1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বছরে ৬ লাখ পরোক্ষ ধূমপায়ী প্রাণ হারাচ্ছেন

১ ডিসেম্বর ২০১০

ধূমপান মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়৷ এই কথা নতুন করে বলার দরকার নেই৷ কিন্তু যারা ধূমপান করেন না অথচ পরোক্ষ ধূমপান থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না, জানেন কি – বছরে এইরকম ৬ লাখ পরোক্ষ ধূমপায়ী প্রাণ হারাচ্ছেন?

https://p.dw.com/p/QMWw
ধূমপান না করেও তার কুফল ভোগ করছে অসংখ্য মানুষছবি: picture-alliance/dpa

পরোক্ষ ধূমপান বছরে ৬ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে৷ আর তাদের এক তৃতীয়াংশই শিশু৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র চালানো এক সমীক্ষার ফলাফলে এই কথা জানানো হয়েছে৷ পরোক্ষ ধূমপান বিশ্বে কী ধরণের প্রভাব ফেলছে তা নিরূপণ করাই প্রথম সমীক্ষাটির লক্ষ্য ছিল৷ তাতেই ডাব্লিউএইচও-র বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, অন্য যে কোন বয়সের চেয়ে পরোক্ষ ধূমপান সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে শিশুদের৷ আর এই পরোক্ষ ধূমপানের ফলে প্রতি বছরে প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার শিশু প্রাণ হারাচ্ছে৷

জেনেভা ভিত্তিক ডাব্লিউএইচও-র এ্যানেটে প্রুস উসটুনের নেতৃত্বে চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ শিশুই প্রাণ হারাচ্ছে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায়৷ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পরোক্ষ ধূমপানের মাধ্যমে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাড়িতে৷ আর এতে বিভিন্ন সংক্রমিত রোগ এবং টোব্যাকো দুটোতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা৷

EU-Kampagne gegen das Rauchen
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিগারেটের প্যাকেটে এমন ভয়ঙ্কর ছবি লাগিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেছবি: AP

এই প্রসঙ্গে ঢাকার হোলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ইনেটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার এজাজ আহমেদকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে ৷ তিনি বললেন, ‘‘যারা স্মোক করে তাদের পাশে যে সমস্ত লোকজন বসে থাকে, তারা বাতাসের মাধ্যমে যে স্মোকটা নিচ্ছেন সেটাকেই আমরা পরোক্ষ ধূমপান বলে থাকি৷ যারা সিগারেট খায় তাদের এবং পরোক্ষ ধূমপায়ীদের মধ্যে খুব একটা ব্যবধান নেই, বরং ওদের ক্ষতিটাই বেশি৷ কারণ,বাতাসে অক্সিজেনকে সরিয়ে দিয়ে ঐ অক্সিজেনের জায়গায়, নিকোটিন এবং ধোঁয়াটা যায়, এবং শরীরের বিভিন্ন সিসটেমকে ইনভল্ব করে৷ প্রথমত ফুসফুসের ক্ষতি করে৷ বিভিন্ন ক্রনিক উপসর্গ তৈরি করে ফুসফুসে৷ এবং দীর্ঘ সময় এই উপসর্গ থাকলে ফুসফুস ক্যান্সারের আশঙ্কা দেখা দেয়, যারা ধূমপান করেন তাদের এবং যারা পরোক্ষ ধূমপান করছেন তাদেরও৷ এছাড়া ক্ষুধা কমে যেতে পারে, ঘুম কম হতে পারে৷ ঘুম কমে যাবার ফলে মানসিক সমস্যা হতে পারে এবং ক্ষুধা কমে যাবার ফলে শারীরিকভাবে দুর্বল হে পড়তে পারে৷''

ডাব্লিউএইচও ২০০৪ সালেও একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল৷ তাতে বলা হয়েছিল, পরোক্ষ ধূমপানের ফলে বিশ্বে শতকরা ৪০ ভাগ শিশু, শতকরা ৩৩ ভাগ অধূমপায়ী পুরুষ এবং শতকরা ৩৫ ভাগ অধূমপায়ী নারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ৩ লাখ ৭৯ হাজার, ১ লাখ ৬৫ হাজার আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন সংক্রামক রোগে, ৩৬ হাজার ৯শ জন অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছেন, এবং ২১ হাজার ৪'শ জন আক্রান্ত হচ্ছেন ফুসফুসের ক্যান্সারে৷

সেধে ডেকে নেওয়া এই নেশাকে অনেকটা ‘লাইফস্টাইল' বলা চলে৷ কিন্তু ধূমপায়ীদের, বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে এই অসচেতনতার ফলে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে অধুমপায়ীদেরকে৷

পরোক্ষ ধূমপান কী ভাবে কমানো যায় সেই বিষয়ে ডাক্তার এজাজ আহমেদ বললেন,‘‘বিশ্বে ধূমপানের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ ধূমপান যারা করে বিভিন্ন জায়গায় তাদের জন্যে পৃথক একটি জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে৷ প্রথম কাজ হচ্ছে, ধূমপায়ীদের কাছ থেকে দূরে থাকা এবং ধূমপান যারা করছে তাদেরকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা৷ একই সঙ্গে ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে মানুষ ও সমাজ ব্যবস্থাকে সতর্ক করা, মিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়াও বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷''

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন