বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবেতর পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের আরাকান বা রাখাইন রাজ্য থেকে আসা এসব রাষ্ট্রহীন মানুষদের বিরুদ্ধে কঠোর বলপ্রয়োগ শুরু হয়েছে৷ ফলে বাড়িঘর ফেলে তারা অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে এসে ঠাঁই নিচ্ছে৷ কিন্তু ওই আশ্রয় শিবিরের অবস্থাও খুবই নাজুক৷
মানবাধিকার সংগঠনগুলো পরিস্থিতি সামলাতে সেখানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের আহ্বান করে জানিয়েছে এবং বলছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কাছেও আবেদন করতে পারে তারা৷
কক্সবাজারের দক্ষিণে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে কুতুপালং নামের একটি জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে ওই অস্থায়ী আশ্রয় শিবির৷ বাংলাদেশে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স এর মিশন প্রধান পল ক্রিশলে জানান, অক্টোবর থেকে কর্তৃপক্ষের দমনাভিযান শুরু হওয়ার পর প্রায় ৬,০০০ মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছে৷ এদের অনেকেই স্থানীয় পুলিশের মারধরে আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন৷
ক্রিশলে বলছিলেন, ‘‘আমরা শরণার্থীদের ট্রমা কাটিয়ে ওঠার চিকিৎসা দিয়েছি৷ যারা জানিয়েছে যে, তারা পুলিশের মারধরের শিকার হয়েছে৷ অনেকে এমনও বলেছে যে, স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষজন এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েকবছর ধরে যাদের প্রতিবেশী হিসেবে তারা বাস করছিল সেই প্রতিবেশীরাও তাদের ওপর হামলা করেছে৷''
ক্রিশলে জানান, এছাড়াও অন্য অনেককে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ‘বাংলাদেশ রাইফেলস' এর কাছে৷ যারা তাদের পিটিয়ে সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠিয়েছে৷
প্রধানত ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষরা গত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমার জান্তার নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশের ওই দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন৷ বাংলাদেশ সরকার এদের মধ্যে মাত্র ২৮,০০০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ কেবলমাত্র এই স্বীকৃতিপ্রাপ্তরাই জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছে৷
কিন্তু, ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এর বাইরেও প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা কোনো প্রকার ‘স্বীকৃতি' কিংবা ‘সহায়তা' ছাড়াই কক্সবাজার এবং আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে৷
কেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই দমনাভিযান চালাচ্ছে সে বিষয়ে এই প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য না করা হলেও মানবাধিকার গ্রুপ ‘আরাকান প্রজেক্ট' বলছে, বাংলাদেশ সরকার ভয় পাচ্ছে যে, মিয়ানমার থেকে আরও রোহিঙ্গারা এসে এখানে ঠাঁই নিতে পারে৷ আর সেজন্যই সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোসহ রোহিঙ্গা দমনাভিযান চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ৷
প্রতিবেদক: মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার