বাংলাদেশি নারীদের বিভিন্ন দেশে করোনা যাপনের গল্প
করোনা সারা বিশ্বকে স্তব্ধ করে বদলে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা৷ ঘরবন্দি জীবনকে কিছুটা হলেও আনন্দময় করে তোলার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নারীরা৷ তাদের করোনা যাপনের গল্পই থাকছে এই ছবিঘরে৷
ডাক্তার মরিয়ম খন্দকার রুমকি, মায়ামি, অ্যামেরিকা
ঢাকা থেকে ডাক্তারি পাস করে বর্তমানে মায়ামি মিলার স্কুল অফ মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্ডিওলজি বিভাগে ফেলোশিপ করছেন৷ এক শিশু পুত্রের মা রুমকির সখ ছবি আঁকা৷ করোনাকালে নিজের আঁকা ছবি আর কার্ড বিক্রির অর্থ তিনি দান করেন বাংলাদেশের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দুস্থ শিশুদের জন্য৷
ইতি মহাজন, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
মেলবোর্নের একটি শিশু ডে কেয়ারে ফুল টাইম চাকুরি করেন, নিজেরও একটি ছেলে আছে৷ করোনাকালে বন্ধুদের সাথে মিলে অনলাইনে দেশি পোশাক বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছেন৷ ইতি জানান, ফেসবুক পেজ পরশমনি অস্ট্রেলিয়া ক্লিক করলেই পাওয়া যাবে তাদের বাহারি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবী, আর আকর্ষণীয় নানা গহনার অফার৷
জেনিফার আহমেদ মিথিলা, মিনিসোটা, অ্যামেরিকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা মিনিসোটায়৷ বর্তমানে কেয়ারিংব্রিজ স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানির ওয়েবসাইট এনালিস্ট৷ কাজ আর সংসার নিয়ে বাচ্চাদের সাথে খুব বেশি সময় কাটানোর সুযোগ হয়না, যা তিনি এবার হোম অফিস করার সুবাদে পেয়েছেন৷ একদিকে ছেলে জাফিরকে হোমস্কুলিং এ সাহায্য করা অন্যদিকে কন্যা জামিরাকেও খেলায় সঙ্গ দিতে পেরে খুশি পরিবারের সবাই৷
ডাক্তার ইফফাত আযিম পিয়াল, লন্ডন
২৪ বছর পরে করোনাকালে ঘরবন্দি জীবনে আবার রং তুলি হাতে নিয়েছেন তিনি৷ ছোট ছেলে তার ব্যস্ত মাকে আগে কখনো ছবি আঁকতে দেখেনি, করোনায় মায়ের আঁকা ছবি দেখে অবাক আর গর্বিত৷ তাছাড়াও করোনাকালে ডাক্তার ইফফাত লন্ডন থেকে প্রচারিত বাংলা টিভি চ্যানেল থেকে করোনা সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷
ড. জাহা হামিদা ফ্লোরা, রিসার্চ সায়েন্টিস্ট, ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডা
করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন তিনি অনলাইনে৷ সুযোগ পেলেই সময় কাটান আড়াই বছর বয়সি নাতি জাভিয়ানের সাথে৷ নাতির সাথে খেলার ফাঁকে ফাঁকে ওকে বাংলা, ইংরেজি দুটোই শেখাচ্ছেন৷ শুধু তাই নয়, সেই সাথে নিজে সেগুলো ভিডিও করছেন৷ ড. জাহা হামিদা অনেকদিন থেকে ঢাকার স্পন্দন ছাড়াও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত৷
আসিয়া খাতুন মুক্তি, অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড
গত মার্চ এপ্রিল মাসের পর থেকে নিউজিল্যান্ডের করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে৷ তবে শুধু পাবলিক ট্রান্সপোর্টে মাস্ক পরতে হয়, জানালেন মুক্তি৷ তিনি অকল্যান্ড একটি দোকানের সেলস মার্কেনডাইজার৷ করোনাকালে মুক্তিকে ঘরবন্দি থাকতে হয়নি বলে সবকিছু প্রায় আগের মতই চলছে তার৷
জেসমিন হোসেন রোজি, ডালাস, অ্যামেরিকা
ব্যবসায়ী জেসমিন হোসেন করোনাকালে সময় কাটাতে দুই তিনজনের সাথে প্রথম মাছ ধরা শুরু করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মাছ ধরতে এখন এত ভালো লাগছে যে আস্তে আস্তে নেশা হয়ে যাচ্ছে৷ মুক্ত হাওয়ায় মাছ ধরে যেমন আনন্দ তেমনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতেও ভীষণ তৃপ্তি৷ শুধু নিজেরাই খাই না,বন্ধুদেরও দেই ধরা তাজা মাছ৷’’
সাইকা মোর্শেদ টুসি, টরোন্টো, ক্যানাডা
দুই শিশু কন্যার মা সাইকা ৷ বড় মেয়েকে হোমস্কুলিং এ সাহায্য করছেন, অনলাইনে পড়ানোটা একেবারে নতুন হলেও মা, মেয়ে দুজনই আনন্দ পাচ্ছে৷ ছোট মেয়ের দেখাশোনাও রয়েছে৷ করোনার কারণে আগের মতো বাইরে যাওয়া না হলেও বাচ্চা আর সংসার নিয়েই সময় ভালোই কেটে যাচ্ছে তার৷
আফিয়া ইসরাত, ঢাকা, বাংলাদেশ
ঢাকার বাসিন্দা তবে করোনার কারণে গত কয়েকমাস থেকে গ্রামের বাড়ি ফুলবাড়িয়ায় আছেন৷ সেলাই ফোড়াইয়ে পারদর্শী এই নারী এখন গ্রামে হাঁস মুরগি লালন পালন করছেন, নিজের খেতে শাক সবজি ফলাচ্ছেন৷ যা থেকে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরে বিক্রি করে আয় করছেন আফিয়া ইসরাত৷ সখের রাধুনি ইসরাত গ্রামের চুলায় বিস্কুটও তৈরি করছেন ইদানিং৷
সাঈদা শেখ, মুখ, জার্মানি
বন শহর থেকে ৪০কিলোমিটার দূরে মুখ-এর বাসিন্দা এই গৃহিনী৷ বহুদিন থেকে আছেন এই গ্রামে৷ করোনায় এবারের গ্রীষ্মে স্বামীর সাথে বাগান করে সময় কাটিয়েছেন৷ বাগানে ফলিয়েছেন ফুল, ফল আর দেশি-বিদেশি সবজি৷ সাঈদা শেখ পরিবারের সকলের ব্যবহারের জন্য মাস্ক নিজেই সেলাই করেছেন৷ কিছু মাস্ক উপহারও দিয়েছেন বন্ধুদের৷