বলিউডের ‘বাদশা’র গল্প
শাহরুখ খানের জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে গেছে বিশ্বের তাবৎ অভিনেতাকে৷ বলিউডের ‘বাদশা’ শাহরুখকে চিনুন এই ছবিঘরে...
যেখান থেকে শুরু
দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করা শাহরুখের স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবা সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় সন্তানদের সময় দিতে পারতেন না৷ তাই দাদা-দাদীর কাছেই বড় হন তিনি৷ চিরকালের ভালো ছাত্র শাহরুখ পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল ও হকি খেলতেন৷ অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা শেষ করেন৷ তখন থেকেই বাড়তে থাকে অভিনয়ের প্রতি তার ঝোঁক৷ তাই চলে যান মুম্বাই৷
অভিনয়ে পদার্পণ
১৯৮৮ সালে প্রথম টিভি সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ পান শাহরুখ৷ তার অভিনীত প্রথম সিরিয়াল ‘দিল দরিয়া’ মুক্তি না পেলেও পরে ‘ফৌজি’ ও ‘সার্কাস’ সিরিয়ালে তার অভিনয় দর্শকদের নজর কাড়ে৷ ১৯৯১ সালে বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও তা ফিরিয়ে দেন শাহরুখ৷ তবে ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবির হাত ধরে রূপালি পর্দায় তার আত্মপ্রকাশ৷ এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে৷
নব্বইয়ের দশকে শাহরুখ
সেই সময়ে প্রচলিত নায়কের চরিত্রের ধারার একদম বিপরীতে গিয়ে ভিন্নধারার চরিত্র বাছতে শুরু করেন শাহরুখ৷ ‘ডর’, ‘আঞ্জাম’ বা ‘বাজিগর’ ছবিতে ‘নেতিবাচক’ বা খল চরিত্রে তার অভিনয় প্রশংসা কুড়োয়৷ বেশ কয়েকটি পুরষ্কারও পান৷ কিন্তু ১৯৯৪ সালে ‘কভি হা কভি না’ ছবির রোম্যান্টিক হিরো চরিত্রের অভিনয়ে নিয়মিত হয়ে যান৷
প্রেমিক শাহরুখ
১৯৯৫ থেকে ২০০৩ সাল ছিল শাহরুখের প্রেমিক চরিত্রে অভিনয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়৷ ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘পরদেস’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘মহব্বতে’, ‘কভি খুশি কভি গম’ ইত্যাদি ছবিতে তার অভিনয় দর্শকদের মন জিতে নেয়৷ একই সময়ে মনিরত্নম ও কমল হাসানের মতো অন্য ধারার পরিচালকের সাথেও কাজ করেছেন তিনি, যা তার ক্যারিয়ারে অন্য মাত্রা যোগ করে৷
ঘুরে দাঁড়ানো শাহরুখ
শারীরিক অসুস্থতার কারনে ২০০২ থেকে ২০০৩- এই দু’বছর তেমন ভালো কাটেনি৷ হাতে খুব বেশি কাজও ছিল না৷ কিন্তু তার জনপ্রিয়তা তাতে কমেনি৷ ২০০৪ সালে ‘ম্যায় হু না’ ছবির ব্যাপক সাফল্যই তা প্রমাণ করে দিয়েছিল৷ ওই সময়েই সংস্থা ‘রেড চিলিজ এন্টারটেনমেন্ট’ গড়ে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসাবে কাজ শুরু করেন৷ তখন ‘পহেলি’ বা ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ ছবিতে অভিনয় করে নিজের অভিনয়ের ব্যাপ্তিও বাড়িয়ে নেন শাহরুখ৷
অন্য ভূমিকায় শাহরুখ
টেলিভিশনে সঞ্চালকের ভূমিকাতেও দেখা গেছে তাকে৷ ‘কৌন বনেগা করোরপতি’ ও ‘ইন্ডিয়া নই সোচ’-এর শাহরুখকেও ভোলার নয়৷ এছাড়া প্লেব্যাকও করেছেন ‘জোশ’ ছবিতে৷ বন্ধু ও অভিনেত্রী জুহি চাওলার সাথে মিলে আইপিএল-এর একটি দল ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ কিনেছেন৷ এছাড়া বহু সমাজসেবামূলক সংস্থার হয়েও কাজ করেছেন তিনি৷
খারাপ সময়
২০১৪ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে শাহরুখের ক্যারিয়ারে কিছুটা খরা দেখা যেতে থাকে৷ ‘জিরো’, ‘দিলওয়ালে’ বা ‘জব হ্যারি মেট সেজাল’ সেভাবে সাফল্য পায়নি৷ কিন্তু ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রইস’ বদলে দেয় এই ধারা৷ ২০১৮ সালে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ ছবিতে এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চরিত্রে অভিনয় অভিনেতা শাহরুখকে দর্শকের সামনে নতুনভাবে তুলে ধরে৷
তবুও ‘বাদশা’
বড়পর্দার ক্যারিয়ারে ওঠানামা, ছোটপর্দায় সাফল্য থেকে রাজনৈতিক বিতর্ক- সবকিছুই আছে শাহরুখের ত্রিশ বছর পেরিয়ে যাওয়া কর্মজীবনে৷ পেয়েছেন পদ্মশ্রী, ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার ছাড়াও দেশ-বিদেশের বহু সাম্মানিক উপাধি৷ পাশাপাশি পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা৷ প্রতিদিন তাকে এক ঝলক দেখতে তার বাড়ি ‘মান্নাত’-এর সামনে জড়ো হয় অনেক মানুষ৷