বাংলায় সফল হবে আম আদমি পার্টি?
১৯ মার্চ ২০২২ভারতের রাজনীতিতে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নাম আম আদমি পার্টি৷ এতদিন তারা দিল্লিতে সরকার চালাচ্ছিল৷ আধা রাজ্য হলেও দিল্লির শাসন দেশের নজর কেড়েছে৷ সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল পাঞ্জাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে৷ এই জয়ে উৎসাহিত নেতৃত্ব অন্য রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে তৎপর হয়েছে৷ এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও৷
আম আদমি পার্টির নির্বাচনী প্রতীক ঝাঁটা৷ দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ জনমুখী প্রশাসন আপ-এর মডেল, যা ইতিমধ্যেই তারা দিল্লিতে বাস্তবায়িত করেছে৷ সেখানকার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মহল্লা ক্লিনিক, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে৷ এই মডেল সামনে রেখে পাঞ্জাবে বিপুল জয় পেয়েছে আপ৷ এখন তাদের নজরে গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশের বিধানসভা ভোট৷ পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়তে চায় তারা৷
সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কেজরির দল৷ গত রবিবার তারা কলকাতায় পদার্পণ যাত্রার আয়োজন করেছিল৷ ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে৷ মিসড কল দিয়ে সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন যে কেউ৷ সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে সদস্যপত্র বা ফর্ম৷ কলকাতা ও জেলায় রীতিমতো ক্যাম্প বসিয়ে সদস্য নেওয়া হচ্ছে৷
সূত্রের খবর, আম আদমি পার্টির রাজ্য কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে৷ খোঁজা হচ্ছে রাজ্য দপ্তরের জন্য নতুন কার্যালয়৷ সবটাই চলছে বেশ নীরবে৷ এর আগের দফায় আপ হইহই করে পশ্চিমবঙ্গে নামলেও মুখ থুবড়ে পড়ে৷ এবার তাদের কতটা সম্ভাবনা? রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পাঞ্জাবে জিতলেও আম আদমি পার্টি এখনো গ্রামাঞ্চলে ততটা পরীক্ষিত নয়৷ এটি মূলত নাগরিক অঞ্চলের দল৷ তাই পাঞ্জাবে ভালো ফল করলেও উত্তরাখণ্ডে ব্যর্থ হয়েছে৷ একই কারণে পশ্চিমবঙ্গ তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম৷”
এ রাজ্যের গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, শাসকের বিরুদ্ধে কোনো শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি সেই জায়গা নিলেও পরবর্তীতে তারা জমি হারিয়েছে৷ আম আদমি পার্টি কি সেই জায়গা নিতে পারবে? তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেজরিওয়ালের সুসম্পর্কের কথা সুবিদিত৷ যদিও আপ-এর উত্তর ২৪ পরগনার নেত্রী তুলিকা অধিকারীর বক্তব্য, "দু'জনের সুসম্পর্ক ব্যক্তিগত স্তরে৷ এর কোন রাজনৈতিক তাৎপর্য নেই৷ আপ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বে৷”
যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কেজরিওয়ালের দলকে আমল দিতে চাইছে না তৃণমূল৷ দলের শীর্ষ নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, "যে কোনো দল যে কোনো রাজ্যে সংগঠন গড়ে তুলতে পারে৷ তবে আপ বাংলায় ফ্যাক্টর হবে না৷ এখানে তৃণমূলের কোনো বিকল্প নেই৷”
পর্যবেক্ষকদের মতে, আম আদমি পার্টি জনকল্যাণের কথা বলে প্রচার চালায় যা তৃণমূল সরকারেরও মূল ফোকাস৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে একগুচ্ছ জনমুখী প্রকল্প চালু করেছেন৷ নীলাদ্রি বলেন, "আপ যে কথা বলে মানুষকে কাছে টানবে, সেই জায়গাটা আগেই তৃণমূল দখল করে রেখেছে৷ এর সঙ্গে রয়েছে নেতৃত্বের প্রশ্ন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এত শক্তিশালী একজন নেত্রী রয়েছেন বাংলায়৷ তাঁর বিরুদ্ধে আপ-কে কে নেতৃত্ব দেবেন?”
বিকল্প মুখ তুলে আনা সহজ কাজ নয়৷ ইতিমধ্যেই নেতার খোঁজ শুরু করেছে কেজরিওয়ালের বঙ্গ ব্রিগেড৷ কিন্তু একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে তৃণমূলের শক্তিশালী সংগঠনকে কি চ্যালেঞ্জ করা যায়? বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, রাজ্যের মানুষের কাছে নিজেদের প্রতীক চেনাতেই অনেক সময় লেগে যাবে৷ সেক্ষেত্রে ভোটে জেতা খুবই কঠিন৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামীণ এলাকায় কাজটা আরো চ্যালেঞ্জিং৷
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, আম আদমি পার্টি কিছুটা জমি দখল করতে পারলে তাতে আখেরে সুবিধা হবে তৃণমূলের৷ গোয়াতে যেভাবে বিরোধী ভোট বিভাজনের সুযোগে বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে পেরেছে, বাংলায় তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে তৃণমূলের পক্ষে৷ জাতীয় স্তরে আপ বৃদ্ধি পেলে একই ফর্মুলায় বিজেপির সুবিধা৷ পশ্চিমবঙ্গে যদি বাম, কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে নতুন একটি শক্তি বিরোধী পরিসরে উপস্থিত হয়, তা হলে ভোট ভাগাভাগি হবে৷
আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক কেজরিওয়াল বলেছেন, মানুষের কল্যাণ করলেই বিপ্লব হবে৷ মিছিলে আওয়াজ উঠেছে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ'৷ বামপন্থীদের চেনা স্লোগান কি তবে চুরি হয়ে যাবে? এই প্রশ্নে সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের আক্রমণাত্মক জবাব, ‘‘বিজেপির আর একটা মুখ আপ৷ যেখানে বিজেপি দুর্বল, সেখানে তাদের সাফল্য৷ তাই বিপ্লবের স্লোগান তুলে পশ্চিমবঙ্গে সুবিধা হবে না৷ এদের জনমোহিনী রাজনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিই হয়, সেটা মানুষ বুঝতে পারবে৷”