বাংকার যখন মনোরম বসতবাড়ি
১৮ মে ২০১৭মিউনিখের ব্যস্ত শোয়াবিং এলাকার এক মোড়ে নাৎসি আমলের এক বাংকার ভবন দেখা যায়৷ বোমা হামলা হলে সেখানে ৭০০ মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা ছিল৷ ১৯৪৩ সালে তৈরি এই স্থাপনাটি এখন সংরক্ষিত ভবন৷ এমন অদ্ভুত বাসস্থান সহজে দেখা যায় না৷
স্টেফান হ্যোগলমায়ার বাংকারের একেবারে উপরের তলায় থাকেন৷ প্রোমোটার হিসেবে তিনি নিজেই উপর তলায় প্রায় ৪০০ বর্গ মিটার বিশাল বড় ফ্ল্যাটটি বেছে নিয়েছেন৷
বিভিন্ন যুগের শৈলির ছাপ আছে সেই ফ্ল্যাটে৷ বাংকারের ব্যবহারিক ডিজাইনের সঙ্গে সেই সব শৈলির তফাত চোখে পড়ার মতো৷ স্টেফান হ্যোগলমায়ার বেশ সচেতনভাবে ভবনের মৌলিক কাঠামো অনেক জায়গায় পরিবর্তন করেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমবার এই ভবনে ঢোকার সময় বেশ মন খারাপ করা পরিবেশ ছিল৷ দুই মিটার পুরু দেওয়াল, সাত তলার কোথাও বাইরের অংশ ব্যবহার করা হয়নি৷ অন্য কোনো ভবনে ঢুকলে এমনটা দেখা যায় না৷ আলো-বাতাস থাকে, জানালা দিয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়৷’’
বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে প্রত্যেকটি দেওয়াল কেটে জানালা বসিয়েছেন স্টেফান৷ প্রত্যেক তলায় চারটি করে জানালা যোগ করা হয়েছে৷
২০১০ সালে ভবনটি কেনার সময় বাংকারটি দেখতে একেবারে আলাদা ছিল৷ প্রায় ৭ মাস ধরে ১৪ জন নির্মাণ কর্মী প্রায় ২ মিটার পুরু দেওয়াল ভেঙে জানালার জন্য গর্ত তৈরি করেন৷ সবচেয়ে উপরের তলা নতুন করে তৈরি হয়েছে৷ সিঁড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছাতে হয়৷ সেই পেন্টহাউসের জন্যও এক মিটার পুরু ছাদ কাটতে হয়েছে৷ স্টেফান হ্যোগলমায়ার বলেন, ‘‘এবার আমরা বাংকারের উপরে এসেছি৷ এখান থেকে সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়৷ এখানেই খাবার জায়গা, তারপর বৈঠকখানা৷ সেখানে আলোর বন্যা বইছে৷ সবুজে ঢাকা শহরের উত্তরের কবরখানা দেখা যাচ্ছে, তারপর ইংলিশ গার্ডেন৷ আবহাওয়া ভালো থাকলে আলপ্স পর্বতও দেখা যায়৷’’
পেন্টহাউসের ছাদ থেকে মিউনিখ শহরের ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য দেখা যায়৷ বাভেরীয় হিসেবে তিনি একটি চিরায়ত কাঠের ঘরও তৈরি করিয়েছেন৷ ফলে বাতাস ও রোদের আড়ালে বসার সুবিধাও রয়েছে৷ স্টেফান হ্যোগলমায়ার তাঁর কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ৫০ লক্ষ ইউরো ব্যয় করে বাংকার ভবনটিকে আধুনিক বাসভবনে পরিণত করেছেন৷
২৬ মিটার উঁচু টাওয়ারে শুধু আরও ফ্ল্যাট ও দপ্তরই নয়, আস্ত একটি আর্ট গ্যালারিও স্থান পেয়েছে৷ সেখানে নিয়মিত শিল্প ও স্থাপত্য সংক্রান্ত প্রদর্শনী আয়োজিত হয়৷ দর্শকদের প্রবেশমূল্যও দিতে হয় না৷ স্টেফান নিজে ঠিক এমনটাই চেয়েছিলেন৷ অনেক ভালবাসা ও পরিশ্রম ঢেলে ভয়ংকর এক ভবনকে দ্রষ্টব্যে পরিণত করেছেন তিনি৷
শ্যারন ব্যারকাল/এসবি