ কোনো কিছু যদি আইন মন্ত্রণালয়ের সামনে আসে সেক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় অবশ্যই সেটা আদালতের গোচরে আনবেন৷ এটা তাদের দায়িত্ব৷ আমাদের নতুন যে রুলস করা হল, সেই রুলস অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট এটা বিবেচনা করবে যে, এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে কি, হবে না৷ কোনো ঘটনা ন্যায়সঙ্গত মনে না হলে তারা অবশ্যই গোচরে আনতে পারেন৷  

নিম্ন আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক কি?

নিম্ন আদালতের পর্যবেক্ষণ ওই মামলার ক্ষেত্রে অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু সাধারণভাবে এটা বাধ্যতামূলক না৷ আমাদের সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট যদি কোন পর্যবেক্ষণ দেন সেটা মান্য করা বাংলাদেশের সকলের জন্য বাধ্যতামূলক৷

‘বিচার ব্যবস্থায় যদি মন্দ কোনো দৃষ্টান্ত হয় সেটা উৎরানোর দায়িত্ব সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের’

রায়ের পর তো আপিলের সুযোগ আছে৷ কিন্তু আপিল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে বিচারকের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া কতটা আইনসঙ্গত?

দু'টো জিনিস আলাদা, আলাদা৷ একটা হচ্ছে, উনার রায় নিয়ে কোনো কিছু বলা যাবে না৷ কিন্তু রায়ের বাইরে যদি কিছু থাকে সেটা নিয়ে ডিসিপ্লিনারি এ্যাকশন নেওয়া যাবে৷ এটা বাংলাদেশে অহরহ হচ্ছে৷ যদি কোন অভিযোগ আসে, তখন মামলার রায়টা দেখা হয়৷ পাশাপাশি অনেক কিছু দেখা হয়৷ সুপ্রিম কোর্টের জিআই কমিটি এটা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে

বিচারকদের বিরুদ্ধে এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পরিপন্থি কি-না?  

এই ধরনের ব্যবস্থা নিলে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আরও অগ্রসরমান হবে৷ কারণ বিচার ব্যবস্থায় যদি মন্দ কোন দৃষ্টান্ত হয়, সেটা উৎরানোর দায়িত্ব সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের৷ সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিম্ন আদালত সুপ্রিম কোর্টের অধীনে৷ সেক্ষেত্রে সরকার যে কোন বিষয় যদি সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনে, তখন সুপ্রিম কোর্ট এটা দেখে বিবেচনা করবেন৷ সুপ্রিম কোর্ট তো সরাসরি কিছু করে না৷ প্রথমে তদন্ত হবে, তারপর সর্বশেষ ধাপ অনুযায়ী তারা যদি মনে করেন কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার, তখন নেবেন৷

এভাবে বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাদের স্বাধীনভাবে রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ভীতি কাজ করবে কিনা?

তারা স্বাধীনভাবে রায় দেবেন এইজন্যই ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ তারা যেন বিচারটা স্বাধীনভাবে করতে পারেন, সঠিকভাবে করতে পারেন সেজন্য কোন ব্যত্যয় হলে সেটা দেখা হয়৷ বিচার করতে গিয়ে তারা যেন কোনো বাধার মুখে না পড়েন সেজন্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে৷

বিচারকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে বাইরে আন্দোলন হলে বিচারকদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় কি-না?

বিচারকের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করার ক্ষমতা থাকলে সেটা হতে পারে৷ নারীরা কাজী হতে পারবে না, এমন একটি রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট৷ তখন এই রায়ের পর অনেক মানবাধিকার সংস্থা, মহিলা পরিষদসহ অনেকেই এটা নিয়ে তখন আলোচনা করেছেন৷ তারপর এটা সুপ্রিম কোর্টে গেছে৷ সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ দেওয়ার ক্ষমতা আছে৷ তারা সেটা দিয়েছেন৷ এখন এটা সুপ্রিম কোর্টে আছে৷ বিচার আদালত যদি সাধারণ কোনো পর্যবেক্ষণ দেন, সেটা তারা পারেন না৷ উনারা পারেন ওই মামলার বিষয়ে যেকোনো পর্যবেক্ষণ দিতে৷ এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, এমন পর্যবেক্ষণ সংবিধান অনুযায়ী তারা দিতে পারেন না৷  

মূল মামলার বিষয়বস্তুর বাইরে গিয়ে এই ধরনের পর্যবেক্ষণ আসামিদের খালাসের রায়কে আড়াল করার চেষ্টা কি-না?

এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না৷

কিছুদিন আগে দুই আসামির আপিল নিষ্পত্তির আগেই ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, এমন সংবাদে নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন৷ পরে দেখা গেল ঘটনা ভিন্ন৷ এখানেও লিখিত রায়ের অনুলিপি না পেয়ে শুধুমাত্র গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একজন বিচারকের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা কী যৌক্তিক?

গণমাধ্যমের যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই বলেছেন তারা ওইটা শুনেছেন৷ তারা নিশ্চয় বানিয়ে বলেননি৷ উনারা শুনেছেন বলেই তো লিখেছেন৷ আমি জানি না, সুপ্রিম কোর্ট কী আদেশ দিয়েছেন৷ এটা নিয়ে নিশ্চয় তদন্ত হবে৷ তখন দেখা হবে উনি এটা বলেছেন কি-না৷ বলে থাকলে কী বলেছেন, লিখে থাকলে কী লিখেছেন৷ তখন সবকিছু বিবেচনা করা হবে৷ যেহেতু উনার বিরুদ্ধে এই কথাগুলো উঠেছে সে কারণে উনাকে আইন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে৷ এখন তো উনি আইন মন্ত্রণালয়ে আছেন৷ তদন্তে যদি দেখা যায়, উনি বলেননি তাহলে উনাকে আবারও বিচারিক আদালতে পাঠানো হতে পারে৷ আবার আইন মন্ত্রণালয়েও রাখা হতে পারে৷ আইন মন্ত্রণালয়ে যারা কাজ করেন তারা সকলেই কিন্তু বিচারক৷ জজ থেকে সহকারী জজ পর্যন্ত সবাই সেখানে কাজ করেন৷

ইতিমধ্যে কিন্তু রায়টি প্রকাশ হয়েছে৷ সেখানে কিন্তু ওই পর্যবেক্ষণের বিষয়টি নেই৷

সেটাই তদন্ত কমিটি দেখবে৷

এই ধরনের রায়ে ক্ষমতাধর ধর্ষকেরা আরও বেশি উৎসাহিত হতে পারে কি-না?

বিচারে ক্ষমতাধর বলে কিছু নেই৷ বিচার ব্যবস্থায় যিনিই আইনের ব্যত্যয় করবেন তার বিচার হবে৷ এর বাইরে কিছু না৷ 

এ ধরনের অনাকাঙ্খিত পর্যবেক্ষণ এড়াতে আপনার পরামর্শ কী?

আমি সবাইকে বলব, প্রচলিত রীতিনীতি আছে, আমাদের আইন আছে, সংবিধান আছে সে অনুযায়ী আমরা সকলে যাতে কাজ করি৷ তাহলে আমরা অনেক বিতর্কের হাত থেকে রেহাই পাব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য