বলিউডের বিতর্কিত কয়েকটি চলচ্চিত্র
চলচ্চিত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হয়৷ কিন্তু বলিউডে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তির পাওয়ার আগেই ব্যাপক ঝামেলার মুখোমুখি হয়, পড়ে মানুষের ক্ষোভের মুখেও৷ ছবিঘরে দেখে নিন এমনই কয়েকটি চলচ্চিত্রের কথা৷
আনধি
ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি কংগ্রেসের শাসনামলে নিষিদ্ধ করা হয়৷ তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর চলচ্চিত্রটি থেকে শুধু নিষেধাজ্ঞাই উঠে যায়নি, দূরদর্শনেও দেখানো হয়েছে এটি৷
ইনসাফ কা তারাজু
বি.আর. চোপড়ার পরিচালনা আর রাজ বব্বর অভিনীত ছবি ইনসাফ কা তারাজু ভারতের বিতর্কিত চলচ্চিত্রগুলির একটি৷ চলচ্চিত্রটিতে ১৩ বছরের এক শিশুর সাথে ধর্ষণের দৃশ্য থাকার এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়৷
ব্যানডিট কুইন
দস্যু রানী ফুলন দেবীর জীবনের উপর ভিত্তি করে শেখর কাপুরের এই চলচ্চিত্রটি বলিউডের সমালোচিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ সিনেমাটিতে নগ্ন এবং ধর্ষণ দৃশ্যের পাশাপাশি অনেক গালিগালাজ থাকায়, এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়৷
দ্য ব্ল্যাক ফ্রাইডে
১৯৯৩ সালে মুম্বই বোমা বিস্ফোরণের পটভূমিকায় নির্মিত এই ছবিটি নিমার্ণের পর প্রায় দু’বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার মুখে ছিল৷ কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, চলচ্চিত্রটি বোমা বিস্ফোরণ মামলার বিচারের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে৷
কিসসা কুর্সি কা
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি বেশ কিছুদিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল৷ শাবানা আজমি, উৎপল দত্তের মতো বড় মাপের অভিনেতারা অভিনয় করেছিলেন এতে৷
ফিরাক
নন্দিতা দাস পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার পটভূমিকায় তৈরি৷ চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছে বটে৷ কিন্তু গুজরাটে এই চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করতে দেয়া হয়নি৷
ফায়ার
শাবানা আজমি এবং নন্দিতা দাস অভিনীত এই ছবিটি সমকামী সম্পর্ককে তুলে ধরে৷ আর সে কারণেই মহারাষ্ট্রে শিবসেনা এবং বজরং দলসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই চলচ্চিত্র মুক্তি না দেয়ার জন্য বিক্ষোভ করেছিল৷ এ এই ধরনের চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য ভারত আদৌ তৈরি কিনা – তা নিয়েও চলেছিল দীর্ঘ বিতর্ক৷
ওয়াটার
দীপা মেহেতার ছবি ওয়াটার কাশী বা বারাণসীর আশ্রমে থাকা বিধবাদের জীবনের উপর নির্মিত৷ হিন্দুদের ধর্মানুভূতিতে এটি আঘাত হানবে – এমন অভিযোগ করে এর পোস্টার জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল সে সময়৷ এমনকি চলচ্চিত্রটির শ্যুটিং চলাকালে এতে বাধা দেয়ারও চেষ্টা করা হয়৷
আরকসান
জাতিগত সংরক্ষণের মতো সংবেদনশীল বিষয়কে উপস্থাপন করা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে৷ এতে করে ছবিটির ওপর উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব এবং অন্ধ্র প্রদেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল৷ পরে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়৷
ওহ মাই গড
ভারতের ধার্মিকতা এবং ধর্মের প্রভাব অসাধারণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এই ছবিতে৷ তাই চলচ্চিত্রটি নিয়ে বেশ প্রশংসা হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি৷ স্বাভাবিকভাবেই হিন্দুবাদী সংগঠনগুলো এই ছবির বিরোধিতা করেছিল৷
মাদ্রাজ ক্যাফে
জন আব্রাহাম অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যার পটভূমিকায় নির্মিত৷ এতে শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধ তুলে ধরা হয়েছে৷
পিকে
আমির খান এবং আনুশকা শর্মা অভিনীত এই চলচ্চিত্রে ধর্মের বেশ কিছু রেওয়াজকে কুসংস্কার বলা হয়েছিল, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷
মাই নেম ইজ খান
২০১০ সালে ছবিটির মুক্তির কিছুদিন আগে অভিনেতা শাহরুখ খান বলেছিলেন, তিনি চান যাতে আইপিএল টুর্নামেন্টে পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা খেলতে পারে৷ তাঁর ঐ বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই শিবসেনাসহ সব হিন্দুবাদী সংগঠন চলচ্চিত্রটি মুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানায়৷
ফানা
চলচ্চিত্র মুক্তির আগে অভিনেতা আমির খান নর্মদা বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোকে কেন্দ্র করে এক বক্তব্য দেন৷ এতে ক্ষেপে যায় বিজেপি সরকার৷ এবং ফানার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷
বুম
ক্যাটরিনা কাইফের এই চলচ্চিত্রটির কথা হয়ত তিনি নিজেও আজ ভুলে গেছেন৷ কিন্তু ঐ চলচ্চিত্রে গুলশান গ্রোভারের সঙ্গে তাঁর একটি চুম্বন দৃশ্য ছিল, যা বিতর্কের কারণে পরবর্তীতে সরিয়ে ফেলা হয়৷
হায়দার
কাশ্মীরের পটভূমিকায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ভারতীয় সেনাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ জনগণের একটি পক্ষ এই চলচ্চিত্রের সমালোচনা করে এটি বয়কটের আহ্বানও জানায়৷
দ্য ডার্টি পিকচার
দক্ষিণী অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটির পোস্টার নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়৷ সিল্ক স্মিতার ভাই চলচ্চিত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে উকিলের নোটিসও নাকি পাঠিয়েছিল৷
পরজানিয়া
গুজরাট দাঙ্গার ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রটি গুজরাটে দেখানো হয়নি৷ তবে পরে একটি সামাজিক সংগঠনের প্রচারের কারণে এই সংবেদনশীল চলচ্চিত্রটি গুজরাটের কিছু অংশে দেখানো হয়৷
এক ছোটি সি লাভ স্টোরি
এই চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা নিজেই চলচ্চিত্রটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ এমনকি আদালতের কাছে এ নিয়ে আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি৷
রং দে বাসন্তি
আমির খান অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি পশু সংরক্ষণ এবং প্রাণী অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে৷ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি নেত্রী মেনকা গান্ধী৷ চলচ্চিত্রে ঘোড়ার ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷
লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরকা
লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরকা প্রথমে সেন্সর বোর্ডে ছাড়পত্র পায়নি৷ বোর্ড বলেছিল এটি একটি নারী প্রধান চলচ্চিত্র এবং এতে বহু বিতর্কিত যৌন তৃশ্য রয়েছে, রয়েছে অশ্লীল শব্দ এবং অডিও পর্নোগ্রাফি, যা সমাজের একটি অংশের কাছে সংবেদনশীল৷
উড়তা পাঞ্জাব
শহিদ কাপুর অভিনীত ফিল্ম উড়তা পাঞ্জাব নিয়ে সেন্সর বোর্ড এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে ব্যাপক বাক-বিতণ্ডা হয়৷ পাঞ্জাবের মাদক সমস্যা নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে সেন্সর বোর্ড ৮৯টি কাট দিয়েছিল৷ ঘটনা হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌঁছেছিল এবং মাত্র একটি ‘কাট’ রেখে চলচ্চিত্রটি পরে মুক্তির অনুমতি পেয়েছিল৷
ম্যাসেঞ্জার অফ গড
এই ছবিটিকে সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র না দিয়ে বরং চলচ্চিত্র উপদেষ্টা কমিটির কাছে পাঠায়৷ চলচ্চিত্রটির নির্মাতা, নির্দেশক এবং অভিনেতা ছিলেন গুরমিত রাম রহিম সিং৷ নিজেকে দেবতা রূপে প্রচার করা নিয়ে আপত্তি ছিল সেন্সর বোর্ডের৷
জলি এলএলবি ২
ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা নিয়ে ব্যঙ্গ করা এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন অক্ষয় কুমার৷ তবে সেন্সর বোর্ড নয়, মুম্বই হাইকোর্ট এই চলচ্চিত্রে বেশ কয়েকটি কাট-ছাট করার নির্দেশ দেয়৷
পদ্মাবত
রাজপুত করণী সেনার অভিযোগ ছিলো, এই ছবিতে হিন্দু রানি পদ্মাবতীর সঙ্গে মুসলিম রাজা আলাউদ্দিন খিলজির অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যা ইতিহাসসম্মত নয়৷ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে বিতর্ক শুরু হয়৷ সেন্সর বোর্ড ছবিটি নির্মাতাদের কাছে ফেরত পাঠায়৷ হরিয়ানার বিজেপি নেতা বনসালী এবং দীপিকার মাথার দাম ঘোষণা করে৷ নানা বাধা পেরিয়ে ছবিটি মুক্তির পর সব বিতর্ক বন্ধ হয়ে যায়৷