বিক্ষোভ সত্ত্বেও চীনে কুকুরের মাংস উৎসব
অনেক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আর বিশ্বজুড়ে সমালোচনা সত্ত্বেও চীনে হয়ে গেল কুকুরের মাংস খাওয়ার বার্ষিক উৎসব৷ চীনের ইউলিন শহরে কুকুরের মাংস সুখাদ্য হিসেবে বিবেচিত৷ স্থানীয়রা বলেন, কুকুরের মাংস তাঁদের ঐতিহ্যের অংশ৷
উৎসব
প্রতি বছর লিচু আর কুকুরের মাংস খাওয়ার উৎসব হয় চীনের প্রত্যন্ত এবং দরিদ্রদের অঞ্চল গুয়াংঝি ঝুয়াংয়ের ছোট একটি শহর ইউলিনে৷ কাটা হয় কয়েক হাজার কুকুর এবং খাওয়া হয় কুকুরের মাংস৷ সমালোচিত এই আয়োজন এ বছর শুরু হয় গত ২১ শে জুন৷
সংস্কৃতি, নাকি ব্যবসা?
স্থানীয়রা জানালেন, কুকুরের মাংস আর শূকরের মাংসের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ কেবল গ্রীষ্মের সময় এই মাংস খাওয়া ঐতিহ্যের অংশ৷ প্রাণি অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ উৎসবের কোনো সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ নেই৷ এটা আসলে এক ধরনের ব্যবসা৷
প্রতিবাদ
এত কুকুর একসঙ্গে মেরে ফেলার এই উৎসবের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ প্রাণি অধিকার কর্মী ইয়াং ইউহুয়া জানালেন,‘‘আমরা মানুষকে জানাতে এসেছি কুকুর আমাদের বন্ধু, এত নৃশংসভাবে তাদের মেরে ফেলতে পারি না৷’’ একটি জরিপ বলছে, চীনের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ এই উৎসব বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রাণি অধিকার কর্মীরা ইউলিন উৎসব বন্ধের দাবিতে লস অ্যাঞ্জেলেসে চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করছেন৷
কুকুর রক্ষা
প্রাণি অধিকার কর্মীরা মাঝে মাঝে এই কুকুরদের বাঁচাতে কসাইদের কাছ থেকে এদের কিনে নেন৷ ২০১৫ সালে কুকুরপ্রেমী ইয়াং ঝিয়াউন তাঁর বাড়ি তিয়ানঝিন থেকে ইউলিন গিয়েছিলেন ১০০ কুকুর কিনতে, যেখানে তাঁর খরচ হয়েছিল ৯৪৪ ইউরো৷ এখানে দেখা যাচ্ছে প্রাণি অধিকার কর্মীরা কুকুরদের উদ্ধার করে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র জড়ো করেছেন৷
বৈধতা
২০১৫ সালে ইউলিন সরকার এই উৎসবে কিছু সীমাবদ্ধতা জারি করেন৷ প্রকাশ্যে কুকুর জবাই করা, তাদের মাংস ঝুলিয়ে রাখা এবং খাবার সরবরাহ করা যাবে না৷ কিন্তু চীনে কুকুরের মাংস না খাওয়ার কোনো আইন নেই৷
বছরে এক কোটি কুকুরের মাংস
ওয়াশিংটনের হিউম্যান সোসাইটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী , চীনে বছরে এক কোটি কুকুর হত্যা করা হয় মাংস খাওয়ার জন্য৷ এর মধ্যে কেবল ইউলিন উৎসবে জবাই হয় ১০ হাজার৷ উৎসবের অনেক কুকুরই সরকারি অনুমোদন পাওয়া খামার থেকে কেনা৷ তবে কিছু দোকান বেসরকারি এবং এগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়৷
চলছে, চলবে এই উৎসব
ইউলিনের অধিবাসী লি ইয়ংভেই সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘কুকুরের মাংসের সঙ্গে অন্য মাংসের কোনো তফাত নেই৷ আপনি অন্য কারো উপর আপনার পছন্দ-অপছন্দ চাপিয়ে দিতে পারেন না, যেমনটা পারেন না কোনো মানুষকে খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা মুসলিম হতে বাধ্য করতে৷’’ অন্য এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘‘এই উৎসব চলবে৷ তরুণ, বৃদ্ধ, এমনকি শিশুরাও এই মাংস খাচ্ছে৷ এটা একটা প্রথা৷’’
এশিয়াজুড়ে জনপ্রিয়তা
ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে কুকুরের মাংসের জনপ্রিয়তা রয়েছে৷ এসব দেশের অনেকেই মনে করেন এই মাংস কামোদ্দীপক৷ গত কয়েক বছর ধরে, এশিয়াজুড়ে কয়েক কোটি ডলারের কুকুরের মাংসের অবৈধ বাণিজ্য চলছে৷ সমালোচকরা বরাবরই এটাকে অপ্রয়োজনীয় নৃশংসতা এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর বলে আসছেন৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর এশিয়ায় অন্তত ৩ কোটি কুকুর হত্যা করা হয় মাংস খাওয়ার জন্য৷