1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে মসজিদ ও নারী

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
২২ জানুয়ারি ২০২১

ঘরে-বাইরে সমানে কাজ করছেন বাংলাদেশের নারীরা৷ পরিবার এবং দেশের উন্নয়নে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা৷ কিন্তু মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ এখনো প্রায় নেই বললেই চলে৷

https://p.dw.com/p/3oGef
বাংলাদেশের একটি মসজিদ
ছবি: Rayhanul Isalm Akhanda

সাতসকালে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে একসাথে মসজিদে যায়, শেখে কোরান পাঠ৷ বাংলাদেশের চিরপরিচিত দৃশ্য এটা৷ কিন্তু নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম৷ মসজিদের জামাতে যোগ দেয় ছেলেরা৷ মেয়েরা নামাজ সেরে নেয় অন্দরমহলে৷

সরকারের হিসেবে বাংলাদেশের প্রায় পৌনে তিন লাখ মসজিদের মধ্যে নারীর জন্য আলাদা কোনো মসজিদের অস্তিত্ব থাকার খবর পাওয়া যায় না৷ নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা আছে এমন মসজিদও হাতেগোনা৷ সেটা খোদ ঢাকা শহরেও এক শতাংশের কমই হবে৷ অথচ রাজধানীর প্রথম মসজিদ হিসেবে খ্যাত নারিন্দার বিনত বিবির মসজিদ একজন নারীর নামেই সুলতানী আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷

ইসলাম নারীদের মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি: মিছবাহুর রহমান চৌধুরী

ধর্মচর্চায় নারীরা এখনো ঘরমুখী৷ বিষয়টি ধর্মীয় বিধিবিধানের কারণে নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী৷ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ডের এই গভর্নর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নারীদের মসজিদে নামাজ আদায় করার প্রবণতা কম বা সুযোগ কম- এটা সাংস্কৃতিক কারণে হয়ে থাকতে পারে৷ ধর্মীয় কারণে নয়৷ কারণ, ইসলাম নারীদের মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি৷ তারা ইচ্ছে করলে স্বাধীনতা বজায় রেখে মসজিদে যেতে পারে৷’’

দেশের বিভিন্ন জনবহুল স্থানে পুরুষদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের জন্য কোনো সুযোগ থাকে না৷ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন, পরবর্তী শাসনব্যবস্থা- এসব ব্যবস্থায় ইসলাম নারীদের যে অধিকার দিয়েছে, সেটা দেয়া হয় নাই৷ সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীদের উৎসাহ দেয়া হয় নাই৷ এই কারণে মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থা নাই, কিন্তু ছেলেদের জন্য ব্যবস্থা আছে৷’’

অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব রয়েছে৷ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও আলেম-ওলামারা এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আপত্তি করেছেন৷ বাস্তবতা বিবেচনায় নিজেরাই আবার নারী নেতৃত্ব একরকম মেনেও নিয়েছেন৷ কিন্তু নামাজে কোনো নারী ইমামতি করবেন বিষয়টি এদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো অসম্ভবই বলা যায়৷ অথচ পশ্চিমা বিশ্বে নামাজের জামাতে নারীদের ইমাম হিসেবে দাঁড়ানোর কিছু চর্চা দেখা গেছে৷ এ প্রসঙ্গে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মহিলা ইমামতির বিষয়ে ইসলামের কোনো দিকনির্দেশনা নেই৷ যেহেতু নেই, আমি কিছু বলতে পারবো না৷ আমি মনে করি, ইমামতি ছাড়াও তাদের জন্য অনেক সম্মানের বিষয়বস্তু আছে৷ আরো একটা ব্যাপার হচ্ছে ইমামতি করার জন্য তারা সবসময় সুস্থ থাকবে না৷ মাসে প্রায় ৫ দিন তারা অসুস্থ থাকবে৷’’

নারীদের পক্ষে রিট

বাংলাদেশের নারীদের মসজিদে যাতায়াতের চর্চা বাড়াতে সামাজিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে৷ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র থেকেও এ নিয়ে তেমন কোনো দাবি উঠে আসে না৷ এ অবস্থার মধ্যেই আইনি প্রক্রিয়ায় নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেখা যায় ২০২০ সালে৷ দেশের সব মসজিদে নারীদের জন্য নামাজের স্থান নিশ্চিতে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেয়া হয়৷ গতবছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে রিট মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান মামুন৷ আদালতে তার আবেদন ছিল, মুসলমানদের ধর্মচর্চার কেন্দ্রবিন্দু মসজিদ৷ পুরুষের পাশাপাশি নারীরও মসজিদে নামাজ আদায়ের পূর্ণ অধিকার আছে৷ এ বিবেচনায় বাংলাদেশের মুসলিম নারীরা ধর্ম পালনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন৷

সেই রিট মামলার বিবাদী পক্ষ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক৷ এই প্রেক্ষাপটে তাদের অবস্থান এখনো জানা যায়নি৷ এ প্রসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী মাহমুদুল হাসান মামুন ডয়চে ভেলেকে জানান, করোনাভাইরাস চলে আসায় বিষয়টি নিয়ে তিনি আর কাজ করতে পারেননি৷ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তিনি আবার আদালতের শরনাপন্ন হবেন৷ তিনি মনে করেন, নারীদের মসজিদে যাওয়ার বিষয়টি সাংবিধানিক অধিকার শুধু নয়, ধর্মীয় দিক থেকেও অনুমোদিত৷ তাই বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়তে রাজি নন এই আইনজীবী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য