1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বার্লিন প্রাচীরের পতন ও কিছু ছায়াছবি

৬ নভেম্বর ২০০৯

১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে ভেঙে পড়ে বার্লিন প্রাচীর৷আর তার জের ধরে পুনরএকত্রিত হয় বিভক্ত জার্মানি ৷ যে বিভক্তির কারণে অনেক মানুষকে ভোগ করতে হয়েছে চরম দুঃখ দুর্দশা৷

https://p.dw.com/p/KQ3Y
ছবি: picture-alliance/dpa

বহু পরিবাকে হতে হয়েছে ছত্রভঙ্গ৷ এসব বিষয় নিয়ে লেখালিখি হয়েছে প্রচুর৷ নির্মিত হয়েছে ছায়াছবিও৷ আজ আমরা সেরকম কয়েকটি ছবি নিয়ে কথা বলব৷

পরিচালক ভল্ফগাং বেকার নির্মিত কমেডি ছবি ‘গুড বাই লেনিন' আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছে৷ কাহিনির শুরু ১৯৭৮ সালে ক্যার্নার পরিবারকে ঘিরে৷ স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়েকে পূর্ব জার্মানিতে রেখে পশ্চিম জার্মানিতে পাড়ি দিয়েছেন বাবা ক্যার্নার৷ পরিবারের সাথে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই৷ স্ত্রী ক্রিস্টিয়ানে মনোনিবেশ করেছেন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্মকান্ডে৷ ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাস৷ চারিদিকে তখন গণআন্দোলন৷ নির্মমভাবে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেই আন্দোলন৷ অন্যান্য মিছিলকারীদের সঙ্গে আলেক্সকেও পিটিয়ে গাড়িতে তোলা হয়৷ এই দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারান মা ক্রিস্টিয়ানে৷ এই কোমা অবস্থায় কেটে যায় দীর্ঘ কয়েক মাস৷ আর এই সময়টাতেই ঘটে যায় সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা৷ বার্লিন প্রাচীরের পতন হয়৷ সেই সাথে জার্মানির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যেও ভেঙে পড়ে সকল নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল৷

১৯৯০ সালের জুন মাস৷ আট মাস পর হঠাৎ জেগে ওঠেন ক্রিস্টিয়ানে৷ কিন্তু তখনও খুব দুর্বল৷ গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ধাক্কা কোনো ভাবেই সামলাতে পারবেননা তিনি৷ তাই ছেলে আলেক্সান্ডার মাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসার আগে সব জিনিসপত্র আবার আগের মত সাজিয়ে রাখে৷ মায়ের প্রিয় খাবার জোগাড় করতে রীতিমত কসরত করতে হয় আলেক্সকে৷ কেনান পশ্চিমের জিনিসে বাজার ছেয়ে গেছে ততদিনে৷ কোকাকোলার বিজ্ঞাপন জানালা দিয়ে মায়ের চোখে পড়লে নানা রকম মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে হয় তাকে৷ সমস্যা তুঙ্গে ওঠে, যখন মা টেলিভিশন দেখতে চাইলেন৷ এক বন্ধুর সাহায্যে ভিডিও ফিল্ম তৈরি করে বানানো খবর পরিবেশন করার ব্যবস্থা করে আলেক্স৷ যাতে মনে হয় সব কিছুই আগের অবস্থাতেই আছে৷ ক্রিস্টিয়ানে ক্যার্নার হঠাৎআবার অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এরপর শেষ বারের মত আবার এক কল্পনাপ্রসূত ছবি তৈরি করে মাকে দেখায় ছেলে৷ যাতে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ৪১ তম বর্ষপূর্তির দিন দুই জার্মানির সীমান্ত খুলে দেয়া হচ্ছে এবং হাজার হাজার মানুষ পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় হতাশ হয়ে সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানিতে আশ্রয়ের জন্য আসছেন৷ কয়েক দিন পর মারা যান ক্রিস্টিয়ানে৷ পূর্ব জার্মানির সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর সযত্নে লালিত ধারণাটা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধূলিসাৎ হতে দেয় নি তাঁর পুত্র৷

এই ছবিটিতে অনেক মর্মস্পর্শী ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে খানিকটা কৌতুকের সাথে৷ তদানীন্তন পূর্ব জার্মানির সব কিছুকেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়নি৷ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে এই ছবি৷ হয়েছে দর্শকনন্দিত৷

বার্লিন প্রাচীরকে ঘিরে আরেকটি হৃদয়স্পর্শী ছবি ‘ডি ফ্রাউ ফন চেক পয়েন্ট চার্লি' - ‘চেকপয়েন্ট চার্লির সেই নারী'৷ সারা বেন্ডার তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন পূর্ব জার্মানির এয়ারফুর্টে৷ সারার বাবা পশ্চিম জার্মানি থেকে পূর্ব জার্মানির দিকে রওনা হওয়ার পথে এক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন৷ সারা মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে দেখতে পশ্চিম জার্মানিতে যেতে চাইলে তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়না৷ বাবা কিছুদিন পর মারা যান৷ সারার কাছে যেন পৃথিবী ভেঙে পড়ে৷ তিনি স্থির করেন, দুই মেয়েকে নিয়ে পূর্ব জার্মানি ত্যাগ করবেন৷ গোপনে দেশ ত্যাগ করতে গিয়ে ধরা পড়েন সারা৷ জেল হয় দুই বছরের৷ পশ্চিম জার্মান সরকার তাঁকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়৷ সারাকে পশ্চিম জার্মানিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলেও সন্তানদের দেয়া হয় না৷ শুরু হয় মেয়েদের জন্য সারা বেন্ডারের এক দীর্ঘ সংগ্রাম৷ সত্যি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই ছবিতে সাবেক পূর্ব জার্মান শাসকগোষ্ঠীর নিষ্ঠুরতা ও সন্তানের জন্য মায়ের ব্যাকুলতা ফুটে উঠেছে অনবদ্যভাবে৷

পূর্ব জার্মানির গোয়েন্দা বিভাগ স্টাজির কুকীর্তির কাহিনি ফুটে উঠেছে অস্কারনন্দিত ‘আইন আন্দেরেস লেবেন' -‘অন্য জীবন' ছবিটিতে৷ স্টাজির গোয়েন্দা গ্যার্ড ভিসলারের দায়িত্ব পড়ে প্রখ্যাত নাট্যকার গেওর্গ ডেইমান ও তাঁর স্ত্রীর কর্মকান্ডের দিকে নজর রাখতে৷ কাজটি ভালভাবে করতে পারলে চাকরিতে উন্নতি হবে বলে আশা করেন ভিসলার৷ কিন্তু যা তিনি মোটেও ভাবেননি, তা হল অন্যের জীবনে নজরদারি করতে গিয়ে নিজেই তাতে জড়িয়ে পড়বেন৷ ভিসলার পরিচিত হলেন সম্পূর্ণ এক ভিন্ন জগতের সাথে৷ সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভাষা, মুক্তচিন্তা এসব কিছু ক্রমেই আকৃষ্ট করতে থাকে ভিসলারকে৷ যা থেকে তিনি আর বের হয়ে আসতে পারেননা৷ শুরু হয় এক বিপজ্জনক খেলা৷ উত্তেজনাকর ও রোমহর্ষক এই ছবিতে পূর্ব জার্মানির গোয়েন্দা ব্যবস্থার কাজের এক যথার্থ চিত্র পাওয়া যায়৷ বেশ কটি জাতীয় পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছে এই ছবি৷

দুই জার্মানির বিভক্তির বিষয়টি জার্মান চিত্রপরিচালক মিশাইল ক্লিয়ের-এর ছবিতেও উঠে এসেছে বার বার৷ প্রথমে প্রামাণ্য চিত্র দিয়ে শুরু করলেও তিনি পরে কাহিনি চিত্রের দিকে ঝুঁকে পড়লেন কেন এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পছন্দমত একটি বিষয় আমি পেয়ে গিয়েছিলাম৷ পুব ও পশ্চিমের বিভক্তির বিষয়৷ আমি কিছু দিন সাবেক পূর্ব জার্মানিতে বসবাস করেছি৷ তারপর পশ্চিম জার্মানির বার্লিন অংশে৷ দুই জার্মানির বিভক্তি ও বার্লিন প্রাচীর ছিল সবসময় আমার চোখের সামনে৷ আমাদের পরিবারের একাংশ পুবে থেকে গেছেন৷ এই প্রাচীর আমাদের পরিবারকেও ভাগ করেছে৷ বিষয়টি যেন আমার জীবন থেকেই নেয়া৷''

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক