1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখবে পেইন্ট

২৭ ডিসেম্বর ২০১০

চেক প্রজাতন্ত্রের একটি কোম্পানি সম্প্রতি এক অভিনব রং উদ্ভাবন করেছে যার নাম ফটো ক্যাটালিটিক পেইন্ট৷ মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এই রং বাতাসকে ভাইরাস আর ব্যাক্টেরিয়া মুক্ত করতে সক্ষম৷ বাদ যাবে না সিগারেটের ধোঁয়াও৷

https://p.dw.com/p/zq8b
বাতাস দূষণমুক্ত রাখতে পেইন্টছবি: Twombly/ Gagosian Gallery

চেক প্রজাতন্ত্রের বেশ কিছু বিজ্ঞানী একাধিক কোম্পানির সঙ্গে মিলে ন্যানো টেকনলজির ক্ষেত্রে নতুন সব উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে চলেছেন৷ আমাদের দৈনন্দীন জীবনের নানা দিকে কীভাবে বিজ্ঞানের সফল প্রয়োগ ঘটানো যায়, তার সন্ধান করে চলেছেন তাঁরা৷ তারই প্রমাণ হিসেবে একটি চেক কোম্পানি সম্প্রতি শক্তিশালী ফটো ক্যাটালিটিক পেইন্ট উৎপাদন করতে শুরু করেছে৷ এই পেইন্ট বাতাস থেকে সিগারেটের ধোঁয়াসহ অন্যান্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে শুষে নেবে৷ বাতাস হবে পুরোপুরি বিশুদ্ধ৷ চেক এ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস খুলেছে নতুন একটি ন্যানোসেন্টার৷ লক্ষ্য, ন্যানোসায়েন্স-এর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে গবেষণাকাজের ওপর জোর দেয়া৷

Flash-Galerie Norwegen
বিশুদ্ধ বাতাস এখন এক দূর্লভ ব্যাপারছবি: picture-alliance / John Bolt / S

রাজধানী প্রাগের উত্তরাংশে বিবর্ণ এক ভবন৷ তারই ছ'তলায় যেন লুকিয়ে আছে হেয়রভস্কি ইন্সটিটিউট অফ ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি৷ সাদা পোশাক পরা কয়েকজন ভদ্রলোক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেশ কিছু পদার্থ দিয়ে বড় কিছু তৈরির চেষ্টা করছেন৷

নতুন এই ন্যানো সেন্টারটি আংশিকভাবে আর্থিক সাহায্য পেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে৷ ইরি রাথুস্কি সেন্টারের প্রধান৷ তিনি দেখালেন ডিপ কোটার জিনিসটা কীভাবে কাজ করে৷ বললেন, ‘‘এখানে আমরা কাচের পাতে টিটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইড বলে অভিহিত ন্যানোস্ট্রাকচারের খুব পাতলা স্তর লাগিয়ে দিচ্ছি৷ টিটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইড খুবই কার্যকর এক ফোটোক্যাটালিস্ট৷ এই ফোটোক্যাটালিস্ট হচ্ছে এমন এক বস্তু যার ওপর আলো পড়লে রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়৷ এই ফোটো ক্যাটালিটিক পেইন্ট এয়ার কন্ডিশনিং-এ ব্যবহার করা যেতে পারে৷ বাতাস বিশুদ্ধ করতে এবং আলোর ক্রিয়ায় বিভিন্ন দূষণকারী জিনিস দূর করতে তা সক্ষম৷''

ইরি রাথুস্কি অবশ্য একাই এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন না৷ ইয়ান প্রোখাজকা'র কোম্পানির নাম ‘অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল্স'৷ এই কোম্পানি প্রাগ শহরের উপকন্ঠে জীর্ণ এক কারখানায় অবস্থিত৷ প্রোখাজকা এবং রাথুস্কি দুজনেই টিটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইড নিয়ে কাজ করছেন৷ অবশ্য তারা এক সঙ্গে কাজ করছেন না৷ প্রোখাজকার কোম্পানি টিটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইড দিয়ে তৈরি করছে ফটো ক্যাটালিটিক পেইন্ট৷ এই পেইন্টের সাহায্যে বসার ঘর থেকে শুরু করে বাড়ির প্রতিটি ঘর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করা সম্ভব৷ এমনকি সিগারেটের ধোঁয়া পর্যন্ত শুষে নেবে এই পেইন্ট৷ প্রোখাজকা'র কথায়, ‘‘এক ঘনমিটারের বাক্সে সিগারেটের ধোঁয়া ভরে দিলে এক ঘন্টা পর দেখা যাবে পুরো বাক্সটি পরিষ্কার৷ ধোঁয়া নেই, গন্ধও নেই৷''

২০ বর্গমিটারের একটি বসার ঘরে ফটো ক্যাটালিটিক পেইন্ট ২০ মিনিটের মধ্যে সিগারেটের ধোঁয়া থেকে ঘরটি মুক্ত করতে সক্ষম হবে৷ তাই প্রোখাজকা জানান,‘‘হ্যাঁ, ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ জীবাণু এবং ভাইরাস বাতাসের মধ্যে থেকে সরাতে সক্ষম এই ফটো ক্যাটালিটিক পেইন্ট৷ অবশ্য এটা আরো দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে৷''

অতি ক্ষুদ্র টিটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইডের মলিকিউল আলোর সংস্পর্শে আসলে বিক্রিয়া শুরু হয়৷ এর অর্থ হল ব্যাকটেরিয়া, ধোঁয়া, ধূলার ক্ষুদ্র কণা – সব কিছুই শুষে নেবে এই টিটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইড৷ সবচেয়ে বড় কথা হল এই টিটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইড মানুষের কোন ক্ষতি করবে না৷

‘অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল্স' ইতিমধ্যেই এই পেইন্ট রপ্তানি শুরু করে দিয়েছে স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ডে৷ এই সব দেশ পেইন্ট তৈরির লাইসেন্স চাচ্ছে৷ আশা করা হচ্ছে, ন্যানোসেন্টারের এই উদ্ভাবন হয়তো ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে নিয়ে আসবে চেক প্রজাতন্ত্রকে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক