বন্ধ বাজি কারখানা, বহু কর্মী বেকার
কালীপুজোর আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। সরকার জানায়নি, বাজি ফাটানো যাবে কিনা। কলকাতায় বাজিবাজার বন্ধ। সংকটে বাজি শিল্প।
অচেনা নুঙ্গি
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নুঙ্গি। এই সময়ে নুঙ্গির দৌলতপুর মেন রোড দিয়ে হাঁটা যায় না। বাজিপ্রেমীরা ভিড় জমান এখানে। পাইকারি দরে হরেক রকম বাজির খোঁজে দূরদুরান্তের দোকানদারেরাও আসেন। তবে দুইবছর ধরে ছবিটা একেবারে অন্য।
বিক্রিবাটা নেই
কালীপুজো উপলক্ষে প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে কলকাতা শহরে যে পাঁচটি বাজি বাজার বসে, তাদের প্রায় সব বাজির আতুরঘরই দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গি আর চাম্পাহাটি। এবার বাজিবাজার বন্ধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজি নিয়ে কোনও সবুজ সংকেত না মেলায় বাজি ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। দোকানগুলোয় এখনও পসার জমে ওঠেনি।
বন্ধ দোকান
দৌলতপুর মেন রোডের সারাটা পথ জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে বাজির দোকান। বড় দোকানগুলো খুললেও বন্ধ রয়েছে গুমটি দোকানগুলো।
বাজি মানে নুঙ্গি
শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, নকুড়ের সন্দেশের মতোই প্রসিদ্ধ নুঙ্গির আতসবাজি। ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি ছাড়াও তুবড়ি সহ নানা ধরনের বাজি পাওয়া যায় এখানে।
শব্দ নয়, শুধুমাত্র রঙিন আলোর রোশনাই
শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে এখানে শুধুই রঙিন আলোর বাজি তৈরি হয়। লুকিয়ে চুরিয়ে শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগ থাকলেও তা খুবই নগন্য।
বাজার শুরুর আবেদন
গতবছর করোনার দাপটে বাজি-ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বাজিবাজার চালু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। চলতি বছরে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা শুধরেছে বলে মনে করছেন তারা। তাই কালী পুজোর আগে অন্যবারের মতোই বাজিবাজার চালু করার আবেদন করছেন তারা।
দূষণ কম করতে
শব্দবাজি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু আলোর বাজিও দূষণ ছড়ায়। যে কোনো বাজিই স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বাজির বিষাক্ত ধোঁয়ায় কোভিড আক্রান্তদের অবস্থা খারাপ হয়। সেজন্য বাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গতবছর। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট শুধু পরিবেশবান্ধব বাজির অনুমতি দেয়ার কথা বলে।
পরিবেশ বান্ধব বাজি
ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ২০১৮ সাল থেকে পরিবেশ বান্ধব বাজি নিয়ে কাজ করছে। তাদের দাবি অনুযায়ী এই বিশেষ ফর্মুলায় তৈরি বাজির ধোঁয়া অনেকাংশেই কম এবং তা ক্ষতিকারক নয়। যদিও কিছু পরিবেশবিদ, পরিবেশ বান্ধব বাজি ব্যাপারটাকে ‘সোনার পাথরবাটি’ হিসেবেই দেখছেন।
দক্ষিণ ভারত থেকে
স্থানীয় বিক্রেতারা এবছর দক্ষিণ ভারতের শিবকাশী থেকে পরিবেশ বান্ধব বাজি এনে বিক্রি করছেন। বাংলায় কেন এমন বাজি তৈরি করা হচ্ছেনা? বাজি ব্যবসায়ী কৌশিক মন্ডলের দাবি, বাংলার বাইরে গিয়ে পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ নেওয়া ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। এই বাজি তৈরি করতে মূলধনও তুলনায় অনেক বেশি চাই। কাল যদি পরিবেশবান্ধব বাজিও বে-আইনি ঘোষিত হয়ে যায়, তাহলে তো বিনিয়োগটাই জলে যাবে।
কারখানা বন্ধ
কালীপুজোর আগে কিছুদিন যে বাজি বিক্রি হয়, সেই বাজি সাত-আটমাস ধরে তৈরি হয় কারখানায়। গতবছর বাজি বিক্রি হয়নি, এবছরও হবে কিনা জানা নেই, তাই কারখানায় উৎপাদনও হয়নি। কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে গেছে।
কারখানার ভগ্নদশা
কিছু কিছু কারখানা ইতিমধ্যেই প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থায় চলে গেছে। পরে তা কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, বলা মুশকিল।
ক্ষুব্ধ শ্রমিক
নুঙ্গি অঞ্চলের পনেরো হাজার শ্রমিকের জীবনযাপন নির্ভর করে বাজি শিল্পের ওপর। গতবছর বাজার বসেনি। পুরনো বাজি মজুত থাকায় আর নতুন বাজি তৈরির ঝুঁকি নেননি কারখানার মালিকেরা। ফলে কাজ হারিয়েছেন প্রচুর শ্রমিক। কেউ কেউ পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে ভ্যানরিকশা চালানোর কাজ করছেন। বেশিরভাগ দিনমজুরের কাজ করছেন। এক শ্রমিকের বক্তব্য, ''এরকম চলতে থাকলে সামনের বছর এসে দেখবেন আমরা থালা হাতে ভিক্ষে করছি।''
তবুও আশায়
বাজি ব্যবসায়ী থেকে শ্রমিক, সকলেরই আশা, হয়তো প্রশাসন অনুমতি দেবে এবছর বাজিবাজার বসার। পরের বছর থেকে অবস্থা স্বাভাবিক হবে। বাজি তৈরি হবে। এই আশায় বুক বাঁধছেন তারা।