1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজার আরো খুলে দিন: চীনের প্রতি ম্যার্কেল

১৬ জুলাই ২০১০

বাজার আরো উন্মুক্ত করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানালেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্য আনার কথাও বলেছেন তিনি৷ প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও এবং প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর৷

https://p.dw.com/p/ONJB
চুক্তি সইয়ের পর চীনা প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পানীয় পান করছেন ম্যার্কেলছবি: AP

বর্তমান বিশ্বে রপ্তানিকারক শীর্ষ দুটি দেশ হলো জার্মানি ও চীন৷ তবে তাদের নিজেদের বাণিজ্যে পাল্লাটা ভারী চীনের দিকেই৷ গত বছরের পরিসংখ্যান বলছে, চীন ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য জার্মানিতে রপ্তানি করেছে৷ অন্যদিকে জার্মানি পাঠিয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য৷ এই বিষয়টিই চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের কাছে তুলে ধরলেন ম্যার্কেল৷ জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘চীনের কোম্পানিগুলো সহজেই জার্মানির বাজারে পণ্য পাঠাতে পারছে৷ একই সুবিধা জার্মান শিল্পোদ্যোক্তাদেরও পাওয়া উচিত৷ আমরা সেটাই আশা করবো৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাইবো, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই পক্ষই সমান সুবিধা পাবে৷''

চীন আর জার্মানির ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আমাদের এই সম্পর্ক পুরোপুরি নতুন ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পারি আমরা৷ আমাদের কৌশলী সহযোগিতা আমরা ভবিষ্যতে আরো প্রসারিত করব৷ আমি মনে করি, এটা হবে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ যে, এই সহযোগিতার প্রকাশ ঘটাতে ভবিষ্যতে দুই দেশের সরকারপ্রধানরা বছরে একবার আলোচনায় বসবেন৷''

Angela Merkel China Besuch
ছবি: AP

রাশিয়া সফর শেষে চীনের পথে রওনা হন ম্যার্কেল৷ চ্যান্সেলর হিসেবে চতুর্থবারের মতো চীন গেলেন তিনি৷ আজ জিয়াবাওয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ম্যার্কেল৷ তাঁর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে যে ১০টি চুক্তি সই হয়েছে, তার একটির আওতায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে চীনকে দেওয়া হবে ১২৪ মিলিয়ন ইউরো৷ পানিসম্পদ ব্যবহার, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে একসঙ্গে কাজ করতেও সম্মত হয়েছে দুটি দেশ৷ জার্মান কোম্পানি ডাইমলার বেঞ্জ-এর জন্য ট্রাক তৈরি করে দেবে চীনের ফোটন মটরস৷ এছাড়া আগামী ২০১২ সাল চীনের সংস্কৃতি বর্ষ হিসেবে পালিত হবে জার্মানিতে৷ চুক্তিগুলোর পাশাপাশি ২৮ দফার একটি যৌথ ঘোষণাও এসেছে৷ তাতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরস্পর সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছে দুই পক্ষ৷

ম্যার্কেল ২০০৭ সালে তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দলাইলামার সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দুই দেশের সম্পর্ক একটু শীতল হয়৷ তবে এখন তা কেটে গেছে৷ জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আপনার এই সফর পরস্পরের প্রতি আস্থা এবং সহযোগিতার বন্ধন আরো দৃঢ় করবে৷'' ম্যার্কেলের সফরকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করছেন প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও৷ দুই দেশের বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আশা করি ধীরে ধীরে কমে আসবে৷''

বার্তামাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে দুপক্ষে সূক্ষ্ম মতপার্থক্য অস্পষ্ট থাকেনি৷ জার্মান চ্যান্সেলর মিডিয়ার সমালোচনামুখী ভূমিকার ওপর জোর দেন৷ চীনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও-এর কন্ঠে ভেসে ওঠে ভিন্ন সুর৷ ‘‘মিডিয়ার উচিৎ জার্মান-চীনা বন্ধুত্ব আর সহযোগিতার ইতিবাচক দিকগুলো বেশি করে তুলে ধরা৷ তরুণদের মাঝে যোগাযোগের কথা বেশি করে বলা৷ তাহলে তা থেকে দুই দেশ এবং গোটা বিস্বই লাভবান হবে৷''

চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইউরোর প্রতি তাঁদের আস্থা এখনো অটুট আছে৷ আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতেও বেইজিংয়ের পূর্ণ সমর্থন আছে৷ তাঁর এই সমর্থনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন ম্যার্কেলও৷

দুই বছর আগেও বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ছিলো জার্মান৷ তবে গত বছর তাদের দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দেয় চীন৷ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিলো ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার৷ অন্যদিকে জার্মানি রপ্তানি করে ১ দশমিক ১২ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য৷ তাঁদের এই বিশাল রপ্তানি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা রয়েছে৷ তবে ম্যার্কেল ও জিয়াবাও দুজনই তা নাকচ করে বলেছেন, এজন্য জার্মানি ও চীনকে দোষারোপ না করে বরং প্রশংসা করা উচিত৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক